341102

ভারতের মুসলিমবি’রোধী নৃ’শংস’তা, বিশ্ববাসীকে সতর্ক করলেন ইমরান খান

‘পা’রমাণবিক পরিবেশে নৃ’শংস ‘ধ্বংসয’জ্ঞের পরিকল্পনা করছে ভারত। তবে নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষায় পাকিস্তান শেষ পর্যন্ত ল’ড়াই চালিয়ে যাবে।’ শুক্রবার (২৫ সেপ্টেম্বর) জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে দেয়া ভাষণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করে এমন হুঁ’শিয়ারি উচ্চারণ করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।

ভ’য়াবহ সং’ঘাত প্র’তিহত করার জন্য জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বলেন, না হয় পুরো অঞ্চল ঝুঁ’কিপূর্ণ হয়ে উঠবে।

তিনি বলেন, দখলকৃত কাশ্মীরে ভারতের অ’বৈধ কর্মকাণ্ড এবং নৃ’শংসতা থেকে আন্তির্জাতিক সম্প্রদায়ের চোখ সরাতে নয়াদিল্লি পারমাণবিক পরিবেশে পাকিস্তানের বি’রুদ্ধে সামরিক শক্তি লেলিয়ে দেয়ার ভ’য়াবহ খেলা খেলছে।

ইমরান খান বলেন, ভারতের উ’স্কানি এবং লাইন অব কন্ট্রোলে যু’দ্ধবিরত লঙ্ঘন এবং সীমান্তে নি’রপরাধ মানুষকে হ’ত্যার পরও পাকিস্তান সর্বোচ্চ সং’যত আ’চরণ করছে। অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অভিহিত করছি, নয়াদিল্লির নৃ’শংস পরিকল্পনা এবং মি’থ্যচার সম্পর্কে।

তিনি বলেন, উপনিবেশিক ভারতে আমার বাবা-মায়েরা জন্ম নিলেও আমাদের প্রথম প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে স্বাধীন পাকিস্তানে। আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, ফ্যাসিবাদী সর্বগ্রাসী আরএসএস নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সরকার যদি পাকিস্তানের বি’রুদ্ধে কোনো আগ্রাসন চালায়, তাহলে নিজেদের স্বাধীনতা রক্ষায় পাকিস্তানিরা শেষ পর্যন্ত ল’ড়াই অব্যাহত রাখবে।

‘নিরাপত্তা পরিষদকে অবশ্যই সর্বনাশা সং’ঘাত প্রতিহত করতে হবে। পূর্ব তৈমুর সং’ঘাত নিরসনে যে ভূমিকা পরিষদ নিয়েছিল, কাশ্মীরের ক্ষেত্রেও জাতিসংঘকে নিজের প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করতে হবে।’ বলেন ইমরান খান।

গেল বছর বালাকোটে ভারতের বো’মা হা’মলা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে দু’পক্ষের মধ্যে নতুন করে উত্তে’জনা ছড়ায়। সেই প্রেক্ষিতে সতর্কতা উচ্চারণ করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।

দেশটির গণমাধ্যম ডন জানায়, ভারতের যু’দ্ধবিমান ভূপাতিত করে তাদের একজন পাইলট আ’টকের পর আগ্রাসন ও বো’মা হা’মলা থামাতে বাধ্য হয় নয়াদিল্লি। উইং কমান্ডার অভিনন্দন ভারথামান নামের ওই পাইলটকে ২০১৯ সালের ১ মার্চ শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ভারতের কাছে হস্তান্তর করে ইসলামাবাদ। কিন্তু ভারত ওই বছরের ৫ আগস্ট অ’বৈধভাবে কাশ্মীর দখল করে। তারপর থেকে লাইন অব কন্ট্রোলে অব্যাহতভাবে গু’লি ছুঁ’ড়ছে ভারত।

ওই ঘট’না উল্লেখ করে জাতিসংঘের ৭৫তম অধিবেশনে ইমরান খান বলেন, যতোক্ষণ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী জম্মু-কাশ্মীর সংকটের সমাধান না হবে, ততোক্ষণ পর্যন্ত দক্ষিণ এশিয়ায় স্থায়ী শান্তি এবং স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা অসম্ভব।

কাশ্মীরকে পর’মাণু সং’ঘাতের কেন্দ্র বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, গেল বছর নিরাপত্তা পরিষদ তিন দফা জম্মু এবং কাশ্মীরকে বিবেচনায় নিয়েছে। নিরাপত্তা পরিষদকে অবশ্যই যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। ভারতের আসন্ন গ’ণহ’ত্যা থেকে কাশ্মীরীদের রক্ষায় জাতিসংঘকে অবশ্যই পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ।

