348215

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের আতঙ্কের মাঝেই বাড়ছে মাস্কের দাম

ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে শীত। সেই সঙ্গে বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ের (ওয়েভ) আতঙ্ক। শীত আর করোনার সেকেন্ড ওয়েভকে ঘিরে মাস্কের দাম বাড়তে শুরু করেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রকারভেদে প্রতিটি মাস্কের দাম দুই থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বক্সপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত।পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে মাস্কের দামের এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এদিকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের পক্ষ থেকে মাস্ক ব্যবহারের বাধ্যতামূলক নির্দেশনা রয়েছে। আবার মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিত করতে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলছে। অভিযানে জরিমানার পাশাপাশি মাস্কও বিতরণ করা হচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করেই মাস্কের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে জনসাধারণ ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের মুনাফালোফী মনোভাবকে’ দায়ী করছেন।

সরকারের অব্যাহত অভিযান ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের কারণে রাজধানীতে গণপরিবহনের যাত্রী থেকে শুরু পথচারী ও ব্যবসায়ীসহ সব শ্রেণির মানুষের মাঝে মাস্কের ব্যবহার বাড়ছে। যারা নিয়মিত মাস্ক ব্যবহার করতেন না কিংবা অনীহাবোধ করতেন তারাও বাধ্য হয়ে মাস্ক ব্যবহার করছেন। আবার শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে করোনা বিস্তারের বিষয়ে দুশ্চিন্তায়ও আছেন অনেকে। মাস্কের বাধ্যতামূলক ব্যবহারের সঙ্গে চাহিদা বৃদ্ধির সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে বলেও ক্রেতা-বিক্রেতারা অভিযোগ করছেন।

সংকট নেই জানিয়ে রাজধানীর পল্টন এলাকার পাইকারি মাস্ক ব্যবসায়ী মাহমুদ বলেন, ‘আমরা ব্যবসায়ী, দাম বাড়লে আমরা কী করবো? বাজারে তো মাস্কের সংকট নেই কিন্তু তারপরও দাম বাড়ছে। এক সপ্তাহ আগেও মানুষ কম দামে মাস্ক কিনেছে, আমরাও বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন এক বক্স মাস্কের দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তাহলে আমরা তো বেশি দামেই বিক্রি করব। যারা তৈরি করে কিংবা আমদানি করে তারাই মাস্কের দাম বাড়ার বিষয়ে ভালো জানে। তবে দাম বাড়লেও শীতের কারণে করোনা বাড়ছে এ আতঙ্কে মানুষ মাস্ক কিনছে; তবে কম করে কিনছে।’

রাজধানীর বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) মার্কেটের সামনে অন্তত পাঁচজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়।

তারা বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও চারটি মাস্ক ১০ টাকায় বিক্রি করেছি কিন্তু এখন পারছি না। বক্সপ্রতি দাম বেড়ে যাওয়ায় দুটি মাস্ক ১০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। আসলে দাম বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের দেশের বাজে সংস্কৃতি হয়ে গেছে। এখন শীতের সময় করোনা বাড়ছে বলে শুনছি আবার সরকারও মাস্ক ব্যবহার করতে নির্দেশনা দিয়েছে। সেই সুযোগে আমদানিকারক, উৎপাদকরা মাস্ক মজুত করে দাম বাড়াচ্ছে বেশি মুনাফার লোভে। তাছাড়া তো কোনো কারণ দেখি না।’

বিক্রেতারা জানান, সার্জিক্যাল মাস্ক ও এন-৯৫ মাস্কের সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে। ৫০টি মাস্কের এক বক্স সার্জিক্যাল মাস্ক ৭০-৮০ টাকা এবং ১০টির এন-৯৫ মাস্কের প্যাকেট ২০০-২২৫ টাকা পাইকারি দামে বিক্রি করেছি। কিন্তু এখন সার্জিক্যাল মাস্ক ১২০ থেকে ১৫০ টাকা এবং এন-৯৫ মাস্ক ২৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।

কথা হয় মাস্ক কিনতে আসা এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘দাম বাড়লে আমাদের কী করার আছে? আমাদের তো মাস্ক পরেই বাইরে বের হতে হয়। এক সপ্তাহ আগেও এক বক্স মাস্ক ১০০ টাকা দিয়ে কিনেছি, এখন ১৩০-১৫০ টাকার নিচে তো কিনতে পারছি না। সার্জিক্যাল, এন-৯৫ ও কাপড়ের তৈরিসহ সব ধরনের মাস্কের দাম বেড়েছে। আমার মনে হয়, এভাবে সাধারণ মানুষকে জিম্মি না করে সরকারি নিয়ন্ত্রণে মাস্কের সরবরাহ নিশ্চিত করা উচিত। করোনার মাঝে মানুষের আয় নেই, আবার মাস্কও পরতে হচ্ছে। তাহলে এই মানুষগুলো কীভাবে কয়েক দিন পর পর বেশি দাম দিয়ে মাস্ক কিনবে? এসব তো কষ্টের!’

বাসের মধ্যে হকারের কাছ থেকে মাস্ক কিনছিলেন জাকির হোসেন। জানতে চাইলে দামের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই বাইরে বের হতে হয়। দাম বাড়লেও কিনতে হবে, আবার কমলেও কিনতে হবে। আমাদের তো আর কোনো সুযোগ নেই।’

এ বিষয়ে মাস্ক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান মেডিকেল মার্কেট বিডি’র মালিক মো. বেলায়েত বলেন, ‘মাস্কের দাম তো আগেও বেশি ছিল। মাঝে একটু কমেছিল। এখন আবার আমদানি বন্ধ থাকায় পর্যাপ্ত জোগান নেই। আগের মাস্ক নিয়েই ব্যবসা করতে হচ্ছে। কারণ, আগে আমদানিকৃত যে মাস্ক রয়েছে তার ২০ শতাংশও বিক্রি হয়নি। এখন মাস্কের ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় হয়তো দাম কিছুটা বেড়েছে।’

সূত্র: জাগো নিউজ

ad

পাঠকের মতামত