330771

বিশ্বনবি যেভাবে দোয়া করতেন

ধর্মবার্তা।। সব গুণের সেরা গুণ, সব সুন্দরের সেরা সুন্দর বলে কথা। দুনিয়ার হায়াতে জিন্দেগীতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সেরা গুণ ছিল হৃদয় দিয়ে পরম দরদ ও মমতায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। তিনি দুনিয়ার জীবনে এত বেশি দোয়া করেছেন যে, তাঁর সমপরিমাণ দোয়া আর কেউ করেনি।

যেভাবে দোয়া করতে তিনি… প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দোয়া যেন বহু চাঁদের মাঝে এক পূর্ণিমার চাঁদ। তাঁর দোয়ায় ছিল প্রচণ্ড আকর্ষণ, হৃদয়ের উত্তাপ, বিনয়-কাতরতার। ছিল প্রচণ্ড আবেদন, নিবেদন ও মুখাপেক্ষিতা। ছিল কান্না!, অশ্রুপ্লাবিত কান্না। যেভাবে তিনি নিজে দোয়া করেছেন। ঠিক সেভাবে তিনি তাঁর উম্মতকেও শিখিয়েছেন। তিনি যে ছিলেন সব বিষয়ের জগত সেরা মুয়াল্লিম বা শিক্ষকা। হাদিসে এসেছে-

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আমি তোমাদের জন্য শিক্ষক হিসেবে প্রেরিত হয়েছি।’

হাদিসের অসংখ্য বর্ণনা রয়েছে। দুনিয়ার জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই ছিল দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনায় ভরপুর। সে দোয়াগুলো ছিল একান্ত ভক্তি ও মুহাব্বাতে পরিপূর্ণ। তাই উম্মতের জন্য নিবিড় ভালোবাসায় আল্লাহর সঙ্গে একান্ত সুসম্পর্ক তৈরি করার সর্বোত্তম মডেল। অন্তর দিয়ে, মন দিয়ে, প্রাণ দিয়ে, জান দিয়ে প্রিয় নবির মতোই হোক প্রতিপালকের দরবারে আপনার দোয়া ও প্রার্থনা।

যেভাবে আল্লাহর কাছে চাইবেন… আল্লাহর কাছে যে কোনো কিছু চাইবেন কাঙ্গাল ও ভিখারী হয়ে। অন্তরে এ বিশ্বাস থাকবে যে- ‘আল্লাহ আপনার দোয়া, আপনার মোনাজাত, আপনার চাওয়া, আপনার ফরিয়াদ অবশ্যই কবুল করবেন। কবে, কীভাবে, কখন তিনি তা কবুল করবেন তা আপনি জানেন না। শুধু এটুকু জানেন যে, আল্লাহ আপনার দোয়া ও মোনাজাত অবশ্যই কবুল করবেন।

প্রিয় নবির হৃদয়গ্রাহী দোয়া… দোয়া যদি দিল থেকে মন থেকে না হয় তবে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার ব্যাপারে সন্দেহ থাকে। সে কারণে দোয়া হবে হৃদয়গ্রাহী। ঠিক প্রিয় নবির মতো। যে দোয়ায় থাকবে আবেদন-নিবেদন, কাকুতি-মিনতি, কান্না-প্রবল কান্না, হৃদয়ের হাহাকার।

প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এমন কিছু হৃদয়গ্রাহী দোয়ার নমুনা তুলে ধরা হলো- -হে আল্লাহ! আমাকে বানিয়ে দিন এমন, যেন আপনাকে (সর্বাপেক্ষা অধিক) ভয় করি, সর্বক্ষণ আপনাকে দেখার মত, যতক্ষণ না আপনার দিদার লাভ হয়।

– হে আল্লাহ! আমাকে আপনার তাকওয়া (ভয়) দ্বারা খোশ-নসিব করুন। আমি যেন আপনার নাফরমানির দ্বারা বদ-নসিব না হই।

-হে আল্লাহ! আপনার জিকির (শোনার ও অনুধাবন)-এর জন্য আমার দিলের কানগুলো খুলে দিন। আর আমাকে আপনার আনুগত্য এবং আপনার রাসুলের আনুগত্য এবং আপনার কিতাবের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন।

– হে আল্লাহ আপনার কাছে স্থায়ী ও সত্য ঈমান, অনুগত হৃদয়, সরল দ্বীন চাই। আপনার কাছে রোগ-শোক থেকে নিরাপত্তা চাই। আপনার কাছে স্থায়ী নিরাপত্তা চাই। আপনার কাছে নিরাপত্তার উপর শোকর করার যোগ্যতা চাই আর আপনার কাছে মানুষের প্রতি মুখাপেক্ষী হওয়া থেকে আশ্রয় চাই। আল্লাহ আপনার সহায়তা ছাড়া আমাদের যে কোনো শক্তি নেই।

মুমিন বান্দার উপলব্দি… রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হৃদয়গ্রাহী দোয়া থেকে মুমিন বান্দার উপলব্দি কেমন হওয়া জরুরি। তাদের প্রতিটি কাজেই আল্লাহর উপস্থিতির উপলব্দি থাকে আবশ্যক। তবেই তাদের দ্বারা কোনো অন্যায় কাজ সংঘটিত হবে না। তখনই স্বার্থক হবে মুমিন বান্দার সব দোয়া এবং রোনাজারি। আল্লাহর কাছে যেন সবাই সব সময় এভাবে রোনাজারি করে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা ও কল্যাণের আশা করতে পারে।

মুমিনের সেরা রোনাজারি হবে এমন…
اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي يَا غَفُوْرُ
উচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওউন; তুহিব্বুল আফ্ওয়া; ফাফু আন্নি; ইয়া গাফুরু।
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল; আপনি ক্ষমাকে ভালবাসেন; সুতরাং আমাদেরকে ক্ষমা করুন। হে ক্ষমাকরী।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুসরণ ও অনুকরণে তারই কাছে হৃদয়গ্রাহী সব দোয়া ও রোনাজারি যথাযথভাবে করার তাওফিক করুন। দুনিয়া ও পরকালের সফলতা ও কল্যাণ লাভের তাওফিক দান করুন। অনুগত ও বিনয়ী বান্দা হিসেবে কবুল করুন। আমিন।

ad

পাঠকের মতামত