আফসানার মৃত্যু: চার দিনেও ধরা পড়েননি ছাত্রলীগ নেতা রবিন

HABIB_ROBINঢাকায় ছাত্র ইউনিয়নকর্মী আফসানা ফেরদৌসের মৃত্যুর চার দিন পরও সন্দেহভাজন ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান রবিনকে ধরতে পারেনি পুলিশ।

চার দিন আগে কোন স্থান থেকে আফসানাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল, তাও এখনও চিহ্নিত করা যায়নি বলে ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-কমিশনার মাসুদ আহম্মেদ জানিয়েছেন।

তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, “ঘটনাটি আত্মহত্যা না হত্যা সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছি।”

ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন দিতে আরও দুই থেকে তিন দিন লাগবে বলে ঢাকা মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

আফসানাকে হত‌্যা করা হয়েছে দাবি করে ঢাকা, তার জন্মস্থানসহ ঠাকুরগাঁওসহ দেশের নানা স্থানে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভ থেকে আফসানার কথিত বন্ধু রবিনকে গ্রেপ্তারের দাবিও জানানো হয়েছে।

তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান রবিন পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ বলেন, “ঘটনাটি যা-ই হোক, কিন্তু ঘটনার স্থল তো রয়েছে। যাদের আমরা সন্দেহ করছি তাদের ধরতে পারলে সব কিছু পরিষ্কার হওয়া যাবে।”

মিরপুরের সাইক ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড টেকনোলজির স্থাপত্যবিদ্যার শিক্ষার্থী আফসানাকে অচেতন অবস্থায় গত শনিবার রাতে মিরপুরের আল হেলাল হাসপাতালে ফেলে যায় দুই তরুণ। তার আগেই আফসানার মৃত‌্যু হয় বলে চিকিৎসকরা জানান।

আফসানাকে শ্বাসরোধে হত‌্যা করা হয়েছে দাবি করে এজন‌্য তেজগাঁও কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিনকে শুরুতেই দায়ী করে এই তরুণীর পরিবার।

এখনও রবিনকে গ্রেপ্তার করতে না পারার পক্ষে কারণ দেখিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ বলছেন, “বিভিন্ন মিডিয়ায় রবিনের নাম চলে আসায় তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।”

ঘটনার তদন্তে নেমে আল হেলাল হাসপাতালের সিসি ক‌্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহের কথা আগেই জানিয়েছিলেন পল্লবী থানার কর্মকর্তারা।

ওই ফুটেজ থেকে কিছু পাওয়া গেছে কি না জানতে চাইলে উপ-কমিশনার মাসুদ বলেন, “ফুটেজ অস্পষ্ট। তবে সেখানে দুজনের উপস্থিতি দেখা গেছে অর্থাৎ দুজন আফসানাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে।”

ঢাকা সেনানিবাসের মানিকদি এলাকার একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন আফসানা।

ওই বাড়িওয়ালার স্ত্রী বলেন, “আফসানা তিন বছর ধরে আমাদের এখানে থাকে। প্রথমে আমাদের বাড়ির পাশে আমার ভাইয়ের টিনশেড ঘর ভাড়া নেয়। পরে আমার বাড়ির নিচতলায় ওঠে।

“আফসানা আমাকে মা বলত, আমিও তাকে মেয়ের মতো ভালোবাসতাম এবং তাকে আমার অনেক আত্মীয়ের বাড়িতে ও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়ে যেতাম।”

ওই বাসায় রবিনের আসা-যাওয়া ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “আফসানা আমাকে বলেছে, রবিন তার স্বামী। পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে করায় তারা এখানে ভাড়া থাকছে।

“আমি আফসানাকে বলেছি, এই ছেলে (রবিন) তোর যোগ্য নয়, সে তোকে কাঁদাবে।”

গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা পর্যন্ত আফসানা ওই বাসায় ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, শুক্রবার থেকে তার কক্ষ তালাবন্ধ ছিল। তাকে ফোন করলেও বন্ধ পান। রোববার পুলিশ আফসানার ছবি দেখিয়ে জানতে চায়, এই মেয়েটিকে চিনি কি না।

