348498

নেপালের রাজনীতিতে কলকাঠি নাড়াচ্ছেন চীনা রাষ্ট্রদূত!

ক্ষমতাসীন নেপাল কমিউনিস্ট পার্টিতে (এনসিপি) অন্তঃদ্বন্দ্ব নজিরবিহীন উচ্চতায় পৌঁছেছে। দলটি ভেঙে যাওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। আর তাতে করে কাঠমান্ডুর সরকারের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।

সবার নজর প্রধানমন্ত্রী খড়গ প্রাসাদ শর্মা ওলির ওপর। তিনি এনসিপির চেয়ারপারসনও। দলের কো-চেয়ার পুষ্প কমল দহল প্রচণ্ডের দাখিল করা একটি নথির জবাব দিতে ওলিকে ১০ দিনের সময় দিয়েছে এনসিপি সচিবালয়। ওলির বিরুদ্ধে প্রচণ্ডের অভিযোগ, তিনি দলের রীতিনীতির তোয়াক্কা করছেন না, অতীতে সমঝোতা হওয়া ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তিগুলোর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করছেন না।

অভিযোগের জবাব দিতে ২৮ নভেম্বর ওলি দলের সচিবালয়ে উপস্থিত থাকবেন বলে কথা রয়েছে। অতীতে তিনি দলের সভায় উপস্থিত থাকা এড়িয়ে গেছেন। শনিবারও তিনি একই কাজ করতে পারেন।

গত সপ্তাহজুড়ে তিনি ব্যস্ত ছিলেন দলের মধ্যে তার সমর্থন বাড়াতে। তিনি তার দলের বাইরে থেকেও সমর্থন যোগার করার চেষ্টা করছেন। তিনি নেপালি কংগ্রেসের (এনসি) সভাপতি শের বাহাদুর দিউবার সাথেও সাক্ষাত করেছেন। অবশ্য ওলির মুখপাত্ররা বলছেন যে সাংবিধানিক বিভিন্ন পদে নিয়োগ নিয়েই এই সাক্ষাত হয়েছে। কিন্তু তবুও এই জল্পনা উস্কে দিয়েছে যে তিনি এনসিপি ভেঙে গেলে বিরোধী এনসির সমর্থন নিয়ে তিনি জোট সরকার গঠন করতে পারেন।

এনসিপি গঠিত হয়েছিল ২০১৮ সালে। নেপালের দুটি বৃহত্তম বামপন্থী দল ওলির নেতৃত্বাধীন কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল (ইউনিফায়েড মাক্সিস্ট-লেনিনিস্ট) ও দহলের নেতৃত্বাধীন কমিউপনিস্ট পার্টি অব নেপাল (মাওয়িস্ট সেন্টার) একীভূত হয়েছিল তখন। দৃশ্যত, দুই দল গোপন এক সমঝোতায় এসেছিলেন এই মর্মে যে ওলি ও দহল এনসিপি সরকারের ৫ বছর মেয়াদে যৌথভাবে নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু ওলি আড়াই বছরের মধ্যেও দহলের জন্য কোনো সুযোগ দেননি।

এমনকি দহলের হাতে তিনি দল পরিচালনার ক্ষমতাও প্রদান করেননি। গত আগস্টে এনসিপি স্থায়ী কমিটির নিয়োগ করা টাস্ক ফোর্স এই অচলাবস্থা নিরসনে কিছু সুপারিশ প্রণয়ন করেছিল। এতে গত বছরের নভেম্বরের চুক্তিটির নতুন সংস্করণ প্রণয়নের কথা বলা হয়। কিন্তু দুই পক্ষ এখনো এতে সম্মত হয়নি।
অবশ্য, অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি। টাস্ক ফোর্সের সুপারিশমালা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে অন্তঃদ্বন্দ্ব আবার ছড়িয়ে পড়েছে।

