347409

যাই করি না কেন আল্লাহ সবই দেখছেন

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হিসেবে। তাইতো মানুষের প্রতিটি কর্ম আল্লাহপাকের কাছে লিপিবদ্ধ অবস্থায় সংরক্ষিত থাকে।

আল্লাহতায়ালার কাছে মানুষের প্রতিটি কর্মের জবাব দিতে হবে। এই বিষয়ে কারো ছাড় নেই। প্রতিদিন চলার পথে কতইনা পাপ করি, ব্যবসায় চুরি করছি, অফিসে কাজের ফাকি দিচ্ছি, এমন কোন অপরাধ আছে যা করছি না?
সামান্য সামান্য কারণে একে অপরের সাথে ঝ’গড়া-বি’বাদে জ’ড়িয়ে মা’রামা’রি এমনকি হ’ত্যা পর্যন্ত গড়ায়। একবারের জন্যই কি ভেবে দেখেছি সৃষ্টিকর্তা যে সবই দেখছেন, তিনি যে এর বিচার করবেন?

পবিত্র কোরআনে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘আকাশ সমূহে যা আছে এবং পৃথিবীতে যা আছে সবই আল্লাহর আর তোমাদের অন্তরে যা আছে তা তোমরা প্রকাশ কর বা তা গোপন কর আল্লাহ তোমাদের কাছ থেকে এর হিসাব নিবেন। অতএব, তিনি যাকে চাইবেন ক্ষমা করবেন এবং যাকে চাইবেন আজাব দিবেন। আর আল্লাহ প্রত্যেক বিষয়ে সর্বশক্তিমান’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৮৪)।

এই আয়াত থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে, মানুষের কোনো চিন্তা বা কাজ বিনা হিসাবে হবে না, তা যতই গোপনে করা হোক না কেন। আমরা যাই করি না কেন তিনি সবই দেখছেন। আমাদের কর্মের জন্য পুরস্কার, শাস্তি বা ক্ষমা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী পেতেই হবে।

হাদিসের বিভিন্ন স্থানে এ বিষয়ে বর্ণিত হয়েছে, যেমন হজরত আলী (রা.) বর্ণনা করেন, ‘দুনিয়া পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাচ্ছে আর আখেরাত সম্মুখে আসছে আর এদের প্রত্যেকটির সন্তানাদি রয়েছে। তবে তোমরা আখেরাতের সন্তান হও, দুনিয়াদার সন্তান হয়ো না। কেননা আজ আমলের সময়, এখানে কোনো হিসেব নেই আর আগামীকাল হিসেব-নিকেশ হবে, সেখানে কোনো আমল নেই’ (বোখারি)।

আমরা যদি ভাবি যে, এই দুনিয়া হচ্ছে আনন্দ-ফুর্তির দুনিয়া, যখন যা ইচ্ছে করবো, আমাকে কে ধরবে। এটি মনে করা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। কেননা আমাদেরকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে, এই দুনিয়া হচ্ছে পরীক্ষা কেন্দ্র।

আমরা সবাই পরীক্ষা দিচ্ছি, যে ভালো পরীক্ষা দিবে সে ভালো ফল লাভ করবে এটাই স্বাভাবিক। সেদিন এ সুযোগ থাকবে না যে, হায়! আমি যদি আবার দুনিয়াতে যেতে পারতাম তাহলে ভাল কাজ করে আসতাম। আমরা যা কিছুই করি না কেন আল্লাহ তা জানেন ও দেখেন।

একটি বিষয় আমাদেরকে বিশ্বাস করতেই হবে যে, প্রত্যেককে আল্লাহতায়ালার সামনে উপস্থিত হতেই হবে এবং প্রত্যেকের কর্মের হিসেব দিতে হবে।

আল্লাহপাক পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আর তারা সবাই আল্লাহর সামনে উপস্থিত হবে। তখন দুর্বল লোকেরা অহংকারীদের বলবে, নিশ্চয় আমরা তোমাদেরই অনুসারী ছিলাম। অতএব, তোমরা আমদের কাছ থেকে আল্লাহর আযাবের কিছুটাও কি দূর করতে পার?

তারা বলবে, আল্লাহ যদি আমাদের হেদায়াত দিতেন তাহলে আমরা অবশ্যই তোমাদেরকে হেদায়াত দিতাম। আমাদের জন্য এখন বিলাপ করা বা ধৈর্য ধরা উভয়ই সমান। আমাদের রক্ষা পাওয়ার কোনো পথ নেই’ (সুরা ইবরাহিম, আয়াত: ২১)।

আমাদেরকে যেদিন আল্লাহপাকের সামনে উপস্থিত করা হবে সেদিন কেউ কারো বোঝা বহন করার সুযোগ পাবে না। যার যার হিসাব তাকেই দিতে হবে এবং আল্লাহপাক চাইলে তাকে ক্ষমাও করে দিতে পারেন।

যেভাবে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, হজরত সাফওয়ান ইবনে মুহরাব (রা.) বর্ণনা করেছেন, এক ব্যক্তি হজরত ইবনে ওমর (রা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ ও ঈমানদার বান্দার মধ্যকার গোপন আলোচনা সম্পর্কে মহানবী (সা.)-কে আপনি কীভাবে বলতে শুনেছেন?

তিনি বললেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে এক ব্যক্তি তার রবের নিকটবর্তী হবে। এমন কি রব তার কুদরতী হাত সেই বান্দার ওপর রেখে দু’বার বলবেন, তুমি (দুনিয়ায়) অমুক অমুক কাজ করেছিলে। সে বলবে, জি হ্যাঁ।

তিনি আবার জিজ্ঞাসা করবেন, তুমি কি এমন কাজ করেছিলে? সে বলবে, জি হ্যাঁ। এভাবে তার নিকট হতে এর স্বীকৃতি আদায় করা হবে। তারপর বলবেন, আমি দুনিয়ায় তোমার গুনাহ গোপন করে রেখেছি। আজ আমি তা মাফ করে দিচ্ছি’ (বোখারি, কিতাবুল আজাব)।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইচ্ছে করলে আমাদেরকে ক্ষমাও করতে পারেন কিন্তু আমাদের কাজ হচ্ছে সময় থাকতে নিজের পাপের জন্য তার কাছে ক্ষমা চাওয়া, নিজেকে সংশোধন করে নেয়া।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সকলকে বেশি বেশি পুণ্যকর্ম করার তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট

সূত্র: যুগান্তর

ad

পাঠকের মতামত