348536

যেসব কারণে ইসরাইলের টার্গেটে পরিণত হয়েছিল মোহসেন ফাখরিজাদেহ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ইরানের শীর্ষ স্থানীয় পরমাণুবিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যার জন্য ইসরাইলকে দায়ী করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। একই সঙ্গে হত্যার বদলা নেয়ার হুমকি দিয়েছেন ইরানের ধর্মীয় নেতারা ও সেনাবাহিনী। শুক্রবার রাজধানী তেহরানের কাছে নিজের গাড়িতে থাকা মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যা করে অস্ত্রধারীরা।

তাকে হত্যার জন্য ইরান যেমন ইসরাইলকে দায়ী করছে, তেমনি মোসাদের ঘনিষ্ঠ এক ইসরাইলি সাংবাদিকের টুইট রি-টুইট করেছেন ইসরাইলের দিকে হত্যার ইঙ্গিত করেছেন ট্রাম্প। এছাড়া ফাখরিজাদেহকে হত্যার পেছনে ইসরাইলের হাত রয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের একজন সরকারি কর্মকর্তা ও দুজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন। খবর নিউইয়র্ক টাইমস, রয়টার্স, বিবিসির।

পশ্চিমাদের চোখে ইরানে ‘গোপনে পারমাণবিক বোমা কর্মসূচির’ মূল কারিগর ফাখরিজাদেহকে দীর্ঘদিন ধরে অনুসরণ করে আসছে মোসাদ। এ কারণে নতুন করে উত্তেজনার পারদ উপরে উঠছে। শুক্রবার হত্যার ঘটনার পর থেকে ক্ষোভে ফুঁসছে ইরান। প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছে মানুষ।

ইসরাইলকে উদ্দেশ করে প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি বলেছেন, আবারও ঔদ্ধত্যবাদী দখলদার জায়নিস্ট শাসকগোষ্ঠীর হাত রক্তে রঞ্জিত হল। আমাদের শত্রুরা কতটা হতাশ ও তাদের ঘৃণা কত গভীরে তা আরও একবার দেখিয়ে দিয়েছে ফাকরিজাদেহকে হত্যার মধ্য দিয়ে। তার শাহাদাত আমাদের অর্জনকে ধীরগতি করবে না।

উল্লেখ্য, মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যা আবারও ইরান ও তার শত্রুদের মধ্যে বিরোধ নতুন মাত্রা যোগ করবে। ইরানের প্রেসিডেন্ট, ধর্মীয় নেতা ও জেনারেলরা ছাড়াও দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ এবং জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি দূত যেভাবে হামলার পেছনে ইসরাইলকে দায়ী করছেন, তাতে এ কী প্রতিক্রিয়া দেখায় তেহরান সেটাই দেখার বিষয়।

কারণ, পরমাণুবিজ্ঞানীর পাশাপাশি বিজ্ঞানের অন্যান্য ক্ষেত্রে ফাখরিজাদেহকে নিজেদের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ মনে করত ইরান। করোনার ধাক্কার প্রক্কালে ইরানের জন্য করোনা কিট উদ্ভাবনেও তার ভালো ভূমিকা ছিল। জাভেদ জারিফ বলেছেন, হামলায় ইসরাইল জড়িত থাকার যথেষ্ট ইঙ্গিত রয়েছে। তিনি এ হামলার নিন্দা জানানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানি দূত মজিদ তখত রাভঞ্চি বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এতে করে এ অঞ্চলে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার ক্ষমতার মেয়াদে শেষ প্রান্তে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রতি অনুগত নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের জন্য ট্রাম্প এ সময়ে অনেক বিষয়কে জটিল করে যাচ্ছেন।

এর মধ্যে ইরান, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র নতুন উত্তেজনার মুখে পড়বে বিজ্ঞানী হত্যার মধ্য দিয়ে। দেখার বিষয়, হত্যার ঘটনার পরপরই যেভাবে ইরানি বিজ্ঞানী হত্যায় মোসাদ জড়িত বলে দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্র, তাতে এমন প্রশ্ন অবান্তর নয় যে হামলার পরিকল্পনা আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র জানত কিনা।

কারণ, কিছুদিন আগে ইরানে সরাসরি হামলার সম্ভাব্যতা জানতে চেয়েছিলেন ট্রাম্প। তখন পেন্টাগনের শীর্ষকর্তারা তাতে মত দেননি। ফলে সেখান থেকে সরে এসে ইসরাইলের সঙ্গে পরিকল্পনা করে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে কিনা- এমন সন্দেহ দেখা দেয়া অযৌক্তিক নয়। কারণ, ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্র ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং তারা পরস্পরের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্যবিনিময় করে থাকে।

তবে অতর্কিতে হামলা করে ইরানি বিজ্ঞানীর হত্যার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস ও সিআইএ। ফাখরিজাদেহ ছিলেন সর্বাধিক খ্যাতিমান ইরানি পরমাণু বিজ্ঞানী এবং অভিজাত ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোরের সিনিয়র অফিসার। তার ব্যাপারে পশ্চিমা সুরক্ষা সূত্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে বলে আসছে যে, ফাখরিজাদেহ ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির অত্যন্ত শক্তিশালী এবং সহায়ক একজন ব্যক্তি।

২০১৮ সালে ইসরাইলের থেকে পাওয়া গোপন নথি অনুসারে তিনি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির একটি কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন। সে সময় ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন যে তিনি ফাখরিজাদেহ ইরানের পরমাণু কর্মসূচির প্রধান বিজ্ঞানী বলে মনে করেন এবং তার ‘এই নামটি মনে রাখার’ আহ্বান জানিয়েছিলেন।

ad

পাঠকের মতামত