‘শরীর-মন যা চেয়েছে, আমি তাই করেছি’

pauli-damওপার বাংলার ভিন্নধর্মী মুভির তুমুল জনপ্রিয় এবং আলোচিত অভিনেত্রী পাওলি দাম। অসাধারণ অভিনয় দিয়ে জয় করেছেন দর্শকদের হৃদয়। সেই সঙ্গে স্বল্পবসনের দৃশ্যগুলোর জন্য সমালোচনাও জুটেছে অনেক। সমালোচকরা তো সমালোচনা করবেই। তাই বলে থেমে নেই পাওলি। টালিউডে ভেলকি দেখিয়ে চলা বুড়ো সম্রাট প্রসেনজিতের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন বাংলা মুভি ‘ক্ষত’ এবং টিভি সিরিয়াল ‘মহানায়ক’-এ। যা ইতোমধ্যেই আলোচিত এবং প্রশংসিত হয়েছে। সেই ছবিসহ পাওলি দাম তার জীবনের নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন ওপার বাংলার দৈনিক আনন্দবাজারের সঙ্গে। পাঠকদের জন্য সাক্ষাতকারটি তুলে ধরা হলো-

প্রশ্ন : নতুন মার্সেডিজ কিনলেন। প্রেমটাও কি এ বার নতুন?

নতুন বলতে!

প্রশ্ন : ‘ক্ষত’য় প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে ও রকম বোল্ড প্রেমের দৃশ্য দেখার পর, প্রচুর জল্পনা— নায়কের সঙ্গে পাওলির এখন জোর প্রেম চলছে।

(হাসলেন) ‘ক্ষত’তে ঝরনার জলে অন্তরা-নির্বেদ লাহিড়ীর ওরকম প্যাশনেট রোম্যান্সের দৃশ্য জাস্ট এমনি শ্যুট করা যেত না। সেই ‘মনের মানুষ’ থেকে বুম্বাদা আর আমার একটা স্ট্রং বন্ডিং আছে।

প্রশ্ন : বন্ডিংটা কী ধরনের?

আমি যা বলব, সত্যি বলব। কিন্তু আমাকে আগে বলতে দিন। একটানা কাজ করতে করতে দু’জন ক্রিয়েটিভ মানুষের মধ্যে ইমোশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং তৈরি হয়। বুম্বাদা আর আমার ঠিক সেই রিলেশনটা আছে। ‘মহানায়ক’ শ্যুট করার সময়ও রোজ বিকেলে জিমে আমাদের দেখা হত। গল্প হত। অন্য দেশের ছবি নিয়ে অনেক আলোচনা হত। এটাকে প্রেম বলব না। ছবিতে খুনের দৃশ্য করতে গেলে নিজেকে কি খুনি হয়ে যেতে হয়?

প্রশ্ন : প্রসেনজিৎ আর আপনি বাথটাবে যে শট দিয়েছেন তা বাংলা ছবিতে অবিশ্বাস্য। তার আগে আপনার প্রস্তুতি ছিল না?

‘ক্ষত’ করার সময় আমি পুরোটাই অন্তরা হয়ে গেছিলাম। অন্তরার মন-শরীর যেটা চেয়েছে, আমি ঠিক সেটাই করেছি। আর আপনি যে পর্যায়ের বোল্ড সিনের কথা বলছেন ‘ছত্রাক’ করার পর সে সব নিয়ে আমার কোনও আড়ষ্টতা বা দ্বিধা থাকবে না, সেটাই তো স্বাভাবিক। দেখুন, আমি ইন্টারন্যাশনালি পৌঁছতে চাই। ‘ক্ষত’ তার প্রথম ধাপ। কমলদার (কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়) মেকিংটাই আলাদা। যে কোনও চরিত্রে নিজেকে উজাড় করে দিতে হবে। বাথটাব সিন, স্মুচিং, এগুলো আলাদা করে ভাববার আর কিছু নেই।

