344575

ইরানের পণ্যসামগ্রী: বেহেশতি ফল আপেল

গত আসরে আমরা বলেছিলাম ইরানের কৃষিপণ্যের মধ্যে বাগ-বাগিচাপণ্য আঙুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্থান অধিকার করে আছে। সমগ্র বিশ্বেই ইরানের বাগানজাত বিচিত্র ফলফলাদি গুণ ও মানের দিক থেকে বেশ সমাদৃতি পেয়েছে।

ইরানে সাইত্রিশ মিলিয়ন হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। গত আসরে আমরা আঙুর নিয়ে বলছিলাম। বহু রকমের আঙুর রয়েছে ইরানে। ফার্সি ভাষায় এগুলোর কয়েকটি জাতের নাম এরকম: আসগারি আঙুর, বি দনে মানে বিচিহীন আঙুর, শাহানি, কেশমেশি, সাহেবি, ফাখরি, লায়াল হোসাইনি, মারা’গেয়ি, ইয়াকুতি, শনি এবং শাহরুদি আঙুর। ইরানের খোরাসান, কাজভিন, পূর্ব আজারবাইজান এবং পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশের মতো আরও অনেক প্রদেশ আঙুর উৎপাদনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আঙুরের পুষ্টিগুণ অসাধারণ। এতে রয়েছে ভিটামিন সি, বি, এবং এ। আঙুরে রয়েছে খনিজ পদার্থ ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন এবং ফসফরাস। প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকায় আঙুর শরীরের দুর্বলতা রোধে সাহায্য করে এবং স্নায়ুবিক রোগের জন্য আঙুর খুবই উপযোগী। শুকনো আঙুরের নাম কিশমিশ। আজ আলোচনা করবো আপেল নিয়ে। আপেলের চাহিদা বিশ্বব্যাপী। তাই আপেল একটি বাণিজ্যিক পণ্য হয়ে উঠেছে সারাবিশ্বে।

সাম্প্রতিক কয়েক দশকে বিশ্ব অর্থনীতিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিয়েছে কৃষিকাজ। এ কারণে বিশ্বের বহু দেশ এখন কৃষি বিভাগের উন্নয়নকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিচ্ছে। কৃষিজ ফলনের মধ্যে যে ফলটি বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে এবং বিশ্বব্যাপী যে ফলটির চাহিদা অনেক বেশি তা হলো আপেল। আপেল বেশ প্রাচীন একটি ফল। কয়েক হাজার বছর বয়স এই ফলটির। বিশ্বের বহু মানুষের বিশ্বাস এই ফলটি হযরত আদম (আ) এবং হযরত হাওয়া (আ) এর মাধ্যমে এই পৃথিবীতে এসেছে এবং পৃথিবীবাসীর জন্য রহমত বরকত ও কল্যাণের কারণ হয়েছে। আপেল উদ্যানজাত একটা দানাদার ফল। উনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আপেল একটা অভিনব ফল হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচিত ছিল। পরবর্তীকালে মানুষ যখন এই আপেল নামক ফলটির পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অবহিত হলো তখন থেকেই ফলটির চাহিদা সবার কাছে বেড়ে গেল। এভাবে নিজেরাই এই ফলটিকে বাণিজ্যিকভাবে বিশ্বব্যাপী পরিচিতি লাভ করলো আপেল।

আপেলের রং সাধারণত তিন রকমের হয়ে থাকে- হলুদ, লাল এবং সবুজ। পৃথিবীর দক্ষিণ এবং উত্তরের ত্রিশ থেকে ষাট ডিগ্রি ভৌগোলিক অবস্থানে যেসব এলাকা ঠাণ্ডা কিংবা নাতিশীতোষ্ণ সেসব এলাকাতেই আপেল উৎপাদিত হয়। আপেলের রং তিন রকমের হলেও এর প্রকার কিন্তু সাড়ে সাত হাজারের মতো। এসব আপেলকে দুই ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। একটি হলো স্থানীয়ভাবে লাগানো বা চাষ করা আপেল অন্যটি বুনো আপেল যেগুলো বনের ভেতর নিজে নিজেই বেড়ে উঠে ফল দেয়। বুনো আপেল গাছগুলো বাগানে চাষ করা আপেল গাছের তুলনায় ছোট।

