339815

ভা’রত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করা নিয়ে যা বললেন বাণিজ্যমন্ত্রী

ভা’রতে পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির খবরে দেশের বাজারেও নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। মাত্র কয়েক দিনে কেজিতে পেঁয়াজের দাম প্রায় ৩০ টাকা বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় উঠেছে। এবার ভা’রত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে বলে খবর প্রকাশ হয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলছেন, এখনো রফতানি বন্ধের খবর নেই। ভা’রতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

তাছাড়া ভা’রত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিলে কিছুটা সমস্যা হলেও গতবারের মতো খা’রাপ অবস্থা হবে না বলেও জানান তিনি। কারণ এবার গত বছরের অ’ভিজ্ঞতা থেকে বেশ আগে থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে সরকার। এমনকি পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ইতোমধ্যে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ টাকায় বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভা’রত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলে সে সময় দেশের বাজারে হু হু করে দাম বাড়ে। রেকর্ড ৩০০ টাকা পর্যন্ত ওঠে পেঁয়াজের কেজি। এই পরিস্থিতি চলমান ছিল কয়েক মাস।

ভা’রত নিজেদের বাজার সামাল দিতে গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানিতে ন্যূনতম প্রতি টনের মূল্য ৮৫০ ডলার বেঁধে দেয়। ৩০ সেপ্টেম্বর রফতানিই নিষিদ্ধ করে। এরপর দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম সেঞ্চু’রি-ডাবল সেঞ্চু’রিও অ’তিক্রম করে। নভেম্বরে ৩০০ টাকা ওঠে পেঁয়াজের কেজি। তখন মিয়ানমা’র, চীন, মিসর ও পা’কিস্তান থেকে পেঁয়াজ এনে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করে সরকার। বিমানেও দেশে আসে পেঁয়াজ।

ভা’রত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে কিনা- এ বিষয়ে জানতে চাইলে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) টিপু মুনশি বলেন, ‘না, আম’রা এখনো জানি না। তবে আপনি ও আরও একজনের কাছে শুনলাম। আম’রা এখন বিষয়টা চেক করছি। তবে বন্ধ করে দিয়েছে এমন খবর আমাদের কাছে নেই। আম’রা আজকেই চেক করে জানব আসলে কী’ হয়েছে।’

পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ইস্যুতে ভা’রতের সঙ্গে কোনো আলোচনা করবেন কিনা- জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, ‘আজ মনে হয় ভা’রত এ বিষয়ে নিজেদের করণীয় ঠিক করতে বৈঠকে বসেছে। হয়তো রফতানির মূল্য পরিবর্তন না-কী’ করবে, দেখা যাক। ভা’রতের সঙ্গে আম’রা যোগাযোগ অব্যাহত রাখছি।’

যদি ভা’রত রফতানি বন্ধ করে দেয় তাহলে সরকারের কী’ পরিকল্পনা রয়েছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘ভা’রত বন্ধ করে দিলে সমস্যা একটু হবে। আম’রা বিকল্প মা’র্কেট হিসেবে অন্যান্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আম’দানি করব। ইতোমধ্যে সে বিষয়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা করি আম’রা অন্যান্য দেশ থেকে চাহিদা অনুযায়ী পেঁয়াজ আম’দানি করতে পারব।

এদিকে চলমান করো’নাভাই’রাস (কোভিড-১৯) মহামা’রি ও বর্তমান ব’ন্যা পরিস্থিতিতে ভোক্তাদের জন্য রোববার থেকে সাশ্রয়ীমূল্যে সারাদেশে পণ্য বিক্রি শুরু করছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)।

টিসিবির ট্রাক থেকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ পাওয়া যাবে ৩০ টাকায়, যা একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি কিনতে পারবেন। এছাড়া প্রতি কেজি চিনি পাওয়া যাবে ৫০ টাকায়, যা একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই কেজি কিনতে পারবেন। মসুর ডাল ৫০ টাকা কেজিতে একজন ক্রেতা সার্বোচ্চ দুই কেজি নিতে পারবেন। এছাড়াও সয়াবিন তেল ৮০ টাকা লিটারে একজন ক্রেতা দুই থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লিটার নিতে পারবেন।

দেশব্যাপী ২৭৫ জন ডিলারের ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে এ বিক্রয় কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ঢাকায় ৪০টি, চট্টগ্রামে ১০টি, রংপুরে সাতটি, ময়মনসিংহে পাঁচটি, রাজশাহীতে পাঁচটি, খুলনায় সাতটি, বরিশালে পাঁচটি, সিলেটে পাঁচটি, বগুড়ায় পাঁচটি, কুমিল্লায় পাঁচটি, ঝিনাইদহে তিনটি ও মাদারীপুরে তিনটি করে মোট ১০০টি ট্রাক থাকবে।

অন্যান্য জে’লার প্রতিটিতে দুটি করে ১০৪টি এবং আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাভুক্ত উপজে’লার জন্য পর্যায়ক্রমে অ’তিরিক্ত পাঁচটি করে মোট ৬০টি ট্রাকে এসব পণ্য বিক্রি করা হবে। এছাড়া ব’ন্যাকবলিত জে’লা তথা ময়মনসিংহে চারটি, রংপুরে চারটি, বগুড়ায় তিনটি, মাদারীপুরে অ’তিরিক্ত দুটি করে ট্রাকে পণ্য বিক্রি করা হবে।

পেঁয়াজ আম’দানির ওপর আরোপিত পাঁচ শতাংশ শুল্ক প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআরকে) চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ বছর পেঁয়াজের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সম্প্রতি বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দীন জাগো নিউজকে বলেন, আম’রা পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন। এবার গতবারের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টির কোনো শ’ঙ্কা নেই। গতবার একেবারে অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। এবার আম’রা খুব সতর্ক। টিসিবিসহ দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অভ’য় দিলেও চলতি সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম থেকে অস্থিরতা বিরাজ করছে পেঁয়াজের বাজারে। হঠাৎ করেই সব ধরনের পেঁয়াজের দাম প্রায় ৩০ টাকা করে বেড়ে বর্তমানে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একমাস আগেই দেশের বাজারে দেশি পেঁয়াজের কেজি ৪০ টাকার মধ্যে ছিল। ভা’রতীয় পেঁয়াজের কেজি ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা।

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম দ্রুত কমাতে জরুরি ভিত্তিতে তুরস্ক থেকে এক লাখ টন পেঁয়াজ আম’দানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া জিটুজি বৈঠকের পর মিয়ানমা’র থেকে ফের পেঁয়াজ আম’দানি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে এই পেঁয়াজ জাহাজে করে দেশে আনবেন বেসরকারি খাতের আম’দানিকারকরা।

ad

পাঠকের মতামত