কেবল দহলই ওলির প্রতি ক্ষুব্ধ এমন নয়। তার সিপিএন-এমসির একজন সদস্যও নেই, যিনি আরো ক্ষমতা চান না। ওলির আজকের সমালোচকেরা সিপিএন-ইউএমএলের পুরনো কমরেড। দহলের বিরুদ্ধে ওলির সাবেক মিত্র মাধব কুমার নেপাল এখন দহলের পাশে দাঁড়িয়ে ওলির পদত্যাগ দাবি করছেন।

নেপালের গণতান্ত্রিক রাজনীতি এখন সমস্যায় পড়েছে। উচ্চাভিলাষী রাজনীতিবিদেরা জোট ভাঙছেন, ভয়াবহ পরিণতির শঙ্কা নিয়ে সরকারের পতন ঘটাচ্ছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০০৮ সাল থেকে নেপাল ১১ জন প্রধানমন্ত্রী পেয়েছে।

নেপালের ২৭৫ আসনবিশিষ্ট পার্লামেন্টে এনসিপির আসন ১৭৩টি। ওলির প্রতি পার্লামেন্টে ৭৭ জনের সমর্থন আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। দহল ও নেপালের প্রতি সমর্থন আছে ৯৬ জনের। ফলে এনসিপি ভেঙে গেলে ওলির সরকার সমস্যায় পড়বে।

৬০টি আসন নিয়ে এনসি কিং-মেকারে পরিণত হতে পারে। সমস্যা হলো, এনসিও বিভক্ত দল। দলে দিউবার স্বৈরতান্ত্রিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অনেক সমালোচক রয়েছে। এনসিপির বিভক্তির ফলে এনসিতেও টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে ওলি না দহল কার প্রতি সমর্থন দেয়া হবে, তা নিয়ে দোটানা দেখা দিতে পারে।

এদিকে নেপালের দুই বৃহৎ প্রতিবেশী ভারত ও চীন অস্তিত্বের লড়াইয়ে থাকা সরকারকে প্রলুব্ধ করতে ব্যস্ত।
ওলি তার অপঃশাসন থেকে মনোযোগ সরাতে ভারতবিরোধী নেপালি জাতীয়তাবাদের আশ্রয় গ্রহণ করেছিলেন।

তবে এখন মনে হচ্ছে, ভারতের সাথে কোনো না কোনোভাবে আপসরফা করেছন। বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে নেপাল ও ভারত সরকারের মধ্যে গত কয়েক মাসে উচ্চপর্যায়ে বেশ কিছু সফর বিনিময়ে। ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তিনি কী বার্তা পাচ্ছেন, তাও তিনি এনসিপি নেতাদের বলছেন না।

এদিকে কাঠমান্ডুতে চীনা দূতাবাস রাজনৈতিক সঙ্কটে আরো প্রকাশ্যে হস্তক্ষেপ করছে। নেপালে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত হুয়ো ইয়ানকি নেপালের অন্তঃদ্বন্দ্ব দূর করার চেষ্টা করছেন বলে খবরে প্রকাশ। খবরে প্রকাশ হুয়োর সাথে ১৮ নভেম্বর একটি বৈঠকের পরই এনসিপি সচিবালয়ের বৈঠকে হাজির হতে রাজি হয়েছেন ওলি।

দিল্লি ও বেইজিংয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা আবার নেপালে ফিরছেন। এনসিপি সচিবালয় বৈঠকের আগ দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা কাঠমান্ডু সফর করেছেন। ওই বৈঠকের এক দিন পর চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওয়ে ফেঙ্গি নেপালের রাজধানীতে যাচ্ছেন।

শ্রিংলা ও ওয়ের বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা গুরুত্ব পেলেও কাঠমান্ডুর রাজনৈতিক সঙ্কটও তাদের মনোযোগ সম্ভবত এড়াবে না।

সূত্র : দি ডিপ্লোম্যাট

ad

পাঠকের মতামত