ছেলেমেয়েসহ রাগীব আলীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ragib-ali-sonজালিয়াতি ও প্রতারণার মামলায় সিলেটে শিল্পপতি রাগীব আলী, তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। বুধবার দুপুরে তাঁদের বিরুদ্ধে দুই মামলায় সিলেট মহানগর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করা হয়। পরে বিচারক মো. সাইফুজ্জামান হিরো অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এ আদেশ দেন।

গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামিরা হলেন ভূমি মন্ত্রণালয়ের স্মারক (চিঠি) জালিয়াতির মামলায় রাগীব আলী (৭৫) ও তাঁর একমাত্র ছেলে আবদুল হাই (৪৫), প্রতারণার মামলায় রাগীব আলী, ছেলে আবদুল হাই, মেয়ের জামাই আবদুল কাদির (৫৫), মেয়ে রুজিনা কাদির (৪৮), রাগীবের আত্মীয় মৌলভীবাজারের রাজনগরের বাসিন্দা দেওয়ান মোস্তাক মজিদ (৫৫) ও তারাপুর চা-বাগানের সেবায়েত পংকজ কুমার গুপ্তকে অভিযুক্ত করা হয়। এ মামলার অপর আসামি রাগীবের স্ত্রী রাবেয়া খাতুন ২০০৬ সালের ১২ ডিসেম্বর মৃত্যুবরণ করায় তাঁকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়।

যোগযোগ করলে সিলেটের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মিসবাহউদ্দিন সিরাজ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আদালত অভিযোগপত্র গ্রহণ করার পর এক আদেশে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। এ সময় রাগীব আলীর পক্ষের একজন আইনজীবী আদালতে একটি আবেদন দাখিল করেছেন। এতে তিনি অসুস্থ উল্লেখ করা হয়েছে।

আদালত সূত্র জানায়, দেবোত্তর সম্পত্তির তারাপুর চা-বাগানের জায়গায় বিধিবহির্ভূতভাবে স্থাপনা নির্মাণ করার বিষয়টি ১৯৯৯ সালের ২৫ আগস্ট ভূমি মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত তৎকালীন সংসদীয় স্থায়ী কমিটি তদন্ত করে। এতে তারা সত্যতা পায়। পরবর্তী সময়ে সংসদীয় উপকমিটি চা-বাগানে অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার নেওয়ার সুপারিশ করে। এ সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৫ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সিলেট সদর ভূমি কমিশনার এস এম আবদুল কাদের বাদী হয়ে সিলেট কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা করেন। পরে এ মামলা উচ্চ আদালত থেকে স্থগিত করা হয় এবং পুলিশ তদন্ত করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়।

গত ১৯ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ দেবোত্তর সম্পত্তির তারাপুর চা-বাগান পুনরুদ্ধারে রায় দেন। একই সঙ্গে স্থগিত করা মামলা দুটি সক্রিয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর ১৬ মার্চ সরকারি কৌঁসুলির (পিপি) এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্তে তিন দফা সময় বাড়ানোর পর সর্বশেষ ১০ আগস্ট আদালত পিবিআইকে সময় বেঁধে দেন। এর এক মাস আগেই ১০ জুলাই মামলা দুটির অভিযোগপত্র দাখিল করে পিবিআই।

সিলেট নগরের পাঠানটুলার উপকণ্ঠে ৪২২ দশমিক ৯৬ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা তারাপুর বাগান পুরোটাই দেবোত্তর সম্পত্তি। ১৯৯০ সালে ভুয়া সেবায়েত সাজিয়ে বাগানটির দখল নেন রাগীব আলী।

রায় বাস্তবায়নে উচ্চ আদালত থেকে সিলেটের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়ায় গত ১৫ মে চা-বাগানের বিভিন্ন স্থাপনা ছাড়া ৩২৩ একর ভূমি সেবায়েত পঙ্কজ কুমার গুপ্তকে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। রায়ের পরবর্তী নির্দেশনা বাস্তবায়নে সিলেটের জেলা প্রশাসন মেডিকেল কলেজ, হাসপাতালসহ সব অবৈধ স্থাপনা আগামী ১৩ আগস্টের মধ্যে সরাতে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে।

রাগীব আলীর প্রতারণার বিচার ও ক্ষতিপূরণ চায় ৭নং ওয়ার্ডবাসী:
রাগীব আলীর বিরুদ্ধে ফুসে উঠেছেন সিলেট সিটির ৭নং ওয়ার্ডবাসী। তারা কথিত দানবীর রাগীব আলীকে দানব আখ্যায়িত করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রাতে ওয়ার্ডের তারাপুর মৌজায় আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানান তারা। সভায় বক্তারা তাদের ভাষায় প্রতারক রাগীব আলীর কাছ থেকে তাদের ক্ষতিপূরণ আদায়েরও দাবি জানান।

সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সিসিক’র ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি আফতাব হোসেন খাঁন বলেন, দানবীর পরিচয়ের দানব রাগীব আলীর প্রতারণায় তারাপুর মৌজার ৭ নং ওয়ার্ডের হাজারো পরিবারের অস্তিত্ব আজ চরম হুমকির মুখে। রক্তকে ঘাম করে ঝরিয়ে তিলে তিলে যে মানুষগুলো স্বপ্নের নীড় বুনেছিলো রাগীব আলীর প্রতারণার ফাঁদে পড়ে আজ তারা পথে বসতে শুরু করেছে। আন্তর্জাতিকভাবে কুখ্যাত প্রতারক রাগীব আলীকে আইনের আওতায় এনে তার বিচার করতে হবে।

হযরত শাহরুমি (র:) জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী আব্দুর নূর এর সভাপতিত্বে এবং সৌরভ সোহেল ও মাফুজুল হক বেলালের সঞ্চালনায় মত বিনিময় সভায় আফতাব খান আরো বলেন যে মানুষগুলো সরকারি ট্যাক্স, ভ্যাট, গ্যাস বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করে আসছে তাদের কি অন্যায়, আজ এই মানুষ গুলো কোথায় যাবে। দলমত নির্বিশেষে এই অসহায় মানুষদের পাসে আমরা সিলেটবাসিকে এগিয়ে আসতে হবে।

লাল সবুজ সমাজ কল্যাণ সংঘের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, হাজীপাড়া থেকে হাজীপাড়া জামে মসজিদের মোতাওয়াল্লী আব্দুল আজিজ মনু, শামিম আহমেদ, শাহাব উদ্দিন।

পশ্চিম পীরমহল্লা থেকে বিশিষ্ট মুরব্বি জিল্লুর রহমান, পীর আব্দুল জব্বার, আব্দুসালাম। ইসলামাবাদ থেকে সৈয়দ বাহারুল ইসলাম রিপন, মোঃ বাবর আহমদ, মিলন আহমদ। শাহরুমি এলাকা থেকে এড. সিরাজ উদ্দিন ও বিশিষ্ট মুরব্বি মনির উদ্দিন আহমদ প্রমুখ।

ad

পাঠকের মতামত