347370

প্রেমিক-প্রেমিকা সেজে সড়কে ঘুরে ঘুরে ছি’নতাই

চট্টগ্রাম নগরে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন নাছির, রাজু ও সেলিম। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) রাত ৮টার দিকে নগরের জয় পাহাড়ের ভেতর দিয়ে তারা কর্মস্থল থেকে বাসায় ফিরছিলেন। সার্সন রোডে সিজিএস স্কুলের পাশা আসা মাত্রই সিএনজি অটোরিকশা থেকে নেমে সেলিমের পথ রোধ করেন এক তরুণী। এ সময় কিছু বুঝে উঠার আগেই অপর এক তরুণ সেলিমের বুকে, পেটে ও উরুতে ধারালো ছোরা দিয়ে জখম করেন। এরপর তার মোবাইল ফোন নিয়ে আবারও অটোরিকশা যোগে পালিয়ে যান ওই তরুণ-তরুণী।

গত তিন দিনে চট্টগ্রাম নগরে এরকম অন্তত সাতটি ছি’নতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে দুটি ঘটনায় গুরুতর জখম হয়ে দুজন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। দুটি ঘটনায়ই নগরের কোতোয়ালি থানায় মামলা হয়েছে। অভিযোগ পেয়ে মঙ্গলবার রাতভর অভিযান চালিয়ে নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ১৩ ছি’নতাইকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতার ছি’নতাইকারীদের মধ্যে দুই নারী ও পাঁচ কিশোর রয়েছে।

এদিকে কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জ এলাকায় সংঘটিত একটি ছি’নতাইয়ের ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ হাতে এসেছে। এতে দেখা যায়, আগের ঘটনার মতোই এক তরুণী সিএনজি অটোরিকশা থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছেন। মোবাইল হাতে এক পথচারী পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ ওই তরুণী পথচারীকে সামনে থেকে আগলে ধরতেই তার সঙ্গে থাকা আরেক তরুণ ছোরা দিয়ে পথচারীকে আঘাত করতে থাকেন। একপর্যায়ে গু’রুতর জ’খম পথচারীর হাত থেকে মোবাইলটি ছিনিয়ে নিয়ে ওই তরুণ-তরুণী পালিয়ে যান।

অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা ছু’রিকাঘা’তে আ’হত যুবককে হাসপাতালে পাঠাই। পরে খোঁজ নিতে গিয়ে ওই সিসিটিভি ফুটেজ আমাদের হাতে আসে।

তিনি বলেন, প্রথমে বিষয়টি দেখে আমাদের কাছে মনে হয়, এটি কোনো নারীঘটিত ঘটনা। কিন্তু পরে বুঝতে পারি, এটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দেয়ার কৌশল। এর পরিপ্রেক্ষিতে আমরা অপরাধীদের ধরতে অভিযান শুরু করি। অভিযানে গিয়ে প্রথমে ভুক্তভোগীর মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। যার কাছ থেকে ফোনটি উদ্ধার করা হয়, তাদের দেয়া তথ্যে আমরা একটি গ্রুপকে ধরি। ওই গ্রুপে এক নারীসহ চার পুরুষ সদস্য আছেন। ধারণা করি, ওই ঘটনার সঙ্গে তারাই জড়িত। কিন্তু তদন্ত এগোতে থাকলে আমরা নিজেদের ভুল বুঝতে পারি। অর্থাৎ অপরাধের মূল হোতারা তখনও অধরা।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসিন জানান, গত ১৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় নগরের গনি বেকারি মোড়ে ছি’নতাইয়ের শি’কার হন অরবিন্দু দত্ত নামে এক ব্যক্তি। এ সময় ছি’নতাইকারীরা তাকে ছু’রিকা’ঘাত করে পালিয়ে যায়। গতকাল রাত ৮টার দিকে নগরের চকবাজারের সার্সন রোড দিয়ে যাওয়ার সময় মো. সেলিম নামে আরও এক ব্যক্তি ছি’নতাইয়ের শি’কার হন। এ ঘটনায়ও ভু’ক্তভো’গীর বুক, পেট ও উরুতে ছোড়া দিয়ে মারাত্মক যখম করে ছি’নতাইকারীরা।

