কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা: শুভ জন্মদিন

bobita৩০ জুলাই শনিবার। এই দিনে জন্ম ঢাকাই সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেত্রী ববিতা। শুভ জন্মদিন অভিনেত্রী ববিতা। জীবনের ৬২টি বছর পার করে ৬৩-তে পা দিচ্ছেন তিনি। বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ও কথাশিল্পী জহির রায়হানের নায়িকা হয়েই চলচ্চিত্রে পা রাখেন ববিতা।

জন্মদিনে প্রিয় নায়িকা তার ভক্তদের জানালেন অনেক না জানা কথা-

‘মা বেগম জাহানারা ডাক্তার ছিলেন। আমিও ডাক্তার হতে চেয়েছিলাম। লেখাপড়ায়ও ভালো ছিলাম। খুব ছোটবেলায় সুচন্দা আপার সঙ্গে মাঝে মাঝে শুটিংয়ে গিয়ে দেখতাম, একই শট তিনি বারবার দিচ্ছেন। খুব বিরক্ত লাগত, বোন এত কষ্ট করছে? সিনেমা করতে এত কষ্ট করতে হয়? সিদ্ধান্ত নিলাম, অভিনয় করবো না। এরমধ্যে জহির (রায়হান) ভাইয়ের সঙ্গে আপার বিয়ে হলো। তিনি বিখ্যাত পরিচালক, দুলাভাই হলেন। তিনি বললেন, ‘পপি (ডাকনাম), আমার সিনেমায় তোকে টিনএজ মেয়ের অভিনয় করতে হবে।’ বয়সও তখন ১২-১৩। আমি বেঁকে বসলাম- ভালো লাগে না, করবো না। মা-বোন খুব বোঝালেন, দুলাভাই বলছে, কর। ছবিটির নাম ‘সংসার’। রাজ্জাক ভাই আমার বাবা, সুচন্দা আপা মা।’

তখন তার নাম ফরিদা আক্তার পপিই আছে। ববিতা হয়নি। ‘সংসার’ এর বছর দুয়েক পর জহির রায়হান যখন পরের ছবি ‘জ্বলতে সুরজ কি নিচে’তে হাত দিলেন, নায়িকা শবনমের শিডিউল পাচ্ছিলেন না। ববিতা বলছেন, ‘ছবির প্রযোজক বিখ্যাত ক্যামেরাম্যান আফজাল চৌধুরী বললেন, ‘এত দুশ্চিন্তা করছ কেন? তোমার ঘরেই তো নায়িকা আছে।’ জহির ভাই যখন বললেন, রিফিউজ করে দিলাম। আগের মতোই মা-বোন বোঝাতে লাগলেন, ‘এই ছবিতে নায়িকা হবে, নাদিমের সঙ্গে অভিনয় করবে। করো।’ বললাম, এক শর্তে করতে পারি—এটাই হবে প্রথম এবং শেষ। আফজাল ভাই আর তার স্ত্রী মিলে আমার নাম দিলেন ববিতা।’

ছবিটি শেষ পর্যন্ত হয়নি। বড় আর্টিস্টদের শিডিউল পাওয়া গেল না, পশ্চিম পাকিস্তানে শুটিং করতে হবে ইত্যাদি কারণে ছবিটি আটকে গেল। জহির রায়হান ববিতাকে নায়িকা করেই আরেকটি ছবির প্লান করলেন ‘শেষ পর্যন্ত’।

প্রথম ছবিতে যিনি ছিলেন ববিতার বাবা, এ ছবিতে তিনিই নায়ক! ববিতা বলছেন, ‘ছবিটি করতে গিয়ে খুব অস্বস্তি হলো- কয়েক দিন আগেও যাকে বাবা ডেকেছি, এখন তিনি আমার প্রেমিক, তাকে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলতে হবে! লজ্জায় অভিনয় করতে পারছিলাম না।’ এ ছবিটি ১৯৬৯ সালের ১৪ আগস্ট মুক্তি পায়।

সেই থেকে ‘নায়িকা ববিতা’র যাত্রা শুরু। দুর্ভাগ্যক্রমে ওই দিনই তার মা মারা যান। ‘শেষ পর্যন্ত’ ছবির পারিশ্রমিক তিনি পেয়েছিলেন ১২ হাজার টাকা। ওই টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছিলেন ববিতা।

অভিনেত্রী ববিতার জন্ম ১৯৫৬ সালের ৩০ জুলাই। তিনি যশোরে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম ফরিদা আক্তার পপি। ১৯৬৮ সালে সুবর্ণা নামে ‘সংসার’ চলচ্চিত্রে অভিনয় শুরু করেন। এরপর ‘ববিতা’ নাম ধারণ করে জহির রায়হানের জ্বলতে সুরুজ কী নীচ, এহতেশামের পীচঢালা পথ ও শেষ পর্যন্ত চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। নায়িকা হিসেবে ববিতার প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র হচ্ছে ‘শেষ পর্যন্ত’। ১৯৭৩ সালে পশ্চিমবঙ্গের প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়ের ‘অশনি সংকেত’ চলচ্চিত্রে অনঙ্গ বউ চরিত্রে অভিনয় করে আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও খ্যাতি লাভ করেন। ববিতা সাতটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন ও সাতবার জাতীয় পুরস্কার, অসংখ্যবার বাচসাস’সহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হন। তার অভিনীত চলচ্চিত্রের সংখ্যা প্রায় চার শতাধিক।

২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সমাজকল্যাণমূলক সংগঠন ডিসিআইআই তাকে এ দেশের শুভেচ্ছাদূত নিয়োগ করে। বর্তমানে অভিনয় থেকে দূরে আছেন তিনি।

ad

পাঠকের মতামত