স্বাধীনতা দিবস ঘিরে কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানে উত্তাপ

Independent Kashmirএকদিকে কাশ্মীরের উত্তেজনাপূর্ণ নিয়ন্ত্রণরেখায় ভারত ও পাকিস্তানের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর পাল্টাপাল্টি গুলি এবং একে অন্যের ওপর সেই পুরোনো দোষ চাপানো; অন্যদিকে পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গতকাল রোববার ওয়াগা সীমান্তে ভারতীয় বিএসএফ সদস্যদের হাতে পাকিস্তানি সীমান্তরক্ষীদের দেওয়া মিষ্টি উপহার।

‘গুলি ও মিষ্টি বিনিময়’—এই দুই বিপরীতধর্মী আবহের মধ্যে দুই দেশের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ও চলেছে। আর অনিবার্যভাবে এর কেন্দ্রে আছে কাশ্মীর।

পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস ছিল গতকাল ১৪ আগস্ট। আজ ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। এই দিবসে শনিবার দিবাগত রাত প্রায় তিনটার দিকে নিয়ন্ত্রণরেখায় দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গুলিবিনিময় হয়। দুই দেশই ‘বিনা প্ররোচনায়’ গুলিবর্ষণের অভিযোগ করেছে একে অন্যের প্রতি।

ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র লে. কর্নেল মনীশ মেহতা দেশটির বার্তা সংস্থা পিটিআইকে বলেন, ‘জম্মু ও কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পুঞ্চ সেক্টরের কাছে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী বিনা প্ররোচনায় গুলি চালায়। আমাদের সেনাবাহিনী এর যথোচিত জবাব দেয়। এতে আমাদের সেনাবাহিনীর কোনো সদস্য আহত হয়নি বা কোনো ক্ষয়ক্ষতিও হয়নি।’ গত বছর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘাতে অন্তত ১৬ জন ভারতীয় নিহত হয়েছে বলে জানান তিনি। এ সময় গুলিবিনিময়ের ঘটনা ঘটে ৪০৫টি।

পাকিস্তানের আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) বরাত দিয়ে দেশটির ইংরেজি দৈনিক ডন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতীয় বাহিনী বিনা প্ররোচনায় রাওয়ালকোটের কাছের নিজাপির সেক্টরে গুলিবর্ষণ শুরু করে। শনিবার দিবাগত রাত দুইটা থেকে রোববার সকাল সাড়ে আটটা পর্যন্ত চলে গুলি। আইএসপিআরের বিবৃতিতে বলা হয়, ভারতীয় বাহিনী ভারী অস্ত্র ব্যবহার করে। নিয়ন্ত্রণরেখার কাছের অনেক বেসামরিক নাগরিকের বাড়িঘরে এসব গোলা এসে পড়ে। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।

দুই দেশের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিবিনিময়ে নিয়ন্ত্রণরেখা যখন উত্তপ্ত, তখন পাকিস্তানের ওয়াগা সীমান্তে গতকাল দেশটির স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতীয় বাহিনীকে মিষ্টি উপহার দেয়। প্রতিবছর দুই দেশের স্বাধীনতা দিবসে একে ওয়াগা সীমান্তে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে মিষ্টি বিনিময়ের এই প্রথা চলে আসছে। তবে গত বছর পাঞ্জাব ও কাশ্মীরে সশস্ত্র হামলার প্রতিবাদে ভারত মিষ্টি গ্রহণ বা বিতরণ কোনোটিই করেনি। তবে গতকাল মিষ্টি গ্রহণের পর আজ দেখার বিষয় ভারত পাকিস্তানকে তাদের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে মিষ্টি উপহার দেয় কি না।

এদিকে স্বাধীনতা দিবসের এই সময়ে কাশ্মীর নিয়ে দুই দেশের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় অব্যাহত আছে। গত মাসে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বুরহান ওয়ানি নামের এক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নিহত হওয়ার পর পুরো উপত্যকা বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে ৭০ জনের বেশি মানুষ মারা যায়। আহত হয় অনেকে। কাশ্মীরের অনেক এলাকায় এখনো বিক্ষোভ চলছে। চলমান এই পরিস্থিতিতে ভারতে নিযুক্ত পাকিস্তানি হাইকমিশনার আবদুল বাসিত গতকাল নয়াদিল্লিতে ‘স্বাধীন কাশ্মীর’ নিয়ে মন্তব্য করেন। স্বাধীনতা দিবসের ওই অনুষ্ঠানে বাসিত বলেন, ‘আজকের এই স্বাধীনতা দিবসটি আমরা কাশ্মীরের স্বাধীনতার জন্য উৎসর্গ করছি।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আস্থাশীল যে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ যে ত্যাগ স্বীকার করছেন, এর সুফল তাঁরা পাবেন। কাশ্মীর স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত সেখানে সংগ্রাম চলবে।’

বাসিতের এ বক্তব্যের পরপরই ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ‘বিশ্বের কোনো শক্তি নেই যা জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতের কাছে থেকে ছিনিয়ে নিতে পারে।’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও তীব্র ভাষায় বাসিতের মন্তব্যের প্রতিবাদ করে। মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ভারত এবং এ অঞ্চলের অন্য দেশগুলো পাকিস্তানের রপ্তানি করা অনেক কিছুই পেয়েছে। এর মধ্যে আছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাস, সীমান্তে অনুপ্রবেশকারী, অস্ত্র, মাদক এবং জাল মুদ্রা।’

দুই দিন আগে কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের একটি আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ভারত।

ad

পাঠকের মতামত