344170

‘রুটিন’ করে ব’লাৎকার করতেন শিক্ষক নাছির

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ ছাত্রজীবনে ক্লাস রুটিনের কথা নিশ্চয়ই সকলের মনে থাকবে। এর বাইরে আছে পরীক্ষার রুটিন। কিন্তু এই দুই শ্রেণির রুটিনের বাইরে ভিন্নরকম এক রুটিন চালু করেছিলেন চট্টগ্রামের কওমি মাদ্রাসা শিক্ষক নাছির উদ্দিন। কী বারে কোন শিশু ছাত্রকে তার শয্যাসঙ্গী হিসেবে নৈশ মনোরঞ্জনে হাজির হবে, তা রীতিমতো রুটিনের মতো করে ঠিক করে রেখেছিলেন তিনি।

পেশা শিক্ষকতা হলেও নে’শা তার ভিন্ন। ছোট ছেলে শিশুদের প্রতি প্রবলভাবে যৌ’নাসক্ত তিনি। বিকৃত এই যৌ’ন কামনা চরিতার্থের ক্ষেত্রেও আবার অদ্ভুত তরিকা তার। এক শিশু দিয়ে টানা একাধিক রাত তৃপ্তি খুঁজে পান না। প্রতি রাতের জন্যই চাই নতুন মুখ, ভিন্ন ভিন্ন শিশু।

বিকৃত রুচির এই ব’লাৎকারকারী নাছির উদ্দিন (৩৫) শিক্ষকতার মহান পরিচয়ের আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে ধ’র্ষণ করে আসছেন মাদ্রাসার আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশুনা করতে আসা কমবয়সী ছেলে শিশুদেরকে। কোন ছাত্র রাজি না হলে বা প্রতিবাদ করলেই তার ওপর নেমে আসতো মাদ্রাসার হোস্টেল সুপার নাছির উদ্দিন নির্যাতনের খড়গ। নানা অজুহাতে ক্রমাগত মারপিটের শিকার হবার পর বাধ্য হয়েই মাদ্রাসার হোস্টেল সুপার নাছির উদ্দিনের শয্যাসঙ্গী হতে রাজি হয়ে যেত কোমলমতি শিশুরা।

এভাবে দীর্ঘকাল তার বিকৃত ‘যৌ’ন আকাঙ্ক্ষার নিরাপদ বাস্তবায়ন শেষে অবশেষে গতকাল সোমবার (১৯ অক্টোবর) রাতে পুলিশের জালে ধরা পড়েছেন লম্পট শিক্ষক নাছির উদ্দিন। পরে আজ মঙ্গলবার আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে তিনি শিশু বলা’ৎকার করার কথা স্বীকারও করে নেন। পাশাপাশি ব’লাৎকারের শিকার চারজন শিশুছাত্র আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে তাদের ওপর নাছিরের নৃশংস নির্যাতনের বর্ণনা দেয়।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলাধীন ছোট বেউলা নিবাসী নুরুল ইসলামের পুত্র নাছির বছর দুয়েক আগে স্বনির্ভর রাঙ্গুনিয়া এলাকায় অবস্থিত এই মাদ্রাসার শিক্ষকতায় নিযুক্ত হন। তার সন্দেহজনক চরিত্র সম্পর্কে ছাত্রদের মধ্যে কানাঘুষা থাকলেও আনুষ্ঠানিক অ’ভিযোগ না থাকায় প্রশাসনের তরফে কিছু করা সম্ভব হচ্ছিলো না। অবশেষে গতকাল সন্ধ্যায় বেশ কয়েকজন অ’ভিভাবক তাদের শিশু সন্তানকে ব’লাৎকার করার বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া মডেল থানায় অ’ভি’যোগ দায়ের করলে পুলিশ তৎপর হয়। ওই রাতেই চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীম’র নেতৃত্বে অ”ভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

জানা যায়, যৌ’ন কামনার দিক থেকে নাছির দীর্ঘদিন ধরেই ছেলে শিশুদের প্রতি দুর্বল। ৫ বছর দুবাই থাকার পর মূলত এই শিশু ব’লাৎকারে আসক্তিই তাকে মাদ্রাসা শিক্ষকতার পেশায় টেনে আনে। শিক্ষকতায় নিয়োজিত থেকে অদ্ভুত উপায়ে তিনি তার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে চলেন। তার প্রস্তাবে ‘রাজি’ হওয়া ছাত্ররা পালাক্রমে শয্যাসঙ্গী হিসেবে তার মনোরঞ্জনে ব্যাপৃত হয়। এমনকি তিনি রুটিনের মতো করে রাখেন, কে কবে তাকে বিছানায় সময় দেবে। তার ছেলেশিশু আসক্তির এই বিকৃত রুচির কথা জানতে পেরে ২০১৮ সালে তার স্ত্রী একমাত্র সন্তানসহ তাকে ছেড়ে চলে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিশুর মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে আলেম বানানোর উদ্দেশ্যে ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছিলাম। গার্মেন্টসে চাকরি করে বহু কষ্টে ছেলের পড়ালেখার খরচ দিই। কিন্তু মানুষরূপী এই শয়তান আমাদের সব স্বপ্ন শেষ করে দিয়েছে। একে ক্রসফায়ারে দেন স্যার। এ মানুষ না।

এ বিষয়ে রাঙ্গুনিয়া সার্কেলের এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম বলেন, সোমবার রাতে থানায় মামলা হবার সাথে সাথে অ’ভিযান চালিয়ে ওই মাদ্রাসায় থেকে নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধ’র্ষণ ব’লাৎকারের প্রতি জিরো টলারেন্সের কথা জানিয়ে এগুলো রোধে সামাজিক সচেতনতার ওপর জোর দেন তিনি।

ad

পাঠকের মতামত