359340

করোনার আরো ভয়াবহ ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা প্লাস এসে গেছে ভারতেও

করোনা ভারতে এসে রূপ বদলে নতুন ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। শুরুতে একে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট বলা হচ্ছিলো, এই নামকরণ নিয়ে দেশটির সরকারও খুব একটা খুশি ছিলো না। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নতুন সব ভ্যারিয়েন্টের নামকরণ করে। ভারতে পাওয়া তুলনামূলক বেশি বিপদজ্জনক ভ্যারিয়েন্টের নাম দেয়া হয় ডেল্টা। করোনার মূল ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে এটি ছিলো বেশি সংক্রামক ও প্রাণঘাতী । এই B.1.617.2 স্ট্রেনটি রূপ বদলেছে, নাম রাখা হয়েছে ‘ডেল্টা প্লাস’। এই সময়, এশিয়ান নেট, কলকাতা ২৪

ডেল্টা প্লাস অনেক বেশি সংক্রামক জানা গিয়েছে এমনটাই। ৭ জুন পর্যন্ত কানাডা, জার্মানি, রাশিয়া, নেপাল, সুইজারল্যান্ড, ইন্ডিয়া, পোল্যান্ড, পোর্তুগাল, জাপান এবং আমেরিকায় দেখা গিয়েছে এই ডেল্টা প্লাস। কোভিডের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টিটি ২০২১ সালের মার্চ মাসে পাওয়া গিয়েছিল ইউরোপে।

পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ইংল্যান্ডে ৬৩ জনের শরীরে পাওয়া গিয়েছে ডেল্টা প্লাস। অন্যদিকে, ১১ জুন পর্যন্ত ভারতের ৬ জনের শরীরে পাওয়া গিয়েছে এই নতুন স্ট্রেন। এছাড়াও কানাডা, জার্মানি, রাশিয়াতে করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেনের একজন করে আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে এসেছে। এছাড়া নেপালে ২ জন, পোল্যান্ডে ৯ জন, জাপানে ১৩ জন এবং আমেরিকাতে ১৪ জন ডেল্টা প্লাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

এই স্ট্রেন কতটা সংক্রামক, সেই বিষয়ে নির্দিষ্ট কিছু তথ্য এখনও সামনে আসেনি। ভারতে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার জন্য ’ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট’কেই দায়ী করেছেন গবেষকরা। ন্যাশানাল ডিজিজ কন্ট্রোল এবং ইন্ডিয়ান SARS COV2 জিনোমিক কনসরটিয়ার এক়টি সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, করোনাভাইরাসের আলফা ভ্যারিয়েন্টের থেকে ৫০ শতাংশ বেশি সংক্রামক এই ডেলটা ভ্যারিয়েন্ট। স্বাভাবিকভাবেই ডেলটা প্লাস ডেকে আনতে পারে আরও বড় বিপদ, মনে করা হচ্ছে এমনটাই।

বিজ্ঞানীদের যে বিষয়টা ভাবিয়ে তুলেছে, তা হলো ডেল্টা প্লাস স্ট্রেন এতো শক্তিশালী, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি ককটেল ট্রিটমেন্টের (monoclonal antibody cocktail treatment) বিরুদ্ধেও টিকে থাকতে সক্ষম। এই চিকিৎসা পদ্ধতি সম্প্রতি অনুমোদন দিয়েছে ভারতের সেন্ট্রাল ড্রাগস স্ট্র্যান্ডার্ড কন্ট্রোল অর্গানাইজেশন (Central Drugs Standard Control Organization বা CDSCO)।

ভারতের জিনোম সিকোয়েন্সিং বিশেষজ্ঞদের একজন বলেছেন, ডেল্টার (B.1.617.2) এই সিকোয়েন্সের স্পাইক মিউটেশন K417N পাওয়া যেতে পারে GISAID-এর মধ্যে। এখনও পর্যন্ত ১০টি দেশে এই জিনোনেম খুঁজে পাওয়া গিয়েছে। এই সিকোয়েন্স সম্প্রতি নতুন বংশোবিস্তার করেছে যেটি হল AY.1 (B.1.617.2.1)। এটি ডেল্টারই বংশের ভাইরাস (sub lineage)। K417N হল এমন একটি মিউটেশন যা বিটা ভ্যারিয়েন্টের (B.1.351) মধ্যেও পাওয়া যায়।

পাব্লিক হেল্থ ইংল্যান্ড তার সাম্প্রতিকতম তথ্যে জানিয়েছে, ৭ জুন পর্যন্ত ভারতে ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্ট ৬টি জিনোমের (genomes) মধ্যে পাওয়া গিয়েছে। স্বাস্থ্য সংস্থা এও জানিয়েছে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের ৬৩টি জিনোম রয়েছে যার মধ্যে নতুন K417N মিউটেশন উপস্থিত। দিল্লির CSIR এবং ইনস্টিটিউট অফ জেনোমিক্স অ্যান্ড ইন্টেগ্রেটিভ বায়োলজির (IGIB) এক বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, দ্রত সংক্রমিত হওয়া ভ্য়ারিয়েন্ট B.1.617.2.1, যা AY.1 হিসেবে পরিচিত, সেখানে K417N মিউটেশন রয়েছে। এর জন্য SARS-COV-2 ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনই দায়ী। এটি হল সেই স্পাইক প্রোটিন যা মানুষের কোষে প্রবেশ করে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটায়। যদিও বর্তমানে ভারতে K417N খুব বেশি ছড়ায়নি। বরং ইউরোপ, এশিয়া ও আমেরিকাতে এর সংক্রমণ বেশি দেখা যাচ্ছে। ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টের কোনও রোগী এখনও ভ্রমণ করেছে বলেও খবর আসেনি। প্রকৃতপক্ষে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, জাপান, পর্তুগাল, পোল্যান্ড, তুরস্ক, নেপাল এবং সুইজারল্যান্ডের মতো ভারত ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে এই সিকোয়েন্সেরগুলি খবর পাওয়া যাচ্ছে।

 

ad

পাঠকের মতামত