জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গোপন ভোটের ফল ফাঁস

1470542497জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব পদে প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য নিরাপত্তা পরিষদের গোপন ভোটের ফল ফাঁস হয়েছে শুক্রবার। ভোট শেষ হওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যেই এক টুইটের মাধ্যমে ফলাফল প্রকাশ করা হয়।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, গোপনীয় এই ভোটে নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচটি স্থায়ী ও ১০টি অস্থায়ী সদস্য রাষ্ট্র জাতিসংঘের মহাসচিব পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের ‘পছন্দক্রম’ নির্ধারণ করেন। ফাঁস হওয়া ফলাফলে দেখা যায়, ভোটে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছেন পর্তুগালের সাবেক প্রধানমন্ত্রী আন্তনিও গুতিরেজ।

বিরাট ব্যবধান না থাকলেও গুতিরেজ যে প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য দশজনের চেয়ে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর পছন্দের তা স্পষ্ট হয়েছে। ভোটের ফল ফাঁস হওয়ার পর প্রার্থী আছে কিন্তু নিরাপত্তা পরিষদে প্রতিনিধিত্ব নেই এমন দেশগুলো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে বলে কূটনৈতিক সূত্রের বরাত দিয়ে ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে।

দুই দফা দায়িত্ব পালন শেষে জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি-মুন এ বছরের শেষ দিকে বিদায় নেবেন। তার স্থলাভিষিক্ত হতে ইচ্ছুক প্রার্থীদের নেতৃত্ব দেয়ার সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্যই নিরাপত্তা পরিষদ দ্বিতীয় দফার এই জরিপ করছে। এর আগে প্রার্থীদের বিষয়ে আপত্তি জানতে গত মাসে গোপন ভোট হলেও যথারীতি তার ফল জানা যায়নি।

শুক্রবারের ভোটে ১৯৯৫ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা গুতিরেজের পক্ষে ১১টি ভোট পড়ে। তার বিপক্ষে ভোট পড়েছে দুটি। যার মধ্যে স্থায়ী সদস্য কোনো রাষ্ট্র থেকে থাকলে সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন পেয়েও ২০০৫ সাল থেকে সাড়ে ১০ বছর জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে আসা গুতিরেজের মহাসচিব হওয়ার স্বপ্ন ভেস্তে যেতে পারে বলে পশ্চিমা এক কূটনীতিক জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যাপারটা বোঝা যাবে। আমাদের শুধু জানতে হবে, কোন দুই দেশ গুতিরেজের বিপক্ষে রায় দিয়েছে।’

যেসব দেশ ও সংস্থা জাতিসংঘের মহাসচিব পদে প্রথম কোন নারীকে দেখতে চেয়েছিল তারা হতাশ হয়েছে বলে জানিয়েছে ইনডিপেনডেন্ট। ফাঁস হওয়া দ্বিতীয় দফার এই ভোটের ফলে গুতিরেজের পর স্থান করে নিয়েছেন সার্বীয় কূটনীতিক ভক জেরেমি।

নারী প্রার্থীদের মধ্যে আর্জেন্টিনার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুজানা মালকোরা দ্বিতীয় দফার ভোটে তৃতীয় হয়েছেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত এই প্রার্থীর পক্ষে ৮টি, বিপক্ষে ৬টি ভোট পড়েছে।

রাশিয়ার সমর্থিত বুলগেরিয়ার প্রার্থী ইরিনা বোকোভা হয়েছেন পঞ্চম। জাতিসংঘের পরবর্তী মহাসচিব পদে ইউনেস্কোর বর্তমান মহাপরিচালক ইরিনা অনেকখানি এগিয়ে ছিলেন বলে মনে করা হত।

সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর দুই দেশের মধ্যে এমন ব্যবধান জাতিসংঘের শীর্ষ কর্মকর্তা নির্বাচনে নিরাপত্তা পরিষদের ‘একক সিদ্ধান্ত’ নেয়ার সক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বলেও ইন্ডিপেনডেন্টের প্রতিবেদনে মন্তব্য এসেছে।

ফাঁস হওয়া ভোটের ফলে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বন্দ্বের বিষয়টিও উঠে এসেছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। অক্টোবরের মধ্যে একক প্রার্থীর ব্যাপারে পরিষদ একমত হতে পারবে কি না তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে।

পশ্চিমা দেশগুলো অবশ্য বেশ কিছুদিন ধরে ‘যোগ্য’ প্রার্থী নির্বাচনের আওয়াজ দিচ্ছে। তাদের বক্তব্য, যোগ্যতা অনুসারে না হয়ে জন্মস্থান বা লিঙ্গের ভিত্তিতে মহাসচিব নির্বাচিত হলে তা মোটেও যুক্তিযুক্ত উদাহরণ হবে না।

এই তালগোলের মধ্যে ক্রিস্তালিনা গিওর্গিভার মতো অনেক প্রার্থীর জন্য শেষ মুহূর্তে মহাসচিব হওয়ার পথে আকস্মিকভাবে দরজা খুলে যেতে পারে বলেও ইনডিপেনডেন্টের ভাষ‌্য। বুলগেরিয়ার অর্থনীতিবিদ গিওর্গিভা বাজেট ও মানবসম্পদ বিষয়ক ইউরোপীয় কমিশনারের দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

ad

পাঠকের মতামত