344800

খাবিব: পুরো ক্যারিয়ারে একবারও হারেননি যিনি

পেশাদার অ্যাথলেটদের ক্যারিয়ারে উত্থান-পতন থাকেই। হালের শ্রেষ্ঠ ক্রীড়াবিদ লিওনেল মেসি কিংবা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোও কখনো কখনো বার্জে ফর্মের শিকার হন। কিন্তু ১২ বছরের দীর্ঘ ক্যারিয়ারে একবারও হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়নি। পেশাদার খেলোয়াড়দের জীবনে এমন কীর্তি আর কারো আছে কিনা জানা নেই। তবে রাশিয়ান মিক্সড মার্শাল আর্ট তারকা খাবিব নুরমাগোমেদভ গড়েছেন এমনই বিরল এক কীর্তি।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ খেলেছেন তিনি। বলাই বাহুল্য, এই ম্যাচটিও জিতে নিয়েছেন তিনি। এমএমএ ক্যারিয়ারে খেলেছেন ২৯টি ম্যাচ। জয়-পরাজয়ের হিসাব ২৯-০! আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ (ইউএফসি)তেও অপরাজিত খাবিব। এখানে খেলা ১৩ ম্যাচের সবক’টিই জিতেছেন।

তার অবসরের ঘোষণা পুরো বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনের অন্যতম আলোচিত এই তারকার অবসরের ঘোষণায় কষ্ট পান অন্যান্য তারকারাও। সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, লিভারপুলের মিশরীয় তারকা মোহামেদ সালাহ কিংবা জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী তারকা মেসুত ওজিল শেষ ম্যাচে সাপোর্ট দিয়েছেন তাকে। আরো একবার জয় তুলে নেয়ার পর তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক তারকারাও।

রাশান এই মিক্সড মার্শাল আর্ট তারকা খেলতেন লাইটওয়েট শ্রেণিতে। আল্টিমেট ফাইটিং চ্যাম্পিয়নশিপ (ইউএফসি) ক্যারিয়ারের পুরো সময়টায় তিনি চ্যাম্পিয়ন। ফাইট ম্যাট্রিক্সের র‍্যাংকিং অনুযায়ী, লাইটওয়েট শ্রেণির সর্বকালের ২য় সেরা মার্শাল আর্টিস্ট খাবিব নুরমাগোমেদভ। কারো কারো মতে, তিনিই সর্বকালের সেরা।

খাবিব হচ্ছেন ১ম মুসলিম অ্যাথলেট, যিনি ইউএফসি শিরোপা জিতেছেন। সৃষ্টিকর্তার ওপর অগাধ আস্থা তার। শেষ ম্যাচেও আবেগে ভেসে গেছেন। বলেছেন, যখন আল্লাহ তোমার সাথে থাকে, পৃথিবীর কেউ তোমাকে কখনো হারাতে পারবে না। তোমার এটি বিশ্বাস করতে হবে।

তার অবসরের কারণটা অবশ্য বেশ হৃদয়বিদারক। চলতি বছরের মে মাসে তার বাবা ও দীর্ঘদিনের কোচ আবদুলমানাপ নুরমাগোমেদভ করোনায় আক্রান্ত হন। দীর্ঘদিন কোমায় থাকার পর ৩ জুলাই, ৫৭ বছর বয়সে মস্কোর একটি ক্লিনিকে মারা যান তিনি।

বাবার মৃত্যুর পরই মূলত অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন খাবিব। তার মা বলেছিলেন, বাবা ছাড়া কোনো ম্যাচ যেন না খেলেন তিনি। মায়ের কথা রেখেছেন খাবিব। তাই তো, আবুধাবিতে ইউএফসি লাইটওয়েট চ্যাম্পিয়নশিপে যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিন গেথজির বিপক্ষে ম্যাচটাকেই ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ বলে জানিয়ে দেন।

তিনি বলেন, আমি ইউএফসি এবং এমএমএ ক্যারিয়ারের সবগুলো ম্যাচে অপ্রতিরোধ্য থেকেছি। আমি অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন। আমি বলতে চাই, আজকের ফাইটটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ফাইট। আমার বাবাকে ছাড়া আমি এখানে আসতে পারি না। আগেও আসিনি, আর আসবোও না। যখন ইউএফসি আমাকে জাস্টিনের বিপক্ষে ম্যাচটির কথা বললো, আমি ৩দিন আমার মায়ের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেছি। মা আমাকে বলেছেন, বাবাকে ছাড়া আমি যেন কোনো ফাইট না করি। আমি তাকে কথা দিয়েছি, এটাই আমার শেষ ম্যাচ। আমার বাবার স্বপ্ন ছিল এটি। আমি তার স্বপ্ন পূরণ করেছি।

শেষ ম্যাচে তার প্রতিপক্ষ জাস্টিনকেও ধন্যবাদ জানান খাবিব। তিনি বলেন, আমি জানি তুমি একজন কিংবদন্তী। তোমার আত্মীয়স্বজনের যত্ন নেবে। মা-বাবার সঙ্গে আরো আন্তরিক হও কারণ আমরা কেউই জানি না আগামীকাল কি ঘটতে যাচ্ছে!

খাবিবের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ম্যাকগ্রেগর সবার আগে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাকে। টুইটারে লিখেছেন, তোমার বাবার প্রতি শ্রদ্ধা। একইসঙ্গে তুমি এবং তোমার পরিবারের প্রতিও।

ম্যাচ শেষে জানা গেছে, পায়ের তিনটি ভাঙ্গা হাড় নিয়ে খেলেছেন খাবিব এবং জিতেছেনও। ইউএফসি প্রেসিডেন্ট ডানা হোয়াইট ম্যাচশেষে সংবাদ সম্মেলনে জানান, সে ছিল হাসপাতালে। তিন সপ্তাহ আগে তার পা ভেঙে যায়। তার পায়ের তিনটি হাড় ছিল ভাঙা। এটি কেউই জানতো না। কিন্তু সে এই পৃথিবীর সবচেয়ে দৃঢ়চেতা মানুষ। এবং আপনি যদি সর্বকালের সেরা অ্যাথলেটদের তালিকা করতে চান, তাকে সবার উপরে রাখতেই হবে।

১৯৮৮ সালের ২০ সেপ্টেম্বর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সিলদিতে জন্মগ্রহণ করেন খাবিব নুরমাগোমেদভ। তার বাবা আবদুল মানাপ ছিলেন তার কোচ। তার হাত ধরেই একের পর এক ট্রফি জিতেছেন। ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে এমএমএ’তে অভিষেক হয় তার। এবং ১ম মাসেই টানা ৪টি জয় তুলে নেন তিনি। এরপর একের পর এক দাপুটে পথচলা।

ইউএফসিতে খেলেছেন কনর ম্যাকগ্রেগর, পয়রিয়ের, গেথজির মতো তারকাদের বিপক্ষে। বলাই বাহুল্য, সবগুলোতেই জিতেছেন তিনি।

স্যাম্বো, জুডো এবং রেসলিং, তিনটাতেই দখল ছিল খাবিবের। এক জরিপে বলা হয়, মিক্সড মার্শাল আর্টস-এমএমএ’র ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর এবং দাপুটে অ্যাথলেট তিনি। ক্যারিয়ারজুড়ে জিতেছেন অসংখ্য শিরোপা আর পুরষ্কার।

রাশিয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাথলেট খাবিব নুরমাগোমেদভ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইন্সটাগ্রামে ২৩.৬ মিলিয়ন ফলোয়ার নিয়ে রাশান অ্যাথলেটদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় তিনি।

ad

পাঠকের মতামত