ভারতে সুযোগ পেয়ে এখন বাংলাদেশের বদনাম করছেন জয়া আহসান

joya-ahsan-শুভ জন্মদিন।
অনেক ধন্যবাদ।

উইকিপিডিয়া বলছে বয়স ৪৩। নিজেকে এত সুন্দর ভাবে মেনটেন করছেন কী ভাবে?
তাই নাকি? (চরম অবাক) ৪৩! কে যে নিজের দায়িত্বে আমার সম্বন্ধে এ সব লিখেছে আমি জানি না। ৪৩-এর ধারে কাছেও না। শুনে অবাক হলাম।

৪৩ নয় বলছেন? তা হলে তো চেঞ্জ করতে হবে তো!
না না। চেঞ্জ করারও কোনও দরকার নেই। কারণ ওটা ৪৩ বা ৮৩ যাই হোক না কেন, আমি বিশ্বাস করি অভিনেত্রীর কোনও বয়স নেই।

সে না হয় হল, কিন্তু আপনার গ্ল্যামারের রহস্যটা শেয়ার করবেন না?
দেখুন আমি ষোলআনা বাঙালি। মাছে-ভাতে থাকি। কোনও ডায়েট ফলো করি না। মাঝে মাঝে ওয়ার্কআউট করি। একবেলা খুব ভাল করে খাই। ব্রেকফাস্টটা বেশি পরিমাণে খাই। আর এ দেশে এসে নতুন করে মাটনের প্রেমে পড়লাম। আসলে শুটিংয়ে কলিগদের বাড়ি থেকে খাবার আসত। সেই থেকে মাটন খাওয়ার নেশা চেপেছে।

আবর্ত দিয়ে টলিউডের জার্নি শুরু। এখন ইন্ডাস্ট্রিতে জয়া আহসান প্রথম সারির নাম। এক্সপিরিয়েন্স কেমন?
ভারতে লোকে কাজের খুব কদর করে। এটা একটা দারুণ পজিটিভ ব্যাপার।

বাংলাদেশে কাজের কদর নেই বলছেন?
ঠিক তা নয়। আসলে আমি যে ধরনের কাজ করতে চাই, সেগুলো বাংলাদেশে কম হচ্ছে। টু মাচ কর্মাশিয়াল ছবি ওখানে তৈরি হচ্ছে। দর্শকও দেখছেন। আমি অনেক বেশি অর্থবহ ছবি করতে চাই। যেখানে অভিনয়ের জায়গা রয়েছে।

ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় এখন অনেক ছবি হচ্ছে। উদ্যোগটা কতটা পজিটিভ?
প্রশ্নটা আমি আপনাকে করছি। সত্যিই কি এগুলো ওয়ার্ক করছে? আমার তো মনে হয় না।

কেন?
আমার এখানকার ইন্ডাস্ট্রির লোকেরা বলছেন, এই ছবিগুলো একদম চলছে না। কয়েক দিন হলে থেকেই চলে যাচ্ছে। ফলে দু’দেশেই ভাল ভাবে চলছে এমনটা নয় কিন্তু। এই প্রজেক্টের কোনও ছবিই আমি হিট বলতে পারছি না। এখনও পর্যন্ত পজিটিভ কিছু দেখছি না। তবে ‘মনের মানুষ’ বা ‘শঙ্খচিল’-এর মতো ছবি আরও হওয়া উচিত। আসলে বাণিজ্যের বাইরে গিয়ে সংস্কৃতির বিষয়টা মাথায় রেখে কাজ হওয়া উচিত।

আপনি কি কোনও যৌথ প্রযোজনায় কাজ করছেন?
না।

সে জন্যই কি এখনও পজিটিভ বলে মনে হচ্ছে না?
তা কেন হবে? আমি কনভিন্সড হইনি বলে কাজ করিনি। কিন্তু যে প্রজেক্টে আমি নেই, সেটা ভাল হলে বলব না কেন?

