336150

যেভাবে মুক্তি পান সেই জজ মিয়া

২০০৪ সালে ২১ আগস্ট। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রে’নেড হা’মলা। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা সেদিন অল্পের জন্য এই ভ’য়াবহ হা’মলা থেকে বেঁ’চে গেলেও আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমান ও অপর ২৪ জন এতে ‘নি’হত হন। এ ছাড়া এই হা’মলায় আরো ৪০০ জন আ’হত হন। আ’হতদের অনেকেই চিরতরে প’ঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।

এই বর্বরোচিত গ্রে’নেড হা’মলায় নি’হতদের মধ্যে ছিলেন- আইভি রহমান, শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব.) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা), মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া।

মা’রাত্মক আ’হতরা হলেন শেখ হাসিনা, আমির হোসেন আমু, প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, মোহাম্মদ হানিফ, সম্প্রতি প্রয়াত অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, নজরুল ইসলাম বাবু, আওলাদ হোসেন, মাহবুবা পারভীন, অ্যাডভোকেট উম্মে রাজিয়া কাজল, নাসিমা ফেরদৌস, শাহিদা তারেক দীপ্তি, রাশেদা আখতার রুমা, হামিদা খানম মনি, ইঞ্জিনিয়ার সেলিম, রুমা ইসলাম, কাজী মোয়াজ্জেম হোসেইন, মামুন মল্লিক প্রমুখ।

এই গ্রে’নেড হা’মলার ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান জজ মিয়াকে দিয়ে সাজানো হয় মিথ্যা মা’মলা। তাকে ক্র’সফা’য়ারের ভ’য় দেখিয়ে আদায় করা হয় মিথ্যা স্বী’কারোক্তি। এর আগে তাকে বিদেশে ভালো চাকরির প্রলোভন দেওয়া হয়। কিছুদিন জজ মিয়ার পরিবারকে সিআইডি প্রতিমাসে দুই হাজার করে টাকাও দেয়।

এক সময় সেই টাকাও বন্ধ হয়ে যায়। মা’মলা চালাতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায় তার পরিবার। পাঁচ বছর কারাভোগের পর ২০০৯ সালে জজ মিয়া কা’রাগার থেকে মুক্তি পান।

যেভাবে মুক্তি পেলেন জজ মিয়া-প্রথম থেকেই এই নারকীয় হা’মলার ঘটনায় তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। আষাঢ়ের গল্পের নায়ক বানিয়ে বলির পাঠা করানো হয়েছিল নিরীহ তরুণ জালাল আহমেদ ওরফে জজ মিয়াকে। নোয়াখালীর সেনবাগের গ্রামের বাড়ি থেকে ধরে আনা হয়েছিল তাকে।

এর প্রায় দুই বছর পর ২০০৬ সালের আগস্টে এই নাটকের পেছনের ঘটনা ফাঁ’স করে দেন জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুন। জজ মিয়াকে গ্রে’নেড হা’মলা মা’মলার রাজসাক্ষী করতে সিআইডির প্রস্তাবের কথা ফাঁ’স করে দিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জজ মিয়াকে গ্রে’ফতারের পর থেকেই তার পরিবারকে মাসে মাসে ভরণপোষণের টাকা দিয়ে আসছে সিআইডি।

২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ মামলা তদন্তের নতুন করে উদ্যোগ নেয়া হয়। তদন্ত শেষে সিআইডির এএসপি ফজলুল কবীর ২০০৮ সালের ১১ জুন হ’ত্যা ও বি’স্ফোরক আইনে আদালতে দুটি অভিযোগপত্র জমা দেন। তাতে ২২ জনকে আ’সামি করা হয়। সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু ছাড়া বাকি আ’সামিদের সবাই হুজি-বির জ’ঙ্গি। এ সময় আ’সামির তালিকা থেকে জজ মিয়ার নাম বাদ দিয়ে অভিযোগপত্র জমা দেয় সিআইডি। পরে আদালত এ মা’মলা থেকে তাকে অব্যাহতি দিলে ২০০৯ সালে মুক্তি পান জজ মিয়া।

এরপর সিআইডি এ মা’মলার অধিকতর তদন্ত করে। ২০১১ সালের ৩ জুলাই সম্পূরক অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি। তাতে আরও ৩০ জনকে আ’সামি করা হয়। এতে ফেঁ’সে যান জজ মিয়া নাটকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারাও। এ মামলায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর রায় হয়। রায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৯ জনের ফাঁ’সির দ’ণ্ড, তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কা’রাদণ্ড এবং ১১ জনের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়।

২১ আগস্টের গ্রে’নেড হা’মলার মা’মলায় যখন জজ মিয়াকে ফাঁ’সানো হয় তখন তার বয়স ছিল ২৫ বছর। নোয়াখালীর সেনবাগে ভিটেমাটি থাকলেও গুলিস্তান সিনেমা হলের সামনে পোস্টার ও ক্যাসেট বিক্রি করে কোনোমতে জীবিকা চলত। তাকে মুক্ত করতে ছয় বছরের আইনি লড়াইয়ে সেই ভিটেমাটিও বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছিল জজ মিয়ার পরিবার। সূত্রঃ বিডি২৪লাইভ

ad

পাঠকের মতামত