প্রশ্ন : ইন্ডাস্ট্রিতে এমন অনেক নায়িকা আছেন, যারা স্মুচিং সিনে স্বচ্ছন্দ নন। অথচ তারা ভাল কাজ করছেন…

সেটা অবশ্যই তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি মনে করি অভিনেত্রীদের শরীর নিয়ে আলাদা করে ইনহিবিশনস থাকা উচিত নয়। এটা আমার মত। দেখুন, লাস্ট বারো বছর শুধু কাজ আর বাড়ি এই রুটিনে কাটিয়েছি। এত দিন বাদে ঠিক জায়গাটা পেলাম। সময় লাগে। সুমন ঘোষের কাছে শুনেছি, সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মতো অভিনেতা ‘ক্ষত’তে আমার অভিনয়ের প্রশংসা করেছেন। এটাই বিশাল পাওয়া।

প্রশ্ন : সুমন ঘোষ বুঝি আপনার নতুন বন্ধু?

(প্রচণ্ড হাসি) আপনার মতলবটা কী বলুন তো!

প্রশ্ন : পাল্টা প্রশ্ন না করে প্লিজ উত্তরটা দিন।

আমি তো বলেইছি সত্যি কথা বলব। বঙ্গ সম্মেলনে গিয়ে সুমনদার সঙ্গে দারুণ আড্ডা হল। তার পর আমি আর অর্জুন মায়ামি গিয়েছিলাম। ওখানে সুমনদা বললেন তোমরা আমার দেশে এসেছ। তোমাদের মেক্সিকান ফুড খাওয়াব।

প্রশ্ন : এটা কি সেই মেক্সিকান ফুড, যেটা ‘ক্ষত’য় নির্বেদদা খাইয়েছিলেন?

(হাহা করে হাসি) এটা দারুণ। মেক্সিকান ফুডটা একটা প্রতীক হয়ে গেল…

প্রশ্ন : এটা ঠিক কীসের প্রতীক হল?

বন্ধুত্বের…

প্রশ্ন : তার মানে সুমন ঘোষের পরের ছবির নায়িকা আপনি?

পরিচালক আর নায়িকার বন্ধুত্ব হলেই তার ছবির নায়িকা হয়ে যায় নাকি! তবে আমি চাই সুমন ঘোষের ছবিতে কাজ করতে।

প্রশ্ন : আচ্ছা, ছাড়ুন। বিয়ে করছেন কবে?

নায়িকা মানেই হয় তার প্রেম নিয়ে প্রশ্ন, নয় বিয়ে! এখনও কিছু প্ল্যান করিনি।

প্রশ্ন : বিয়েটা কি হচ্ছে আদৌ?

অফ কোর্স হবে। বিয়ে আমার কাছে স্বপ্নের মতো। সানাই বাজবে। লাল বেনারসি পরব। পাঞ্জাবি, ধুতি আর টোপর পরে বর আসবে।

প্রশ্ন : বরটা কে?

কেন! অর্জুন।

প্রশ্ন : সত্যি অর্জুন?

কারও যদি সন্দেহ হয়, সে সেটা নিয়ে থাকুক। আমি অর্জুনকে বিয়ে করতে চাই। এই যে মার্সেডিজ কিনলাম সেটা তারইচ্ছেতে। ও-ই প্রথম আমায় নিউ ইয়র্কে ব্রডওয়ে দেখিয়েছে। লিঙ্কন স্ট্রিটে লাইভ জ্যাজ শুনিয়েছে। আমার যে অন্য একটা জীবন আছে, সেটা তারমধ্যে দিয়েই চিনতে শিখেছি।

প্রশ্ন : অর্জুন ‘ক্ষত’ দেখেছেন?

এখনও দেখেনি। অবশ্যই দেখবে।

প্রশ্ন : অর্জুন মেনে নিতে পারছেন যে আপনি এত বোল্ড, খোলামেলা সিন করছেন, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়কে পর্দায় চুমু খাচ্ছেন?

