‌’আমি ভয় পেয়ে চিৎকার করে আমার স্বামীকে ডাকতে থাকি’

brazil_black_woman_monicaমনিকা ভ্যালেরিয়া গঞ্জালভেস, বয়স ৪৭ বছর। দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী রয়েছে তাঁর। ব্রাসিলিয়া শহরের একজন আইন উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। বিয়েও করেছেন একজন বিচারককে। রিও ডি জেনিরোর মেয়ে মিস গঞ্জালভেসের যেমন আর্থিক স্বচ্ছলতা রয়েছে, তেমনি সামাজিক সম্মান ও প্রতিপত্তিও রয়েছে।খুব ছোট করে যদি বলা হয় তাহলে ব্রাজিলের সমাজে যে এক শতাংশ মানুষ শিক্ষা ও প্রতিপত্তিতে সামাজিক অবস্থানের শীর্ষে রয়েছে মনিকা গঞ্জালভেসও তাদের একজন।

তবে একটাই পার্থক্য-সেটা হলো তিনি কৃষ্ণাঙ্গ। কোনও সামাজিক বা প্রাতিষ্ঠানিক অনুষ্ঠানেও তিনি একজনই কৃষ্ণাঙ্গ নারী যিনি কিনা গৃহশ্রমিক নন। মিস গঞ্জালভেস যখন তাঁর স্বামীর সঙ্গে কোনও অনুষ্ঠানে যান, অনেকেই ধারণা করেন তিনি হয়তো তাঁর স্বামীর সহকারী কর্মকর্তা। “তাঁরা আমাকে ভুল বুঝে। প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষেত্রে দেখা যায় সাধারণত কৃষ্ণাঙ্গরা ধোয়া-মোছার কাজ করছে বা রিসিপশন ডেস্কে কাজ করে। কিন্তু আমি কোনও কৃষ্ণাঙ্গ শিক্ষার্থী দেখি না”-বলছিলেন মিস গঞ্জালভেস।

যেসব সামাজিক অনুষ্ঠানে মিস গঞ্জালভেস যান সেখানে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তিনিই একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ নারী। কিন্তু গত ২২ বছর আগে মিস গঞ্জালভেসের সঙ্গে যে ঘটনাটি ঘটেছিল সেটি তাঁকে চরম আঘাত দিয়েছিল। সে সময়ে ফর্টালেজায় তাঁর স্বামীর সঙ্গে মধুচন্দ্রিমায় গিয়েছিলেন মনিকা গঞ্জালভেস।

“একটা লোক হঠাৎ আমায় এসে ধরে সহজভাবেই তার সাথে যাবার প্রস্তাব দেয়। আমি ভয় পেয়ে চিৎকার করে আমার স্বামীকে ডাকতে থাকি। তারপর ওই লোকটি আমার কাছে ক্ষমা চায় এই বলে যে সে ভাবছিল আমি একজন শ্বেতাঙ্গের সাথে গিয়েছি একজন পতিতা হিসেবে”।

“কী অদ্ভুত! ওই লোকের একবারও মনে হলো না যে শ্বেতাঙ্গ পুরুষটি আমার স্বামী হতে পারে। সে ভাবতে পারলোনা যে স্বনির্ভর একজন মহিলা যিনি আইন বিষয়ে পড়ালেখা করেছেন সে তাঁর স্বামীকে নিয়ে সেখানে গেছে। তাঁর মনের মধ্যে এটাই গেঁথে গেছে যে সেখানে কোন কৃষ্ণাঙ্গ নারী যাওয়া মানেই হলো সে পতিতা”- মধুচন্দ্রিমার স্মৃতিচারণ করছিলেন মনিকা গঞ্জালভেস।

মনিকা ও কার্লোস তাঁদের একমাত্র মেয়েকে নিয়ে থাকেন ব্রাসিলিয়ার এক অভিজাত এলাকায়। মনিকার পরিবারে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি যিনি সামাজিকভাবে এতটা উন্নতি করেছেন, নিজেকে এমন শীর্ষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। তবে এ পর্যায়ে আসতে অনেক কাঠখড় পোহাতে হয়েছে তাঁকে।

“আমাকে সবসময় প্রমাণ করতে হয়েছে আমি যা করি তা সবচেয়ে ভালোভাবে করি। আমি যদি এটা না করতে পারতাম গায়ের রঙ কালো হবার জন্য যেভাবে চিন্তা করা হয় সেভাবেই আমাকে ভাবা হতো, আমার কর্মক্ষেত্রেও এর প্রভাব থাকতো”।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিস গঞ্জালভেসকে বিশেষ সমাদর করা হয় তাঁর সামাজিক অবস্থানের কারণে। কিন্তু অন্য ক্ষেত্রে সামাজিক বৈষম্যের খারাপ চিত্রের মুখেই পড়তে হয় তাঁকে। “মাঝেমধ্যে আমার মনে হয় যে আমি যে তাদের ভাবনার সম্পূর্ণ বিপরীত সেটা আমাকে দেখাতে হবে”। তবে, কে মিস গঞ্জালভেসের গায়ের রঙ নিয়ে কী ভাবলো সেটা নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নন তিনি। তবে ভবিষ্যত নিয়ে কিছুটা উদ্বীগ্ন নন তিনি।

মনিকা গঞ্জালভেসের এখন আট বছর বয়সের একটি মেয়ে আছে, এবং ভবিষ্যতে সমমর্যাদার সমাজ দেখতে চান তিনি। তাঁর মেয়ে লেটিশিয়া সেখানকার একটি প্রাইভেট স্কুলে পড়ছেন, সেখানেও লেটিশিয়াকে ব্যতিক্রম বলে ধরা হয়। “স্কুলে দুইশোর বেশি শিক্ষার্থী আছে। কিন্তু মাত্র দুজন কৃষ্ণাঙ্গ, আমার মেয়ে ছাড়াও আরও একজন কৃষ্ণাঙ্গ মেয়ে তার সাথে পড়ে। আর ওই মেয়ের মা হলো গৃহশ্রমিক”-বলছিলেন মনিকা গঞ্জালভেস।

ad

পাঠকের মতামত