348184

করোনার প্রভাবে ডেকোরেটর ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরা এখন তরকারি বিক্রি করে

প্রথম দফায় করোনার রেশ কাটতে না কাটতে দ্বিতীয় দফায় বাড়ছে করোনার প্রাদুর্ভাব। এতে উত্তর জনপদের ডেকোরেটর ও মাইক ব্যবসায় নেমেছে ধস। করোনা মহামারিতে বিয়ে, সুন্নতে খাতনা, জন্মদিন, আকিকা, হালখাতা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি অফিসে নানা দিবস পালনসহ সভা-সমাবেশ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ থাকায় রংপুরে ডেকোরেটর, লাইটিং, মাইক ও ভিডিও ব্যবসায় জড়িতরা মানবেতর জীবন-যাপন করছে। দেশে করোনার প্রথম দফার ঝুঁকি কমতে না কমতে আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে করোনার ঝুঁকি। এতে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম হয়েছে অনেকের। আবার এ ব্যবসায় আয় রোজগার বন্ধ থাকায় ব্যবসার ধরন বদলেছে অনেক মালিক শ্রমিক।

সরেজমিমে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভাগীয় নগরী রংপুরে ছোট-বড় দুই শতাধিক ডেকোরেটের দোকান রয়েছে আর মাইক ও সাউন্ডের দোকান রয়ে দেড় শতাধিক। এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত লাইটিং ও ভিডিওর দোকান রয়েছে শতাধিক। এই করোনাকালে এখন পর্যন্ত তারা সরকারি কোনও অনুদান বা সহযোগিতা না পাওয়ায় মালিক ও শ্রমিকরা পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে।

ডেকোরেটর ও মাইকের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের অনেকেই ফল, সবজি কেউ আবার মাছ বিক্রি করে সংসারের হাল ধরেছেন। এর মধ্যে অনেকে রাস্তায় রাস্তায় হকারি করে কাপড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। রংপুর জেলা দোকান মালিক সমিতির তথ্যমতে জেলার আট উপজেলাসহ এ ব্যাবসায় জড়িত মালিক শ্রমিক প্রায় তিন হাজার মানুষ।

নগরীর এক নম্বর ওয়ার্ড হাজিরহাটর বাজারের ডেকোরেটের ব্যবসায়ী সামসুল আলম জানান, প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে শুরু হয় বিয়ে, সুন্নতে খাতনা, জন্মদিন, আকিকা, হালখাতা, ধর্মীয় অনুষ্ঠানসহ সভা-সমাবেশ হয়ে থাকে। বছরের আট মাস চলে গেলেও এখনও ডেকোরেটর ব্যবসায় কোনও সাড়া নেই। সবকিছু থমকে আছে।

পীরগঞ্জ উপজেলার ডেকোরেটর শ্রমিক সোহেল রানা জানান, করোনার প্রভাবে সকল প্রকার অনুষ্ঠান প্রায়ই বন্ধ রয়েছে। দু-একটি অনুষ্ঠান হলেও প্রশাসনের অগোচরে ঘরোয়াভাবে হওয়ায় ডেকোরেটরের আর প্রয়োজন হচ্ছে না। ফলে মালিকসহ শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ছে।

দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার জেরে বহু মাইক ব্যবসায়ীর মাইকের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পড়ে পড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় ধুলোর আস্তরণ জমে হাজার হাজার টাকায় অ্যামপ্লিফায়ার, সাউন্ড সিস্টেমসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মাইক ব্যবসায়ীরা অনেকেই যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তির টাকাও সময় মতো এখন জমা দিতে পারছেন না।

রংপুর নগরীর অনুপম মাইকের মালিক মতি জানান, করোনাকালীন লকডাউনের সময় আমাদের দোকানপাট বন্ধ ছিল। বর্তমানে দোকান খুললেও সকল প্রধান অনুষ্ঠানাদি বন্ধ রয়েছে। করোনার প্রভাবে ব্যবসা বন্ধ থাকায় বর্তমানে এই কাজের সঙ্গে জড়িত মালিক ও শ্রমিকরা কাজ না থাকায় মানবেতর জীবন-যাপন করছে। প্রথম দফায় করোনার রেশ কাটতে না কাটতে আবার করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ায় এবং এখন পর্যন্ত সরকারি কোনও সহযোগিতা না পাওয়ায় কর্মচারীদের নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় দিন কাটাতে হচ্ছে। আবার অনেকে কাজ ছেড়ে চলে গেছে অন্যত্র। কেউ করছে হকারি কিউ বা বিক্রি করছে তরকারি। এভাবে চললে হয়তো ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে এ আশঙ্কায় দিন কাটছে তাদের।

বদরগঞ্জ উপজেলায় মাইক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত শ্রমিক শ্যামল দাস বলেন, মালিক দোকান খুলছেন না। দোকান না খুললে কাজ হবে না। তাই কী আর করব, বাধ্য হয়ে স্থানীয় একটি মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি কিনে বাড়ি বাড়ি নিয়ে যাচ্ছি। তাতে দুই পয়সা রোজগার হচ্ছে। সেটা দিয়েই সংসার চলছে।

নগরীর ভিডিও গলির স্পট ভিডিও মালিক সাগির আহম্মেদ জানান, এই করোনাকালীন সময়ে বিয়ে, জন্মদিন, আকিকা, সভা-সমাবেশ বন্ধ তাই দোকানে ভিডিও ক্যামেরাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত জেলায় এক হাজার শ্রমিক কর্মচারীরা বেকার বসে আছে। তাই তারা তাদের ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের কাছে এককালীন অনুদান প্রদানের দাবি জানান।

রংপুর মেট্রো পলিটন চেম্বারের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মিলন বলেন, ‘করোনা মহামারীতে ডেকোরেটর ও মাইক ব্যবসায়ীরা তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খাদ্য সহায়তা প্রদান করেছেন এবং জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে কয়েক টন চাল বিতরণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে তাদের ব্যবসার ধারা অব্যাহত রাখতে এখন পর্যন্ত আর্থিক কোনও প্রণোদনা প্রদান করা হয়নি।

রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান জানান, করোনাকালীন সময়ে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যাবসায়ী সংগঠনকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের। মাইক, ভিডিও, লাইটিং ও ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে আর্থিক প্রণোদনার সহায়তা চেয়ে আবেদন করেছেন। যদি সরকার থেকে কোনও সহায়তা আসে তা সঙ্গে সঙ্গেই তাদের দেওয়া হবে।ৎ

সূত্র: আরটিভি অনলাইন

ad

পাঠকের মতামত