শুনুন, আমি আর অর্জুন প্রথম একসঙ্গে ‘ছত্রাক’ দেখি। তার আগে আমি ‘ছত্রাক’ দেখিনি। তারসঙ্গে এই আন্ডারস্ট্যান্ডিংটা আছে। তবে একটা কথা। আমি যখন কোনও চরিত্রের মধ্যে থাকি তখন কোথাও কারও সঙ্গে খুব একটা কথা বলি না। কিন্তু অর্জুন একটু অবাক হয়ে যায়। এক দিন তিন ঘণ্টা আমার ফোন বন্ধ ছিল। ও বলল, টানা তিন ঘণ্টা শ্যুট করছ, এমন হয় নাকি? ওকে বললাম আমি এখন পুরোপুরি ‘মহানায়ক’-এর সুচরিতা।

প্রশ্ন : রাইমা তো আপনার এত বন্ধু, অর্জুনের সঙ্গে সম্পর্কেও তো রাইমার হাত ছিল। সুচরিতা নিয়ে রাইমা বা মুনমুন সেন কিছু বলেনি আপনাকে?

মুনদি ‘মহানায়ক’ নিয়ে আমায় কিছুই বলেনি। তবে ওরা ‘ক্ষত’ দেখতে গিয়েছিল। ওদের খুব ভাল লেগেছে। আর রাইমা সুচরিতাকে অ্যাপ্রিশিয়েট করেছে।

প্রশ্ন : কিন্তু রাইমা তো বলেছিলেন, তার দিদিমা কেউ হতে পারে না।

দেখুন, ‘মহানায়ক’-এ বুম্বাদা বা আমি কেউই উত্তমকুমার বা সুচিত্রা সেন হয়ে ওঠার চেষ্টা করিনি।

প্রশ্ন : কিন্তু বেশিরভাগ মানুষ বলছেন ‘মহানায়ক’-এ পাওলি অসাধারণ। ‘মহানায়ক’ আর ‘ক্ষত’ তা হলে পাওলির কামব্যাক?

কামব্যাক কেন? আমি তো সব সময় ছিলাম। ট্যুইটার ভেসে যাচ্ছে ‘মহানায়ক’-এর সুচরিতার জন্য। একটা ট্যুইট ছিল—‘কালবেলা’ থেকে ‘মহানায়ক’ পাওলির পারফরম্যান্স আর এফিশিয়েন্সি আমায় মুগ্ধ করেছে। এই এফিশিয়েন্সি শব্দটা আমার কাছে খুব ইম্পর্ট্যান্ট। টাচউড। ‘মহানায়ক’ আর ‘ক্ষত’, দু’টো নিয়েই হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুকে, মেসেজে প্রচুর প্রশংসা পেয়েছি। ‘ক্ষত’ নিয়ে অনেক বেশি সমালোচনা শুনেছি। পরকীয়া সম্পর্কে এমন পরিণতি কেন? অন্তরা পাগল হয়ে গেল কেন?

আসলে একটা ছবি নিয়ে এত কথা হচ্ছে। মানুষ এত ভাবছে ছবিটা দেখার পর। আর একটা সিরিয়ালকে একঘেয়ে দেখার মতো করে লোকে দেখছে না। সব জায়গায় চর্চা হচ্ছে। তবে এখানে একটা কথা বলে রাখি। সুচিত্রা সেনকে নকল করা বা ওঁর মতো হয়ে ওঠার চেষ্টাও করিনি। তা সত্ত্বেও লোকের যে এত ভাল লাগছে এটাই পাওয়া।

প্রশ্ন : ‘ক্ষত’র রেজাল্ট তো বেরিয়ে গেছে। ‘মহানায়ক’-এর অনেক এপিসোড বাকি। ‘মহানায়ক’-এ সুচরিতা যেভাবে তাকায়, টেনশন হলে তার চোখের পাতা যে ভাবে ওঠানামা করে, সেটা অবিকল সুচিত্রা সেনের মতো। প্রস্তুতিটা কীভাবে নিলেন?

