345083

এবার ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের ডাক দিলেন জাকির নায়েক

এবার ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের ডাক দিলেন ধর্মবিষয় আলোচক ডা. জাকির নায়েক। ভারতীয় নাগরিক ও ইসলামিক বক্তা ডা. জাকির নায়েক তার এক ফেসবুক পোস্টে বলেন, ‘নবী মুহাম্মদ (সা.)কে অবমাননার কারণে আমাদের সকলের উচিৎ ফ্রান্সের পণ্য ও সেবা বর্জন করা।’

তিনি তার পোস্টে ফ্রান্সের বিভিন্ন পণ্য ও সেবাদানকারী কোম্পানির লোগো এবং তালিকা প্রকাশ করেন। মুহুর্তেই তা কয়েক লাখ প্রতিক্রিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর মুসলমানদের কটাক্ষ করে নেতিবাচক মন্তব্য আর পদক্ষেপে রীতিমতো সরগরম মুসলিম বিশ্ব।

‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতা’ ক্লাসে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা:) এর কার্টুন শিক্ষার্থীদের প্রদর্শন ও এটিকে স্বাভাবিক বলে উল্লেখ করার কারণে ফ্রান্সের এক শিক্ষককে চেচেন বংশোদ্ভূত রাশিয়ান এক কিশোর শিরশ্ছেদ করে হত্যা করে। এ ঘটনা ঘিরে দেশটিতে ব্যাপক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। এ ঘটনার জেরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে রাজধানী প্যারিসে অবস্থিত একটি মসজিদ বন্ধ করে দেয় ফরাসী কর্তৃপক্ষ। ওই শিক্ষককে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন বহু মুসলিমকে গ্রেফতার করেছে দেশটির পুলিশ। প্যারিসসহ দেশটির বিভিন্ন প্রান্তে মুসলিমদের বাসা-বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী।

এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর বিতর্কিত ফরাসি ব্যঙ্গাত্মক ম্যাগাজিন শার্লি এবদো হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে পুনরায় প্রকাশ করে। ২০১৫ সালে প্রথম তারা এ কার্টুনগুলো প্রকাশ করেছিল। এমন সময় আবার তারা কার্টুনগুলো প্রকাশ করল, যখন ওই ফরাসি ম্যাগাজিনের অফিসে হামলায় জড়িত ১৪ জনকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রস্তুতি চলছে। এরপর আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠে ফ্রান্সের রাজনীতি। এর হাওয়া লাগে বিশ্বরাজনীতিতেও। ফ্রান্সের বিভিন্ন সরকারি ভবনে প্রজেক্টর দিয়ে প্রদর্শন শুরু হয় মুহাম্মদ (সা.) এর ১২টি কার্টুন। যার প্রতিবাদে আন্দোলন শুরু হয় মুসলিম বিশ্বে।

এরপরই ইসলাম ধর্ম ও বিশ্বনবী হজরত মোহাম্মদ (সা.)কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন বন্ধ করা হবে না বলে সাফ জানান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। বিশ্বনবীকে নিয়ে একটি বিতর্কিত কার্টুন দেখানোর জেরে খুন হওয়া ফরাসি শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে সম্মান জানাতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ম্যাক্রোঁ এ কথা বলেন। ইসলামিক বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। বলেন, এই বিচ্ছিন্নতাবাদ ফ্রান্সের মুসলমান সম্প্রদায়গুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।

এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ক্ষমা না চাইলে অ্যামাজন বনে জ্বলতে থাকা দাবানল নিয়ন্ত্রণে জি-সেভেনের দুই কোটি ২০ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা গ্রহণ করা হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেইর বলসোনারো। তবে একজনের ভুল সিদ্ধান্তে বিশ্ব অ্যামাজনকে ধ্বংস হয়ে যেতে দেবে না বলে পাল্টা মন্তব্য করেছেন ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ।