কাজের ক্ষেত্রে কমফর্ট জোন কোথায় বেশি?
আমি ভারত-বাংলাদেশ দু’জায়গাতেই স্বচ্ছন্দ। তবে ভারতে সব আলাদা ডিপার্টমেন্ট। তাই টলিউডে কাজ করাটা অনেক আরামের। বাংলাদেশে অনেক বেশি নিজের দায়িত্বে কাজ করতে হয়। কস্টিউম কী পরব নিজেকে ভাবতে হয়, বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে আর্টিস্ট হিসেবেও মাথা ঘামাতে হয়। হলেরও সমস্যা আছে। দর্শকদের হলে যাওয়ার প্রবণতা কমে গিয়েছে। সেটা আবার ফিরিয়ে নিয়ে আসা, রুচির পরিবর্তন— এ সব নিয়ে ভাবতে হবে। একটু সময় লাগবে হয়ত। তবে ভাল ছবির জন্য সরকার অনুদান দিচ্ছে, সেটা খুব ভাল। আসলে ভাল কাজের জন্য প্রযোজকের খুব অভাব ওখানে।

‘কাস্টিং কাউচ’ বিষয়টা ইন্ডাস্ট্রিতে তো ওপেন সিক্রেট। আপনি মানবেন?
দেখুন আমাকে এ সব ফেস করতে হয়নি। কারণ আমি যখন এখানে কাজ করতে আসি তখন আমি অলরেডি বাংলাদেশের জয়া আহসান। অরিন্দমদা এখানে আমাকে লিড রোল অফার করেছিলেন। তবে এই সমস্যা দুই দেশেই রয়েছে। এ সব ঝামেলা যে হচ্ছে সেটা অন্য কলিগদের থেকে আমি শুনেছি। অনেকেই অভিনেত্রীদের কদর করার তুলনায় গ্ল্যামার বা পার্সোনাল রিলেশনটাকে অনেক বেশি মর্যাদা দিচ্ছেন। তবে আমি মনে করি, আমার কাছে যখন কেউ ছবি নিয়ে আসেন, তখন আমাকে সেই বিশেষ চরিত্রের জন্য প্রয়োজন বলেই আসেন। আমি ব্লেসড।

আপনার পরের ছবি কি শুধু অনলাইনে রিলিজ করছে?
হুম। ছবিটার নাম ভালবাসার শহর। ইন্দ্রনীল রায়চৌধুরী পরিচালনা করেছেন। আমার কাজটা করে খুব ভাল লেগেছে। ঈদের পর রিলিজ করবে।

Jaya Raj kahani‘রাজকাহিনি’তে আপনার সাহসী ডায়লগ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। চরিত্রটিও বেশ সাহসী ছিল। কিন্তু এই সাহস পর্দায় আপনি কতটা দেখাতে পারেন?
চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে অ্যাস্থেটেক্যালি কোনও কিছু প্রেজেন্ট করা হলে ভেবে দেখতে পারি।

লিপলক?
(একটুও না ভেবে) না এতটা হয়তো আমি করব না।

তা হলে তো নিশ্চয়ই ন্যুড সিনেও আপত্তি রয়েছে?
আসলে ন্যুডিটি দেখানোর মধ্যে অনেক সময় দৃষ্টিভঙ্গীর সমস্যা থাকে। অনেক সময় ন্যুডিটি দেখিয়েও সিনটা ততটা আবেদনময় দেখানো যায় না। আমরা মেয়েরা আসলে বাণিজ্যিকীকরণের উদ্দেশ্যে বহু দিন ধরেই ব্যবহৃত হয়ে আসছি। এর বাইরে ভারতও নয়, বাংলাদেশও নয়। কিচ্ছু না দেখিয়েও কোনও সিকুয়েন্সকে অনেক বেশি সেন্সেবল অ্যাপ্রোচ দেওয়া যায়।