মোহাম্মদ মহসিন বলেন, এ দুটি ঘটনায় কোতোয়ালি থানায় অভিযোগ করা হলে ঘটনা তদন্তে নামে পুলিশ। তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে ছি’নতাই হওয়া মোবাইল ফোন ক্রয়কারী শনাক্তের পর প্রথমে নগরের সিরাজউদ্দৌলা রোড থেকে রুবেল ও তার স্ত্রী ফারজানা বেগমকে এবং তাদের দলের আরও তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। পরে আন্দরকিল্লা রাজাপুকুর লেন থেকে পাঁচ কিশোর ছিনতাকারীকে গ্রেফতার করা হয়।

তিনি আরও বলেন, তাদের গ্রেফতারের পরও গতকাল রাত ৮টার দিকে নগরের চকবাজারের সার্সন রোডে ছি’নতা’ইয়ের শি’কার হন মো. সেলিম। এ ঘটনায় বিচলিত হয় পুলিশ। পরে আবারও তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে রাত ৮টার দিকে নগরের স্টেশন রোড থেকে ছি’নতাইকারী রাকিবুল হাসান রাকিব (২৫) ও তার সহযোগী রুপা ওরফে নিপাকে (২০) গ্রেফতার করা হয়।’

সহকারী পুলিশ কমিশনার (কোতোয়ালি জোন) নোবেল চাকমা জানান, পুলিশি অভিযানে গ্রেফতার রাকিব ও নিপা দুজন বন্ধু। ছি’নতাইয়ের সূত্রেই তারা একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হয়ে এক বছর ধরে নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছি’নতাই করে বেড়াতেন। প্রেমিক-প্রেমিকা পরিচয়ে সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া নিতেন তারা। এরপর শহরের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বিভিন্ন ব্যক্তিকে টার্গেট করতেন নিপা। সুবিধা মতো কাউকে পেলে তাকে টার্গেট করে তিনি সিএনজি থেকে নেমে পড়তেন। এরপর টার্গেট ব্যক্তিকে নানাভাবে প্রলুব্ধ করে আটকে রাখার চেষ্টা করতেন নিপা। এই ফাঁকে ভুক্তভোগীর কাছ থেকে মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেন রাকিব। ভুক্তভোগী মোবাইল ফোন দিতে না চাইলে ছু’রিকা’ঘাত করে ছিনিয়ে নিতেন।

কোতোয়ালি থানা কম্পাউন্ডে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে নিপা ও রাকিবের কথা হয়। এ সময় তারা জানান, গত কয়েক দিনে ছু’রিকাঘা’ত করে ও ভয় দেখিয়ে সাতজনের কাছ থেকে মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়েছেন তারা।

রাকিব বলেন, ‘ভয় দেখালে কেউ কেউ মোবাইল দিয়ে দেয়। কিন্তু যারা মোবাইল দিতে চায় না তাদের ছু’রি দি’য়ে খোঁ’চা দিই।’

নিপা বলেন, ‘ওই ছেলেগুলো (নাছির, রাজু ও সেলিম) রাকিবের সঙ্গে বাড়াবাড়ি করছিল। তাই তাদের ছু’রি মে’রে দিয়েছে।’

সহকারী পুলিশ কমিশনার নোবেল চাকমা বলেন, রাকিব এক সময় চকবাজার এলাকার ছিঁচকে চোর ছিলেন। প্যারেড মাঠে খেলতে আসা ছেলেদের মোবাইল চুরি করতেন। পরে নিপাদের সঙ্গে মিলে ছি’নতাই শুরু করেন রাকিব। কিন্তু নিপা এর আগে তার মামা সুমনের সঙ্গে মিলে নগরীতে অনেক ছি’নতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন। নিপার মামা সুমন নগরের মুরাদপুরে এক দারোয়ানকে ছু’রিকা’ঘাত করে জেলে। এরপর থেকে রাকিবের সঙ্গে ছি’নতাই শুরু করেন নিপা।

সূত্র: জাগো নিউজ

ad

পাঠকের মতামত