তিনি বলেন, পাকিস্তান সবসময় শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়ে আসছে। শান্তি প্রতিষ্ঠায়, ভারতকে অবশ্যই ২০১৯ সালের ৫ আগস্টের পর নেয়া নৃ’শংস পদক্ষেপ প্রত্যাহার করতে হবে। সামরিক দখলদারিত্ব এবং মা’নবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে। কাশ্মীরী জনগণের ইচ্ছা এবং নি’রাপত্তা পরিষদের প্রস্তাবনা অনুযায়ী জম্মু এবং কাশ্মীর সংকট সমাধানে একমত হতে হবে।

আফগানিস্তানে শান্তি-ইমরান খান বলেন, আফগানিস্তানে রাজনৈতিক সমাধানের পক্ষে পাকিস্তানের অবস্থান সুস্পষ্ট। গেল ২০ বছর ধরে আমি বলে আসছি, আফগান সংকটের কোনো সামরিক সমাধান নেই। সবপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক উপায়ে সমাধানই আফগানিস্তানে শান্তি ফেরাতে পারে।

ইমরান খান বলেন, ২৯ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যকার শান্তি চুক্তির পুরো প্রক্রিয়ায় পাকিস্তান সহায়তা করেছে। এ দায়িত্ব পালন করতে পেরে ইসলামাবাদ সন্তুষ্ট। যু’দ্ধবি’ধ্বস্ত আফগানিস্তান পুনর্গঠন এবং শান্তি পুনরুদ্ধারে দেশটির নেতাদের শান্তি চুক্তিকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে কাজে লাগাতে হবে।

১২ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া আন্তঃআফগান আলোচনাকে ব্যাপকভাবে কাজে লাগানোর জন্য আফগান নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। শান্তি প্রক্রিয়ায় বাইরের হস্তক্ষেপ বা প্রভাবমুক্ত রাখার আহ্বান জানান তিনি। রাজনৈতিক সমাধানে আফগান শরণার্থীদের দেশে ফেরানোর সুযোগ উন্মুক্ত করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন তিনি।

ভারতকে ইঙ্গিত করে ইমরান খান সতর্ক করে বলেন, আফগানিস্তানের শান্তি প্রক্রিয়া নষ্ট করতে পারে এমন কোনো শক্তিকে সেখানে ভিড়তে দেয়া উচিৎ হবে না।

‘আফগানিস্তানের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং উন্নয়ন আঞ্চলিক যোগাযোগের নতুন সুযোগ উন্মুক্ত করবে। যার ফলে মধ্য এশিয়া এবং এর বাইরেও সহযোগিতার নতুন নতুন দ্বার খুলতে পারে।’ বলেন ইমরান খান।

মুসলমানদের ওপর আ’ক্রমণ-বিশ্বের প্রতিটি খারপ কাজের জন্য মুসলমানদের দায়ী করা থেকে বিরত থাকতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান ইমরান খান। মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং তাদের ধর্মীয় স্থাপনার প্রতি সম্মান প্রদর্শনেরও আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের বি’রুদ্ধে এমন হা’মলার ঘ’টনা ঘটছে। তবে ভারত এটিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। বিশ্বের একমাত্র দেশ ভারত, যেখানে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামভীতি ছড়ানো হচ্ছে। তার জন্য আরএসএস-এর নাৎসীবাদী আদর্শকে দায়ী করেন তিনি। বলেন, দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি আজকে ওই আদর্শ ভারত শাসন করছে।

মুসলমানদের বি’রুদ্ধে ভারতে ঘৃ’ণা ছড়ানোর ইতিহাস তুলে ধরেন তিনি। বলেন, ১৯২০ সালে নাৎসী আদর্শে বর্ণবাদী এবং আধিপত্যবাদী চেতনা নিয়ে আরএসএস গঠন করে উগ্রবাদীরা।

বলেন, নাৎসীরা ইহুদিদের বি’রুদ্ধে ঘৃ’ণা ছড়িয়েছে। আরএসএস মুসলমানদের বিরু’দ্ধে একই কাজ করছে। এর থেকে বাদ যাচ্ছে না খ্রিস্টানরাও। তাদের বিশ্বাস ভারত শুধু হিন্দুদের। সেখানে অন্য ধর্মাবলম্বী নাগরিকের সমান অধিকার নেই।

‘গান্ধী এবং নেহরুর অসাম্প্রদায়িক ভারত এখন হিন্দু রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব’লি হচ্ছে।’ ভারতের ২০ কোটি মুসলমানসহ অন্যান্য সং’খ্যালঘু সম্প্রদায় দেশটির জাতিসগত নিধনের শি’কার হচ্ছে বলে অ’ভিযোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, আসামে প্রায় ২০ লাখ মুসলমানের নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে। তাদের অনেকে এখন আ’টক কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযান করছেন।

‘মুসলমানদের মিথ্যে দো’ষে দো’ষারোপ করা হয়েছে। করোনা ছড়ানোর জন্য অযথা তাদের হ’য়রানি করা হয়েছে। বহুবার তাদের চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের ব্যবসা বাণিজ্য বয়কট করা হয়েছে। গরু রক্ষার নামে মুসলমানদের হ’ত্যা করা হয়েছে। গেল ফেব্রুয়ারিতে পুলিশের সহায়তায় নয়াদিল্লিতে মুসলমানদের হ’ত্যা করা হয়েছে।’ বলেন ইমরান খান।