সব ন্যুডিটিই কি খারাপ?
না। তা বলছি না। যতই হোক, আমি একজন মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারের মেয়ে। আমার মূল্যবোধ কখনওই ছাড়তে পারব না।

পরিচালক যদি আপনাকে কনভিন্স করতে পারেন?
(দৃঢ় ভাবে) না। তবুও ন্যুডিটিতে আমার আপত্তি রয়েছে।

এটা কি শিল্পী হিসেবে কোনও ট্যাবু থেকে গেল না?
না। তা নয়। আমি তো ‘রাজকাহিনি’তে বলেছি, ‘এইডা হইল ছাতি…যা দিয়ে মা সন্তানরে দুধ খাওয়ায়।’ এর মধ্যে তো অশ্লীলতার কিছু দেখি না।

টলিউডে আপনার কোনও বন্ধু আছে?
সোহিনী, সায়নী, প্রিয়ঙ্কা, সুদীপ্তাদি যারা আমার সঙ্গে ‘রাজকাহিনি’তে কাজ করেছিল তাদের সঙ্গে খুব ভাল র‌্যাপো। জানি না এটা বন্ধুত্ব কি না। আমাদের প্রায়ই দেখা হয়। আমরা সকলে সকলের পাশে আছি। এটুকু জানি।

এ দেশে এসে মন কেমন হলে কাকে ফোন করবেন?
ইন্ডাস্ট্রির বাইরের বন্ধুদের বা এখানকার আত্মীয়দের ফোন করব।

কলকাতার রাস্তায় মাঝরাতে বিপদে পড়লে?
অরিন্দমদা।

বিয়ে করছেন কবে?
(কিছুটা আনমনা) জানি না। হুট করে করে নিতে পারি, আবার নাও করতে পারি। আসলে রোডম্যাপ ঠিক করে জীবনে কিছুই করিনি তো। আগের বিয়েটা কোনও কারণে ওয়ার্ক করেনি বলে একটা ভয়ও আছে। আসলে আবার যদি বিয়ে করি সেটা সম্মানের সঙ্গে টিকিয়ে রাখার জন্য সবরকম চেষ্টা করব।

কোনও বিশেষ বন্ধু রয়েছে আপনার?
(একটু ভেবে) আছেন। তিনি ঢাকার মানুষ। কোনও ডিসিশন নিলে সকলে এমনিই জানতে পারবেন।

জীবনে প্রিয়তম মানুষ?
মা।

অবসাদ এলে কী করেন?
ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করি। প্রিয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলি।

বাংলাদেশ মানেই এখন হেডলাইনে ‘ব্লগার খুন’। কী বলবেন?
বাংলাদেশের একজন হিসেবে বিষয়টা আমার খারাপ লাগে। একই দেশে নানা রকমের মতবাদ থাকতে পারে, মতের অমিলও থাকতে পারে। সেটা নিয়ে কথা হতে পারে। কিন্তু এর জন্য কেউ কাউকে মেরে ফেলতে পারে না। এটা অন্যায়। এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক।

আপনি তো অভিনেত্রী হতে চাননি, ছোট থেকে একটা লুকনো ইচ্ছে ছিল তো। সেটা শেয়ার করবেন নাকি?
(তুমুল হাসি) হ্যাঁ। এটা ঠিক। আমি ছুতোর হতে চেয়েছিলাম। ওই যখন র‌্যাঁদা দেয় না, ওটা দারুণ লাগে। কখনও অভিনেত্রী হতে চাইনি। যতটুকু করেছি নিজেকে প্রমাণ করে করে এগোতে হয়েছে। অভিনয়ের ভিতর দিয়ে নিজের এক ধরনের মুক্তি খুঁজে পেয়েছি। তাই এখন অভিনয় ছাড়া আর কিছু ভাবতে পারি না।

সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

ad

পাঠকের মতামত