“আমি পুলিশের কাছে জানতে চাই, চিনি, কিন্তু কী হয়েছে আফসানার। ভারী গলায় তিনি (পুলিশ কর্মকর্তা) বলেন,আফসানা মারা গেছে। শোনার পর আমি স্তব্ধ হয়ে যাই। তখন ভাবতে থাকি যে আগেই আফসানাকে বলেছি, এই ছেলে তোকে শান্তি দেবে না। তার প্রমাণ এইভাবে দেখব, ভাবতে পারছি না।”

রবিন ওই বাসায় বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার থাকতেন জানিয়ে বাড়িওয়ালী বলেন, “রবিন বাসায় আসার পরই গাঁজার গন্ধ পাওয়া যেত। তার সঙ্গে রুবেল নামে এক যুবকও আসত।”

আফসানাকে অন‌্য কোথাও হত‌্যা করা হয়েছে বলে মনে করছেন তার বাড়িওয়ালী। “সে আত্মহত্যা করার মেয়ে নয়,” বলেন তিনি।

আফসানার মামা তৌফিক এলাহীও তার ভাগ্নিকে হত‌্যার অভিযোগ করেছেন।

তিনি বলেন, “আফসানা আত্মহত্যা করার মেয়ে নয়। ছয় মাস আগে তার বাবা মারা যায়। দুই বোন এই ভাইয়ের মধ্যে সে মেজ। অনেক দায়িত্ব ছিল আফসানার উপর, তা সে ভালোভাবে বুঝত, সে আত্মহত্যা করতে পারে না।

“কে তাকে হত্যা করেছে জানি না। আমরা রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত তদন্ত চাই।”

এ ঘটনায় আপসের প্রস্তাব দিয়ে ছাত্রলীগ নেতা রবিনের পক্ষ থেকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন আফসানার বড় ভাই ঠাকুরগাঁওয়ে থাকা ফজলে রাব্বি।

তিনি বলেন, “বোন খুন হওয়ার পর থেকে রবিনের বন্ধুরা আমাকে প্রতিনিয়ত ফোন করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছে। তারা আপসের প্রস্তাব দিচ্ছে।”

আফসানা ফেরদৌস ঢাকায় ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আফসানা ফেরদৌস ঢাকায় ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে জড়িত ছিলেন আফসানা আত্মহত‌্যা করেছেন না তাকে হত‌্যা করা হয়েছে, এখনও তার মীমাংসা করতে পারেননি ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ কে এম শফিউজ্জামান বলেন, “আফসানার মৃত্যুর কারণ ‘এসফিক্সিয়া’ (শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত‌্যু)।”

তাহলে তাকে কি শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে-এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “শ্বাসরোধে বা আত্মহত্যা দুটিই হতে পারে। এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না।

“ডিএনএ, বিষ প্রয়োগ, ধর্ষণ করা হয়েছে কি না,পেটে বাচ্চা আছে কি না সেসব বিষয় শনাক্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। নমুনার পরীক্ষার পর বিষয়গুলো আরও পরিষ্কার হবে।”

আফসানার ‘স্পাইনাল কর্ড’ ভাঙা পাওয়া যায়নি বলে জানান ময়নাতদন্তকারী এই চিকিৎসক।

আত্মহত‌্যা করলে সাধারণত ‘স্পাইনাল কর্ড’ ভাঙা থাকে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, “লং ড্রপ হ্যাংগিং হলে স্পাইনাল কর্ড ভাঙা থাকে। ঝুলন্ত অবস্থায় সাথে সাথে নামিয়ে ফেললে কর্ড ভাঙবে না।”

দুই থেকে তিন দিন পর ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানান শফিউজ্জামান।

সংগঠনের কর্মী আফসানাকে হত‌্যা করা হয়েছে দাবি করে ছাত্র ইউনিয়ন বলছে, ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা চলছে।

এ ‘হত‌্যাকাণ্ডে’ জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে ১৯ অগাস্ট সারাদেশে বিক্ষেোভ ও ২২ অগাস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে সংগঠনটি।

বৃহস্পতিবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন থেকে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

ad

পাঠকের মতামত