340853

যে কারণে শ্যারন গাজাকে বলতেন মধ্যপ্রাচ্যের হংকং

হামাস মিসরের গাজা সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করত। ফিলিস্তিনিদের বিভিন্ন দল-উপদল রাজনীতি ও সমরে পৃথকভাবে কখনো যৌথভাবে কাজ করে। অর্থাৎ এদের মধ্যে একটি স্থায়ী বিরোধ চলমান। বিরোধ ছাড়া এসব এলাকার লোকজন যেন বেঁচে থাকতে পারে না। গাজায় ২০১৭ সালে পিএ নিয়ন্ত্রণ করে। ওই সালে বিভিন্ন দল-উপদলের মধ্যে একটি ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তাই বর্ডার থেকে পিএর লোকজনকে বের করা ঐক্যের ওপর বড় একটি আঘাত। আবার ইসরাইল খান ইউনুছে, উত্তর গাজায় রকেট হামলা চালায়, হামাসও রকেট চালায়। মূলত এগুলো কোনো কাজে আসেনি। ইসরাইল ছুতা পেয়ে গাজায় প্রচণ্ড হামলা চালায়। আল জয়তুন ও জাবালিয়া উদ্বাস্তু শিবির মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উল্লেখ্য, যে হামাসের কোনো অবস্থানে হামলা করা হয়নি। তা ছাড়া কাতার ১৫ মিলিয়ন ডলার সহায়তা বন্ধ করে দেয়। ইসরাইল কাতারকে জানায় যে, হামাসের মাধ্যমে ক্যাশ সহায়তা প্রদান করা যাবে। এভাবে সমঝোতা হওয়ার পরও পরদিন ইসরাইলিরা এক ফিলিস্তিনি জেলেকে গু’লি করে হ’ত্যা করে। অহরহ এমনই হচ্ছে।

ইসরাইলি পরিকল্পনায় পশ্চিম তীরের ৩০ শতাংশ দখল করা হয়েই আছে এখন ঢাকঢোল পিটিয়ে সার্বভৌম ক্ষমতা প্রয়োগ, সোজা কথায় ইসরাইলিকরণ। ২০ লাখ মানুষ, যার অর্ধেক শিশু, গাজায় অবরুদ্ধ। জাতিসঙ্ঘের মতে, বসবাসের অযোগ্য এলাকা। তাদের কোথাও পালানোর জায়গাও নেই, এখন ৯৭ শতাংশ পানি সম্পূর্ণ খাওয়ার অযোগ্য, দিনরাত মাত্র ৪ ঘণ্টা বিদ্যুৎ, বেকারত্বের হার বিশ্বের সর্বোচ্চ।

ইসরাইলি দখলদারিত্বের মুখে গাজার সশস্ত্র দলগুলো যুদ্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে। হামাস ও আল কাসেম ব্রিগেড। অধিনায়ক আবু ওবায়দা বলেন, সার্বভৌমত্ব ঘোষণা যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। কেননা এরপর গাজা দখল হতে কোনো সময়, প্রস্তুতি ও শক্তির প্রয়োজন হবে না। তাই ফাতাহ ও হামাস জুলাই মাসের ২ তারিখ রামাল্লায় একত্রিত হয়ে যুদ্ধ ঘোষণা দেয়। তারা আরো বলে, পূর্বের সব চুক্তি বাতিল করা হলো, অসলো চুক্তিরও আর প্রয়োজন নেই। উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল থেকে গাজাকেন্দ্রিক ফিলিস্তিনিরা কিছুটা শক্তি সঞ্চয় করেছে। যেমন খান ইউনুছে, দক্ষিণ গাজায় ইসরাইলিরা যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে। ফলে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এভিগডোর লিবারম্যান পদত্যাগ করেন। ২০১৪ সালে ঘরবাড়ি মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় ইসরাইল, সেগুলো পুনর্বাসনের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা পাওয়া গিয়েছিল কিন্তু ইসরাইলি অসহযোগিতার কারণে এক হাজার ৫০০ ঘরবাড়ি এখনো তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ওই সময় ৪০০ জন নিহত হয়। এক মেজরসহ ১৭ ইসরাইলি সেনা হ’ত্যা ও বেশ কয়েকটি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান এক দিনে ধ্বংস করে ফিলিস্তিনিরা। এগুলো হঠাৎ স্ফুলিঙ্গ!

২০০৫ সালে ইসরাইল এককভাবে গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার করেছিল, তখন অ্যারিয়েল শ্যারনের সময়। তিনি গাজার মূল্য বুঝতেন, বলতেন, ‘গাজা মধ্যপ্রাচ্যের হংকং’। ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনি উভয় এখন এই সেনা প্রত্যাহারের দিনটি পালন করে! এমন কাজ ইসরাইলিরা পশ্চিম তীরে করেছে, গোলান হাইটসেও করেছে। এখন জর্দানের অন্যান্য সীমান্তে বাকি। ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি তো আছেই। ইসরাইলিরা এখন বলছে, এই সেনা প্রত্যাহার বোকার মতো কাজ হয়েছে। ইসরাইলের লক্ষ্যের সাথে এর কোনো মিল নেই। সেনা প্রত্যাহারের ১৫ বছর পরও ইসরাইল বুঝতে পারছে না এই কাজ থেকে কী পেল? লাভ না লোকসান? এ দিকে আরব রাষ্ট্রগুলো লাইন ধরে ইহুদিদের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করছে। মিসর, জর্দান, আমিরাত, বাহরাইন। অন্যরা ফরোয়ার্ড মার্চ করে ব্যারাক থেকে বের হচ্ছে। এটিই এখন বুদ্ধিমানের কাজ। ৬০ বছর সম্পর্ক ছাড়াই বেদম মার খেয়েছে, এখন সম্পর্ক করার পরও একই মার খাচ্ছে। পত্র-পত্রিকাগুলো এর প্রমাণ।

অতীত থেকে আজতক কোনো ইসরাইলি নেতা ফিলিস্তিনিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের কথা বলেননি। ইহুদি ডারউইনের তত্ত্ব ‘জোর যার মুল্লুক তার’ এই নিয়মই মেনে চলছে। নি’র্যাতনকলার প্রয়োগ করে কিভাবে নির্জীব করা যায় তা নিয়ে ইসরাইল গবেষণা ও প্রয়োগ করেছে গাজাবাসীদের ওপর। নি’র্যাতনের বিচিত্র কৌশল নিয়ে লিখিত হয়েছে অনেক দামি বই। দেয়া হচ্ছে ডক্টরেট ডিগ্রি।

গাজা এক্কেবারে শেষ হতে বেশি কিছু বাকি নেই। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ইমার্জেন্সি চলছে। হামাস
গোলাগু’লি চালিয়ে নিজেদের অস্তিত্ব প্রচার করছে এবং

কাতার থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে দিনযাপন করছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ইসরাইল প্রতি বছর গাজায় ৫০০-৮০০ বার আক্রমণ চালিয়ে মানুষ হ’ত্যা করে। অথচ আরব বিশ্ব
নীরব, মঙ্গলগ্রহে উপগ্রহ পাঠাচ্ছে অর্থহীন উদ্দেশ্যে। ইসরাইল গাজায় একটি সর্বাত্মক যুদ্ধ চায়, যুদ্ধ মানে গাজার পতন। এখন ইসরাইল যখনই প্রয়োজনবোধ করবে তখনই গাজা অধিকার করতে সক্ষম। কেননা গাজার কোনো প্রাণরস অবশিষ্ট নেই।

 

ad

পাঠকের মতামত