‘বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়’

ACC1470318085“আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু প্রয়োগের কালচার নেই। অনেক সময় সরকারের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে দুর্নীতিকে উৎসাহিত করা হয়। এ ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়।”

বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান কার্যালয়ে সংস্থাটির খসড়া কৌশলগত কর্মপরিকল্পনা-(২০১৬-২০২১) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন এনজিও প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন।

সভায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সংবিধানে সরাসরি দুর্নীতি প্রতিরোধের কথা আছে। তবে সরকারের দায়িত্বশীল জায়গা থেকে আসা কিছু বক্তব্য দুর্নীতিকে উৎসাহিত করে। যেমন বলা অবৈধ সম্পদ নিয়ে বলা হয়েছিল- ক্ষমতায় থাকলে সম্পদ একটু বাড়বেই।

তিনি আরো বলেন, যারা দুর্নীতি করছে তাদের প্রথমে বিচারের আওতায় আনতে হবে। এরপর তারা সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত না হতে পারে সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে পারে। এ বিষয়ে সংসদ, বিচারবিভাগ ও পুলিশ সবাইকে সমান ভূমিকা পালন করতে হবে। আমাদের দেশে আইন আছে কিন্তু প্রয়োগ কালচার নেই, তাই প্রয়োগের কালচার বাড়াতে হবে। তাই সবার আগে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা। আসলে জনগণ কিভাবে দুর্নীতি কথা বলবে! যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে রাষ্ট্রদ্রোহী হতে হয়। এ ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয় বলেও ইফতেখারুজ্জামান মন্তব্য করেন।

‘নিজেরা করি’ এনজিওর সমন্বয়ক খুশি কবির বলেন, আমাদের ৫ টি মৌলিক চাহিদার মধ্যেও দুর্নীতি জড়িত হয়েছে। কারো প্রাপ্য অধিকার গ্রহণ করতে গিয়ে ঘুষ দেওয়া এখন আমাদের কালচার হয়ে গেছে। সমাজে এরকমভাবে ঘুষ-দুর্নীতি প্রবেশ করেছে।

তিনি বলেন, দুর্নীতিবাজদের আইনগতভাবে শাস্তি প্রদান করার পাশাপাশি প্রমাণিত দুর্নীতিবাজদের সামাজিকভাবে শাস্তি দেওয়া উচিত। কিন্তু আমদের দেশে উল্টোচিত্র দেখা যায়।

সিনিয়র সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করা ও সমাজের মানুষের কাছে বিব্রতকর বিষয়ের মধ্যে ফেলানো হলো দুর্নীতিবাজদের জন্য বড় শাস্তি। কেননা অনেক মামলা ও চার্জশিটের বিচার হয়, আবার কোনগুলো আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে যায়, অথবা বিচার চলতে চলতে জীবনের সময়ই শেষ হয়। তাই সামাজিকভাবে দেওয়া শাস্তিই তাদের জন্য যথাযথ হয়। এ ব্যাপারে গণমাধ্যম খুব ভালো ভূমিকা পালন করে।

দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কমিশনার (তদন্ত) এ এফ এম আমিনুল ইসলাম, দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. নাসিরউদ্দীন আহমেদ, বিএনপিএসের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবির, স্টেপসের রঞ্জন কর্মকার, ব্র্যাকের পরিচালক নাজমুল হোসেন, টিএমএসএসের রেজা খান, এডাবের পরিচালক একেএম জসিমউদ্দীন, এসওএসের জাতীয় পরিচালক গোলাম আহমেদ ইছহাক প্রমুখ।

ad

পাঠকের মতামত