আপেল এমন একটি ফল যা সঠিকভাবে বা যথাযথ প্রক্রিয়ায় উত্পাদিত হলে তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনগুলো অর্থাৎ মানব দেহের জন্য প্রয়োজনীয় এবং উন্নত ঔষধি উপাদানগুলো বিদ্যমান থাকে। এজন্যই আপেলকে স্বাস্থ্যকর ফল বলা হয়। ভিটামিন বি-ওয়ান, বি-টু, বি-থ্রি, এ এবং সি’র ব্যাপক উপস্থিতি থাকার কারণে এবং সেইসঙ্গে আপেলে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আয়রনের মতো খনিজ উপাদানগুলোর পর্যাপ্ত উপস্থিতি থাকায় এই শক্তি সমৃদ্ধ ফলটিকে স্বাস্থ্যকর এবং রোগ নিরাময়কারী ফল হিসাবে অভিহিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। আপেল অন্যতম অলৌকিক ফল।

বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ ডাঃ মারিয়াম মেহেরঅজীর মতে: আপেলের রাসায়নিক গঠন বা মিশ্রণ যাকে কম্পোজিশন বলে পুষ্টিবিজ্ঞানীরা জানে, একেক জাতের আপেলের এই রাসায়নকি গঠনে কিছুটা বৈচিত্র্য রয়েছে। দিনের শুরুতে কেউ যদি একটি আপেল খায় তাহলে তার হজম প্রক্রিয়ার কার্যক্ষমতার উপর তা ব্যাপক প্রভাব ফেলে। মজার ব্যাপার হলো আপেল যদি কামড় দিয়ে দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে খাওয়া হয় তাহলে তা চোয়ালকে শক্তিশালী করে এবং তা টুথব্রাশের মতোই কাজ করে। এজন্য তাকে প্রাকৃতিক টুথব্রাশ বলে মনে করা হয়।” আপেলের মধ্যে বিদ্যমান অ্যাসিড মুখের ব্যাকটেরিয়াগুলিকে মেরে ফেলে এবং সে কারণে মুখের ভেতর দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী দাঁতে লেগে থাকা উপাদানগুলো পরিষ্কার হয়ে যায়। ফলে মুখে আর দুর্গন্ধ থাকে না।

আপনি যদি স্বাস্থ্যকর ত্বক চান কিংবা শুষ্ক ত্বকের সমস্যায় ভুগতে না চান তাহলে আপনার খাদ্য তালিকায় নিয়মিত আপেল রাখতে পারেন। কিছু কিছু মানুষ বিশেষত বয়স্করা অতিরিক্ত লাল মাংস এবং চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ করার কারণে প্রবীন বয়সে জয়েন্টে ব্যথা এবং গেঁটেবাত সমস্যায় ভোগেন। এ ধরনের সমস্যায় যারা ভুগছেন তারা লাল মাংস খাওয়া কমানোর পাশাপাশি নিজেদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় নিয়মিত আপেল অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন। কাঁচা বা সেদ্ধ আপেল দেহে ইউরিক অ্যাসিড গঠনে বাধা দেয় এবং আপেল খাওয়ার ফলে দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণে অ্যাসিড প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়। যারা চিন্তাভাবনামূলক মানে গবেষণা কিংবা ব্রেন ওয়ার্ক করেন এবং যাদের কাজে গভীর মনোযোগ প্রয়োজন পড়ে তাদের জন্যও কোনোভাবেই আপেল খাওয়া ভুলে যাওয়া উচিত নয়। আপেল মস্তিষ্কে ফসফরাসের একটি ভাল উত্স।

আপেল খুব শক্তিশালী বিষ পরিষ্কারক একটি ফল। বেহেশতি এই ফলটি প্রশান্তিকর এবং মানসিক চাপ ও উদ্বেগ থেকে মানুষকে মুক্তি দেয়। সুতরাং আপেল বেশি বেশি খাওয়া উচিত।

পার্সটুডে

ad

পাঠকের মতামত