উত্তম-সুচিত্রার ছবি একটানা প্রচুর দেখেছি। প্রচুর রাত জাগতে হয়েছে। খাটতে হয়েছে। আসলে অনেকেই বলেন, আমাকে নাকি অনেকটা সুচিত্রা সেনের মতো দেখতে। সেই লুকটা কাজে দিয়েছে। আমি সুচরিতা চরিত্রটাকে ভীষণভাবে ফিল করি। চরিত্রটা করতে করতে এ রকম মনে হয়েছে, সুচরিতা অভিনেত্রী হয়ে যা যা ফেস করছে, আমার জীবনেও হয়তো এমন হতে পারে! আমি এতটাই ইনভলভড। সেখান থেকে অভিনয়টা বেরিয়ে এসেছে। এখন দেখছি খুঁটি পুজোর উদ্বোধনে গেলেও লোকে সুচরিতার কথা বলছে।

প্রশ্ন : উত্তমকুমারের মৃত্যুর দিন ছাড়া সুচিত্রা সেন কখনও ভবানীপুরের বাড়িতে যাননি। অথচ ‘মহানায়ক’-এ দেখানো হল সুচিত্রা সেন উত্তমকুমারের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাঁর বাড়ি চলে গেলেন। এই বানানো গল্পগুলো…

(থামিয়ে দিয়ে) গল্প নিয়ে কিছু বলতে গেলে পরিচালক আর প্রযোজকের কাছে যাওয়া উচিত। আমি শুধু ভাল অভিনয় করার চেষ্টা করেছি। সেটাই আমার কাজ। তবে আমরা যদি নিজেদের কাজ নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট না করি, তা হলে কিন্তু এগোতে পারব না। সমালোচনা থেকেও একজন অভিনেতা শিখতে পারে।

প্রশ্ন : যদি বলি প্রসেনজিৎ- ঋতুপর্ণা-র পর এখন প্রসেনজিৎ-পাওলি জুটি।

ঋতুদি অনেক আগে থেকে কাজ করছে। তার সঙ্গে কোনও প্রতিযোগিতার সম্পর্ক নেই। ঋতুদি আর বুম্বাদার কেমিস্ট্রিটাই আলাদা। ইনফ্যাক্ট ইন্ডাস্ট্রির কোনও নায়িকার সঙ্গেই আমার প্রতিযোগিতা নেই।

প্রশ্ন : খুব একটা ভাবও নেই বোধহয়। আমেরিকায় বঙ্গ সম্মেলনে মিমি-শ্রাবন্তী-আবীর-পরমব্রত সবাই একসঙ্গে থেকেছেন। আপনি আলাদা হোটেলে ছিলেন কেন?

আরে আমার সঙ্গে অর্জুন ছিল। তাই আমরা আলাদা করে প্ল্যান করেছিলাম। আমি আর ঋতুদি কিন্তু ওখানেও প্রচুর পার্টি করেছি। মজা করেছি। মিমি, শ্রাবন্তীও বন্ধু। দু’জনে ভাল কাজ করছে। আমারও ইচ্ছে আছে কমার্শিয়াল ছবি করার। দেবের সঙ্গে ডান্স ফ্লোর শেয়ার করার। কী দারুণ নাচে না দেব!

প্রশ্ন : কমার্শিয়াল ছবি, না বিয়ের দিন কোনটা আগে হচ্ছে?

হয়তো বিয়ে।

প্রশ্ন : আবার হয়তো কেন?

(হো হো করে হাসি) আমি না বিষয়টা এনজয় করছি। সবাই ডেট জানতে চাইছে।

প্রশ্ন : তবু কবে?

আগে ভাইয়ের বিয়েটা নেক্সট ইয়ার জানুয়ারিতে দিই। তারপর।

ad

পাঠকের মতামত