জঙ্গি বানানোর ভয় দেখিয়ে পুলিশের এস আই হাতিয়ে নিল দেড় লাখ টাকা

Police-SIপেশাগত কাজে গিয়েছিলেন মনিরুল ইসলাম। সন্ধ্যায় তাকে আটক করে পুলিশের একটি টহল টিম। প্রথমে জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা বলে তাকে ভয় দেখায় পুলিশ। পরে তার ব্যাগে দেওয়া হয় জাল স্ট্যাম্প। পরদিন দুপুরে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আদালতে না তুলে ফিরিয়ে আনা হয় থানায়। প্রায় ২৩ ঘণ্টা পর বুধবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। পুলিশের বিরুদ্ধে হয়রানি ও অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার এই অভিযোগ করেছেন মনিরুল ইসলাম।

ভুক্তভোগী মনিরুল জানান, গাজীপুরের জয়দেবপুর থানার এসআই ফিরোজ উদ্দিন এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন।

মনিরুল ইসলাম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে রাজধানীর একটি সরকারি কলেজে অনার্সে পড়ছেন। একটি কুরিয়ার সার্ভিস রয়েছে তার। বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায়। গত মঙ্গলবার কুরিয়ার সার্ভিসের কাজে গাজীপুর গিয়েছিলেন তিনি।

মনিরুলের অভিযোগ, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকা থেকে তাকে আটক করে জয়দেবপুর থানা পুলিশের একটি টহল দল। আটকের পরই এসআই ফিরোজ তাকে বলেন, ‘তুই জঙ্গিবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত। ৫ লাখ টাকা দিলে ছেড়ে দেব। না পারলে ২ লাখ দিবি। এক টাকা কম হলে ছাড়া পাবি না। জঙ্গি মামলা দিলে কিন্তু লাইফ শেষ। টাকা দিলে কোনো ভয় নাই।’

মনিরুল পুলিশকে বলেন, ‘কিন্তু আমি তো কোনো অপরাধ করিনি।’ এ কথা বলার পরই শুরু হয় পুলিশের মারধর। পাশের একটি দোকানে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। সেখানে তার ব্যাগে ১০০টি জাল স্ট্যাম্প ঢুকিয়ে দেয় পুলিশ। আগে থেকেই তার অফিসের কাজে ব্যবহারের জন্য ৫টি আসল স্ট্যাম্প ছিল বলে জানান তিনি। এরপর পুলিশ ভ্যানে তুলে তাকে বলা হয়, ‘থানায় নেওয়ার পর তুই বলবি, আমার কাছে এসব জাল স্ট্যাম্প পাওয়া গেছে।’ কিন্তু বলতে না চাওয়ায় ফের তাকে মারধর করে পুলিশ। একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে পুলিশের কথা মতো টাকা নিয়ে থানায় আসতে পরিবারের এক সদস্যকে মোবাইল ফোনে জানান মনিরুল। ডিএমপি কমিশনারের বাড়ি আর তার বাড়ি একই থানায়। তিনি তাকে ব্যক্তিগতভাবে চেনেন বলতেই এসআই ফের তাকে মারতে মারতে বলেন, ‘তুই কমিশনারের ভয় দেখাস?’ ইতোমধ্যে তার ব্যাগ থেকে ৪৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয় পুলিশ। রাত ১০টার দিকে মনিরুলকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

ঘটনার এই পর্যায়ে বিষয়টি একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিককে জানান মনিরুলের এক স্বজন। এরই মধ্যে ২০ হাজার টাকা নিয়ে জয়দেবপুর থানার উদ্দেশে রওনা হন মনিরুলের মামাতো ভাই অহিদুজ্জামান ও মেডিক্যাল কলেজে পড়–য়া বন্ধু রায়হান। টাকা নিয়ে থানার উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা ওই সাংবাদিককে মোবাইল ফোনে জানান তারা। কিন্তু রাত সাড়ে ১২টার দিক রায়হান প্রতিবেদককে ফোনে বলেন, ৪০ হাজার টাকা দিতে চাইলেও পুলিশ তাকে ছাড়েনি। এসআই ফিরোজও ইতোমধ্যে বাসায় চলে গেছেন।

পরদিন সকালে ফের শুরু হয় দেন-দরবার। অহিদুজ্জামান ও রায়হান সারা রাত না ঘুমিয়ে ঘুরতে থাকেন থানার আশপাশে। সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়। মনিরুলকে এরই মধ্যে পুলিশ ভ্যানে তুলে আদালতে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু আদালতে না উঠিয়ে ফের থানায় নিয়ে আসা হয়। অবশেষে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। মনিরুলের অভিযোগ, এরই মধ্যে পুলিশকে তার পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর পুলিশ আগেই তার কাছ থেকে নিয়েছিল ৪৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা।

ঘটনাটি কাউকে না জানানোর জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে মনিরুলকে বলা হয়েছে। এ নিয়ে চরম আতঙ্কে রয়েছেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই ফিরোজ উদ্দিন বলেন, তাকে ধরা হয়েছিল। পরে তাকে আমার কাছ থেকে ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নিয়ে যান। টাকা নেওয়ার প্রসঙ্গ তুলতেই ফোনের লাইন কেটে দেন এসআই ফিরোজ উদ্দিন। পরে ফোন করলেও আর ধরেননি।

ad

পাঠকের মতামত