343518

মায়ের গ’লাকা’টা লা’শের পাশে কাঁদছিল শিশু মারিয়া

জেলা প্রতিনিধিঃ একটি রুমের মধ্যে মা, ভাই ও বোনের গ’লাকা’টা ম’রদে’হ ছড়িয়ে রয়েছে। মায়ের পাশেই পড়ে কাঁদছিল ছয় মাস বয়সী শিশু মারিয়া সুলতানা। পাশের রুমে বাবার পা বাঁধা ম’রদে’হ পড়ে রয়েছে খাটের ওপরে। নৃ’শংস’ভাবে গ’লা কে’টে হ’ত্যা করা হয়েছে একই পরিবারের চারজনকে। তবে সৌভাগ্যক্রমে বেঁ’চে গেছে শিশু মারিয়া। মা-বাবা, ভাই-বোন যে আর বেঁ’চে নেই তা এখনও বোঝার বয়সও হয়নি তার। মা-বাবাকে খুঁজছে ছোট্ট মারিয়া।

সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামে এ হ’ত্যাকা’ণ্ডের ঘ’টনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) ভোররাতে একই পরিবারের ওই চারজনকে গ’লা কে’টে হ’ত্যা করেছে দু’র্বৃত্ত’রা।

তবে পুলিশ এখনও ঘট’নার মোটিভ উদঘাটন করতে পারেনি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন টিম মাঠে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

নি’হতরা হলেন- হেলাতলা গ্রামের ব্যবসায়ী মো. শাহীনুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন(৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহী (৯) ও মেয়ে তাসমিন সুলতানা (৬)। মায়ের লা’শের পাশেই পড়েছিল ছয় মাস বয়সী শিশু মারিয়া সুলতানা।

নি’হতের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলাম বলেন, বাড়িতে মা ও বড় ভাইয়ের পরিবারের সদস্যরা আমরা এক সঙ্গে থাকি। গতকাল মা আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন। রাতে আমি ছিলাম পাশের আরেকটি ঘরে। ভোররাতে পাশের ঘর থেকে বাচ্চাদের গোঙানির শব্দ শুনতে পাই। এরপর বাইরে গিয়ে দেখি তাদের ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকানো। দরজা খুলে বিভ’ৎস দৃশ্য দেখতে পাই। ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে ভাই, ভাবি, ভাতিজা ও ভাতিজির লা’শ। প্রথমদিকে বাচ্চারা বেঁ’চে ছিল, তবে কিছুক্ষণ পর মা’রা যায়। ছয় মাস বয়সী মারিয়া পড়ে ছিল মায়ের লা’শের পাশে।

তিনি বলেন, বড় ভাই শাহীনুর ইসলাম নিজস্ব ৭-৮ বিঘা জমিতে পাঙাস মাছ চাষ করতেন। গত ২২ বছর ধরে তাদের পারিবারিক সাড়ে ১৬ শতক জমি নিয়ে প্রতিবেশী ওয়াজেদ কারিগরের ছেলে আকবরের সঙ্গে বি’রোধ চলছিল। এ নিয়ে মা’মলা ও পারিবারিক বি’রোধের জে’র ধরে এ হ’ত্যাকা’ণ্ড ঘ’টতে পারে বলে ধারণা করছি।

স্বজনরা জানান, ভোরে তারা ওই বাড়িতে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ছুটে যান। পরে দরজা খুলে দেখতে পান গ’লাকা’টা ম’রদে’হগুলো ঘরের মধ্যে পড়ে আছে।

এদিকে সকালে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। স্থানীয় নারী ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুন জী’বিত থাকা একমাত্র শিশুটিকে নিয়ে নিজের কাছে রাখেন। পরবর্তীতে শোকে কাতর পরিবারের কাছে দেন শিশুটিকে। সকাল ১০টা পর্যন্ত ম’রদে’হগু’লো পড়েছিল ওই ঘরের মধ্যে। পুলিশের ক্রাইমসিনের তদন্তের জন্য ঘরে ঢুকতে দেয়া হয়নি কাউকে। দুপুর ১২টা পর্যন্তও এ ঘ’টনায় পুলিশ কাউকে আ’টক করেনি।

জানা গেছে, নি’হত শাহীনুর রহমানের তিন ভাইয়ের মধ্যে এক ভাই আশরাফুল ইসলাম মালয়েশিয়া থাকেন।

নি’হতের বোন আছিয়া খাতুন আহাজারি করছেন। তিনি বলছেন, আমার মা ও আরেকটা ভাই বাড়িতে থাকলে তাদেরও খু’ন করতো এরা।

হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোয়াজ্জেম হোসেন জানান, এটি একটি নৃ’শংস ঘট’না। একমাত্র শিশুকে রেখে পরিবারের বাকি চার সদস্যকে গ’লা কে’টে হ’ত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় যে বা যারাই জ’ড়িত থাকুক তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শা’স্তির দাবি করছি। একই সঙ্গে ঘটনার মূল রহস্য উন্মোচন করা হোক।

কলারোয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হারান চন্দ্র পাল জানান, এখন পর্যন্ত এ ঘ’টনায় কাউকে আ’টক করা হয়নি। ঘটনাস্থলে পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমানসহ সিআইডি, গোয়েন্দা পুলিশ, ডিএসবি, র্যাব ও অন্যান্য গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি পরিকল্পিত হ’ত্যাকা’ণ্ড।

তিনি বলেন, মায়ের লা’শের পাশে পড়ে কাঁদছিল ছয় মাস বসয়ী শিশু মারিয়া। সকালে স্থানীয় মহিলা ইউপি সদস্য তাকে তার দায়িত্বে রাখেন। এখনও মাঝে মধ্যে কাঁদছে শিশুটি। স্বজনদের কাছে রয়েছে ওই পরিবারের একমাত্র জী’বিত থাকা শিশুটি। সে মা-বাবাকে খুঁজছে।

সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এই নির্মম-নৃশং’স ঘ’টনার সঙ্গে যারা জড়িত তাদের খুঁজে বের করা হবে। আমরা তথ্য উপাত্ত নিচ্ছি। এ ঘটনায় যারাই জ’ড়িত থাকুক তাদের খুঁজে বের করা হবে। পুলিশ মাঠে কাজ করছে।

ad

পাঠকের মতামত