এর আগে ম্যাক্রোঁর ইসলাম এবং মুসলমানবিরোধী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে ফরাসি পণ্য বয়কটের জন্য তুরস্কের নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোয়ান। প্রথমবার পণ্য বয়কটের ডাক আসে কুয়েতের বিভিন্ন মার্কেট থেকে। কাতারের ব্যবসায়ীরা ফরাসি পণ্য দোকান থেকে বের করে ফেলে দিচ্ছেন কেউ কেউ সরিয়ে নিচ্ছেন। আবার অনেকেই নতুন অর্ডার বাতিল করেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ইসলাম এবং মুসলমানদের আক্রমণ করায় ম্যাক্রোঁর নিন্দা জানিয়েছেন।

ম্যাক্রোঁর এমন কাণ্ডের পর বেশ কয়েকটি আরব দেশ ফ্রান্সের পণ্য বয়কটের ডাক দেয়। এরপরই টনক নড়ে ফ্রান্সের। এবার তারা আরব দেশগুলোর প্রতি পণ্য বয়কট বন্ধের অনুরোধ জানিয়েছে। ফ্রান্সের পণ্য বয়কট না করার অনুরোধ জানিয়ে ২৫ অক্টোবর একটি বিবৃতিতে প্রকাশ করেছে ফ্রান্সের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

উল্লেখ্য, ডা. জাকির নায়েককে বাংলাদেশ ও ভারতে নিষিদ্ধ করা হয়। ঢাকার গুলশানে একটি রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর হামলাকারীদের দুজনের ফেসবুক থেকে জানা যায়, তারা জাকির নায়েকের বক্তব্যে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। ফলে ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা জাকির নায়েকের মালিকানাধীন পিস টিভি ও তার ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক ওঠে। এ টিভি চ্যানেলে বড় সময় ধরে জাকির নায়েকের ধর্মীয় বক্তৃতা প্রচারিত হয়। চার বছর আগের সেই ঘটনার পর বাংলাদেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের ঘোষণা দেয় সরকার।

ভারতেও জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় সরকারসহ বিভিন্ন পর্যায় থেকে তদন্ত শুরু হয়। তদন্তের পর ভারতের ইসলামি বক্তা জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনার মতো কোনো প্রমাণ পায়নি মহারাষ্ট্র প্রদেশের গোয়েন্দা সংস্থা। তাঁর বক্তব্যের মধ্যে সন্ত্রাসবাদ উসকে দেওয়ার মতো কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন তারা। ফলে দেশে ফেরার পর জাকির নায়েককে গ্রেপ্তার করার কোনো সুযোগ নেই বলে উল্লেখ করেছে গোয়েন্দা সংস্থা সূত্র।

গোয়েন্দা সূত্রের উদ্বৃতি দিয়ে ২০১৬ সালে ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি এক প্রতিবেদনে জানায় জানায়, কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনায় জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে তদন্তে নামেন মহারাষ্ট্রের গোয়েন্দারা। প্রাথমিকভাবে তাঁরা ইউটিউবে প্রকাশিত জাকির নায়েকের কয়েকশ ভিডিও এবং বক্তব্য পর্যালোচনা করেন। ওই বক্তব্যগুলো দেশে ও দেশের বাইরে দিয়েছিলেন জাকির নায়েক। গোয়েন্দারা বলেন, তারা কয়েকটি প্রদেশ থেকে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে বিশ্লেষণ করেন। তা থেকে আক্রমণাত্মক এবং জঙ্গিভাবাপন্ন কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

মহারাষ্ট্রের তদন্তের ফলাফল উচ্চপর্যায়ে পাঠানোর পর একজন জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘ইংরেজি ভাষায় ধর্মীয় বক্তব্য প্রচারকের বিরুদ্ধে জঙ্গিসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কোনো অভিযোগ আনার সুযোগ আইনে নেই। তবে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগ আনা যেতে পারে। কিন্তু তা-ও আইনি মানদণ্ডে টিকবে না।’

ad

পাঠকের মতামত