343823

একসাথে তিন কন্যার জন্ম দিয়ে দুঃশ্চিন্তায় দরিদ্র দম্পতি

পাঁচ কন্যা সন্তান থাকার পর আবারও একসাথে তিন কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়ে দুঃশ্চিন্তায় পড়েছে এক দরিদ্র দম্পতি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সদ্য জন্ম নেয়া তিন কন্যাকে দত্তক দেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন দম্পতির এক স্বজন। সদ্যোজাত তিন সন্তানের অবস্থা স্থিতিশীল হলেও ভালো নেই জন্ম দেয়া মা। দরিদ্র মায়ের বাড়ির মেঝেতে দিনরাত পার করছে তারা। মিলছে না সুচিকিৎসা। জন্মের ছয় দিনেও নাম রাখা হয়নি তিন সদ্যোজাতের।

জানা যায়, কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ নওদাপাড়া গ্রামের মৃত্যু আইয়ুব আলীর বড় মেয়ে ফাতেমার ফুলবাড়ি উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের নগরাজপুর গ্রামের দিনমজুর সাইফুর রহমানের সাথে বিশ বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে এক এক করে ৫টি কন্যার জন্ম হয়। বড় কন্যাকে এক বছর আগে বিয়ে দেন। বাকি চারজনের মধ্যে একজন নবম শ্রেণী, একজন সপ্তম শ্রেণী এবং দুইজন শিশু শ্রেণিতে অধ্যয়নরত। দরিদ্র পরিবারে এতগুলো সন্তান নিয়ে টানপোড়েনের মধ্যে দিন কাটে ফাতেমা-সাইফুর দম্পতির। এর মাঝে ছেলে সন্তানের প্রত্যাশায় আবার গর্ভধারণ করেন ফাতেমা। সন্তান প্রসবের জন্য মায়ের বাড়ি হাসনাবাদের নওদাপাড়ায় আসে ফাতেমা।

ফাতেমার মা রহিমা বেগম নিজেও একজন দরিদ্র মানুষ। বাড়ির পাশের হাফেজিয়া মাদরাসায় ঝিয়ের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। গত সোমবার (১২ অক্টোবর) বিকেলে সেখানেই একসাথে তিন কন্যা সন্তানের জন্ম দেন ফাতেমা। এক সাথে তিন কন্যা সন্তান পৃথিবীতে আসার খবরে খুশি হতে পারেনি ফাতেমার পরিবার ও আত্মীয়রা।

ফাতেমার মামা প্রভাষক মেহের আলী জানান, জন্মের পর তিন শিশুর শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলেও মাতা ফাতেমার শারীরিক অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। ৬দিনেও বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছে না। ফাতেমা এখনও কথা বলার মতো অবস্থায় নেই। তবে চিকিৎসা চলছে। ফাতেমার স্বামী সাইফুর রহমান এই খবরে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। কারো সাথে ভালো করে কথা বলছে না।

মেহের আলী আরও জানান, তাদের দরিদ্র সংসার এবং আগের ৫ কন্যা সন্তান রয়েছে। তাই সদ্য জন্ম নেয়া তিন কন্যা সন্তানদেরকে দত্তক দেয়ার চিন্তা করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া হয়েছিল। তবে এখন সিদ্ধান্ত বদলানো হয়েছে। সন্তানদের মা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত দত্তক দেয়া হবে না।

কন্যাদের বাবা সাইফুর রহমান জানান, আল্লাহ যা করেছে তা ভালোই করেছে। কষ্টের সংসার হলেও তাদের মানুষ করতে হবে।সাইফুরের প্রতিবেশি বাবুল চন্দ্র বিশ্বাস জানান, সাইফুরের বাড়ির ভিটে ছাড়া চাষের তেমন জমিজমা নেই। সে কখনো সবজি বিক্রি করে আবার কখনও দিনমজুরি করে সংসার চালায়। এতগুলো সন্তানের মুখে খাবার যোগাতে হিমশিম খেতে হয় তাকে। তার শাশুড়িও দিন আনে দিন খায়। দুই পরিবার দরিদ্রসীমার নিচে বসবাস করে। এরপর আরও তিন সন্তানের জন্ম তার (সাইফুরের) মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে।

নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর আহম্মেদ মাছুম জানান, এ বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। তারপরেও খোঁজ-খবর নিয়ে ওই তিন সন্তানকে দত্তক যাতে না দেয়া হয়, সে বিষয়ে ওই দম্পতিকে পরামর্শ দেয়া হবে। এছাড়া সরকারের পক্ষ থেকে ওই দম্পতিকে সহযোগিতা করা হবে।

ad

পাঠকের মতামত