347759

বিধবা হলেন তিন অন্তঃসত্ত্বা কিশোরী বউ, গ্রামজুড়ে আহাজারি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার নসিমন উল্টে নি’হত বালিয়াদিঘী গ্রামের আট পরিবারে চলছে শোকের মাতম। গত বৃহস্পতিবার ভোরে ধান কেটে বাড়ি আসার পথে ধানসহ নসিমনে থাকা ১৫ জন শ্রমিক সড়কের ধারে গর্তে উল্টে পড়েন। এ ঘটনায় নি’হত আটজনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয় বৃহস্পতিবার দুপুরে।

একই গ্রামের ১৫ জনের মধ্যে আটজনের প্রাণহীন দেহ গ্রামে ফেরে। এ ঘটনায় বালিয়াদিঘীগ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্বজনদের আহাজারিতে দেখতে যাওয়া মানুষদের চোখেও নেমে আসে পানি।

নি’হতদের প্রত্যেক পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হয় বলে জানান শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাকিব আল রাব্বী।

নি’হতদের মধ্যে কিশোর মিজানুর রহমান মিলু, মিঠুন ও আহাদের বিয়ে হয়েছিল কয়েক মাস আগে। আসমা, আমেনা বেগম ও মিঠুনের স্ত্রী- তিনজনই অন্তঃসত্ত্বা। মুহূর্তের ঘটনায় স্বামী হারিয়ে তারা হয়ে গেলেন বিধবা। শোকে কাতর তারা। এদের পরিবারের মা, দাদি ও স্ত্রীরা কাঁদতে কাঁদতে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার শাহবাজপুর ইউনিয়নের বালিয়াদিঘী গ্রামে কবরস্থানে জানাজার জন্য একের পর এক মরদেহগুলো নিয়ে যাওয়ারর সময় মনে হচ্ছিল যেন লাশের মিছিল। ৭ জনের বসবাস একই এলাকায়। তাদের জানাজা, কবর একই জায়গায়। পাশাপাশি কবর দেয়া হয় সাতজনকে। বাড়ি থেকে ২২ দিন আগে বারিয়াদিঘী গ্রামের ১৫ জন একসাথে ৭৩ কিলোমিটার দূরে গিয়েছিলেন শ্রমিক হিসেবে ধান কাটতে। তারা একইসাথে ফেরার পথে বাড়ি থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরে প্রাণ হারায় বাবা-ছেলেসহ আটজন।

বৃহস্পতিবার ভোরে এ ঘটনায় মারা যান চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বালিয়াদিঘী গ্রামেরই ৭ জন। এদের মধ্যে নি’হত তাজেমুল হক ও তার ছেলে মিঠুন ,আবুল কাশেদ, বাবু, কারিম, মিজানুর রহমান মিলু ও লাওঘাটা গ্রামের আতাউর রহমান ও আহাদ আলী।

নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলার শিবপুর চৌরহাট গিরিসা গ্রামে ২২ দিন আগে অন্যের জমিতে শ্রমিক হিসেবে ধান কাটতে যান তারা। বুধবার রাত ১২টায় সেখান থেকে সবার পারিশ্রমিকের প্রায় দেড়শ মন ধান নিয়ে নসিমনে বোঝাই করে সেই নসিমনেই চড়ে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। বৃহস্পতিবার ভোরের আলো না ফুটতেই ভাঙ্গা সড়কে নসিমনের চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে সড়কের পাশে গর্তে পড়ে যায়। নিভে যায় জীবনের আলো। ধানবোঝাই নসিমনের নিচে চাপা পড়ে মারা যান ৭ জন। পরে আরো একজনসহ ৮ জন প্রাণ হারান।

নি’হত আহাদের মা তৈফুল বেগম ও মিঠুনের স্ত্রী বলছিলেন, ৩০ মিনিট আগেও ফোন করে আহাদ ও মিঠু জানায় কয়েক মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবো বাড়ি।

ad

পাঠকের মতামত