348761

দুধ বিক্রি করলে বাছুর, রেজিস্ট্রি করলে বর-কনে মরে!

কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মজিদপুর গ্রামে গাভীর দুধ বিক্রি করলে বাছুর মরে যায় আর বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি করলে বর-কনে মরে যায় এই কুসংস্কার চলছে দুইশ‘ বছরের বেশি সময় ধরে।

মজিদপুর গ্রামের পূর্বপাড়ার আশোক আলী বলেন, কখনও গরুর দুধ বিক্রি করেননি, দুধ বিক্রি করলে বাছুর মারা যায়। আশোক আলীর মতো হাজী বংশের আরও ৮০টি পরিবার গাভীর দুধ বিক্রি করেন না। এমনকি বর-কনে মারা যাবে এই কুসংস্কারে বিয়ের কাবিনও করতেন না তারা। তবে সম্প্রতি তারা বিয়ের কাবিন রেজিস্ট্রি করান বলে জানান আশোক আলী।

মজিদপুর গ্রামের হাজী বংশের ১২০টি পরিবার বসবাস করে। বেশির ভাগ পরিবারের জীবিকার অন্যতম মাধ্যম গরু মোটাতাজাকরণ ব্যবসা। দুধ বিক্রি করতে না পারার কারণে এখন বেশিরভাগ পরিবার গাভী পালন বন্ধ করে দিয়েছি। এখন মাত্র ৩০ পরিবার গাভী পালন করছে। এই সকল গাভীর যে পরিমাণ দুধ পাচ্ছে তা নিজেরা পান করে, বাকিটা স্বজনের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন।

সাইফ খান সফর নামের এক ব্যক্তি জানান, তার বাবা গাভী পালন করলেও কখনো দুধ বিক্রি করতে দেখেননি। বাবা-দাদাদের কাছ থেকে এর কারণ জানতে চাইলে তারা জানান, গরুর দুধ বিক্রি করার কারণে তাদের বাছুর মারা যেতো। এই ভয়ে আমরা আজও গরুর দুধ বিক্রি করি না। ২০০শত বছরের বেশি সময় ধরে এই নিয়ম আমাদের বংশে বিরাজমান।

একই বংশের প্রবীণ ব্যক্তি আকবর আলী (৭৭) জানান, আমার বাবা ওমোদ আলী, বড় বাবা আড়াই প্রধান, বড় দাদা পাচুঁ প্রধান, পরি বাবা বাদল, পরি দাদা দৈলা গাজীর আমল থেকে প্রায় ২০০শ’ বছর দুধ বিক্রি করেনি বাছুর মরে যাবে বলে।

আকবর আলী আরও বলেন, আমার চার ছেলেকে আমি বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কাবিন রেজিষ্ট্রি করালে নাকি বর-কনে মারা যায়, এই ভয়ে আমি কোনো ছেলের বিয়েতে কাবিন রেজিষ্ট্রি করাইনি।

মজিদপুর গ্রামের গৃহবধূ ইরন বিবি বলেন, ‘আমার বিয়ে হয়েছে প্রায় ২৫ বছর। কখনও দেখিনি আমার শ্বশুর কিংবা স্বামীকে গরুর দুধ বিক্রি করতে।’

স্থানীয় ওর্য়াড মেম্বার মো. আমিন (৭৫) বলেন, এই প্রথাটি তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি।

উপজেলা প্রাণী ও পশুসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবদুল মান্নান জানান, বর্তমানে এ সমস্ত কথা হলো আজগুবি, যার কোনোভিত্তি নেই। তাদের এই ধারণা থেকে বের করতে হবে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত প্রক্ষিণের মধ্য দিয়ে।

তিতাস উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসা. রাশেদা আক্তার বলেন, বিজ্ঞানের যুগে মানুষ এ ধরনের ধ্যান ধারণা পোষণ করে তা অবাক করার মতো বিষয়। তাদের আলোর পথে আনতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এই বিষয়ে উপজেলা প্রাণী ও পশুসম্পদ কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি। তিনি তাদের সচেতন করার বিষয়ে কাজ করবেন।’

মংঘলকান্দি ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মো. নুরুল আমিন বলেন, ‘এটি সম্পূর্ণ কুসংস্কার। তাদের ভুল পথ থেকে ফিরে আসা প্রয়োজন।’

ad

পাঠকের মতামত