‘অতীতের এ ধরনের ঘ’টনা গ’ণহ’ত্যার পূর্বাভাস হিসেবে চিহিৃত হয়েছে। যেমন ১৯৩৫ সালে জার্মানির নুরেমবার্গ আইন, পরে ১৯৮২ সালে মিয়ানমারেও গ’ণহ’ত্যার আগে এসব ঘ’টনা ঘটানো হয়।’ বলেন ইমরান খান। এ ধরনের নৃ’শংসতা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

মুসলমান, খ্রিস্টান এবং শিখ সম্প্রদায়ের ৩০ কোটি মানুষকে ভারতের উগ্রহিন্দুত্ববাদীরা সং’খ্যালঘু করতে চায় বলে সতর্ক করেন তিনি। নজিরবিহীন এমন ইতিহাস ভবিষ্যত ভারতের জন্য সুখকর হবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, বঞ্চিত এসব মানুষ নিজেদের অধিকার আদায়ে উগ্রবাদী মতাদর্শে অনুপ্রাণিত হতে পারে।

ইমরান খান বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেন, গেলো ৭২ বছর ধরে অ’বৈধভাবে, কাশ্মীরীদের ইচ্ছার বি’রুদ্ধে, জাতিসংঘের প্রস্তাবনা এবং নিজেদের প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করে জম্মু-কাশ্মীরে অবরোধ আরোপ করে রেখেছে ভারত।

‘গেলো বছরের ৫ আগস্ট ভারত অ’বৈধ এবং একতরফাভাবে কাশ্মীরের মর্যাদা বাতিলের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করে। দখলকৃত অঞ্চলে ৮০ লাখ মানুষের জন্য ৯ লাখ সেনা মোতায়েন করে নয়াদিল্লি। সামরিকীকরণ করা হয় কাশ্মীরকে।’ বলেন ইমরান খান।

গেলো বছরের আগস্ট থেকে কাশ্মীরে ভ’য়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্যউপাত্য তুলে ধরেন ইমরান খান। বলেন, ১৩ হাজার কাশ্মীরী যুবকে আ’টক করে ভারত। তাদের ওপর চা’লানো হয় নি’র্মম নি’র্যাতন। ওই অঞ্চলে জারি করা হয় কারফিউ। যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়া হয়। শান্তিপূর্ণ বি’ক্ষোভকা’রীদের ওপর ছ’ররা গু’লি, ভয়া’বহ শা’স্তি চা’পিয়ে দেয়া, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক ধ্বং’স করা, শত শত নি’রাপরাধ কাশ্মীরীকে বিচারবহির্ভূতভাবে হ’ত্যাসহ ভারতীয় বাহিনীর নৃশং’সতাও ‍তুলে ধরেন ইমরান খান।

ইমরান খান বলেন, নি’র্মমভাবে হ’ত্যার পর অনেক কাশ্মীরীর ম’রদে’হ ফেরত দেয়নি ভারতীয় বাহিনী। এধরনের খবর প্রকাশ থেকে কাশ্মীরের গণমাধ্যমকে বাধা দেয়া হয়। এসব তথ্য জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার কাছে রয়েছে।

তিনি বলেন, অবশ্যই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনে জড়িত ভারতের বেসামরিক এবং সামরিক ব্যক্তিদের বিচাররের আওতায় আনতে হবে। ভয়াবহ মানবতাবিরোধী এসব অ’পরাধে জ’ড়িতের দায়মুক্তি দিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতীয় রাষ্ট্রীয় স’ন্ত্রাসবা’দের বিচার জরুরি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ভারতের এসব নৃশং’সতাকে আরএসএস এবং বিজেপি কাশ্মীরের জন্য চূড়ান্ত সমাধান বলে উল্লেখ করেছে বলে দাবি করেন ইমরান খান। কাশ্মীরীদের আ’ত্মপরিচয় এবং জাতিসংঘের প্রস্তাবনা মিটিয়ে দেয়ার জন্য নয়াদিল্লি এসব করছে বলেও মত তার।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ইমরান খান বলেন, সাহসী কাশ্মীরীরা কখনো ভারতের দখলদারিত্বের কাছে মাথা নত করবে না। যুগের পর যুগ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কাশ্মীরীরা ভারতীয় আগ্রাসন থেকে নিজেদের মুক্ত করার জন্য ল’ড়ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পাকিস্তান সরকার এবং দেশটির জনগণ কাশ্মীরী ভাই-বোনদের ন্যায্য অধিকার আদায় এবং আ’ত্মপরিচয় রক্ষার সংগ্রামে সব সময় পাশে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও জানান ইমরান খান।

সূত্র: ডন। ভাষান্তর: ফাইয়াজ আহমেদ

ad

পাঠকের মতামত