324053

টাকার জোরে করোনা মৃ’ত্যু রুখে দিয়েছে কাতার!

আন্তর্জাতিক ডেস্ক।। প্রথমেই বলি, কাতার ধনী দেশ। ফলে তার রাজধানী দোহাও বড়লোকের জায়গা। আমি অবশ্যই এ দেশের মানুষের কথা বলছি। তারা সত্যিই অন্য গ্রহের বাসিন্দা। আমরা যারা চাকরি করি এ দেশে, তারা নিজেদের দেশে যেমন, এই প্রবাসেও তেমনই মধ্যবিত্ত।

সীমিত রোজগারে যতটুকু সঞ্চয় করা যায়, তা দিয়েই স্বপ্ন দেখি। এ দেশের ওয়ার্ক ফোর্সের একটা বড় অংশ দক্ষিণ এশিয়া আর আফ্রিকা থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিকের দল। প্রায় ২০ লক্ষ। এর মধ্যে প্রচুর ভারতীয়। বাঙালিও অনেক। তারা অবশ্য নিম্নবিত্ত। এখানে নানা প্রকল্পে কাজের জন্য আসেন। কষ্ট করে ক্যাম্পে থাকেন। কিছু টাকাপয়সা জমিয়ে দেশে ফিরে যান।

গত বছর থেকে এ রকম শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে গেছে দোহায়। কারণ, ২০২২ সালে ফিফা বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ কাতার। স্টেডিয়াম আর অন্যান্য পরিকাঠামো তৈরির কাজে লাগানো হয়েছে হাজার হাজার শ্রমিককে। শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপ আদৌ হবে কিনা, সেটা বলবে সময়। এখনো যেহেতু সেটা টোকিও অলিম্পিকের মতো বাতিল হয়ে যায়নি, তাই করোনা স’ঙ্কটের মধ্যেও বেশ কিছু জায়গায় নির্মাণকাজ চলছে, এ রকম খবর দেখা যাচ্ছে মিডিয়ায়। এ ছাড়া দোহার ঠিক বাইরেই বিশাল শিল্প এলাকা, যেখানে এখন অধিকাংশ কারখানা বন্ধ থাকলেও লাগোয়া ক্যাম্পগুলোতে রয়ে গেছেন শ্রমিকেরা। তাদের যদিও খাবার বা স্যানিটাইজার সরবরাহ করছে সরকার, কিন্তু বেসরকারি কারখানার মালিক যে বেতন দেবেনই, তা নিশ্চিত করবে কে?

পরিযায়ী শ্রমিকদের সম্পর্কে এতগুলো কথা বলার কারণটা এবার বলা যাক। মার্চ মাসেই কাতারে করোনা সং’ক্রম’ণের হার আরব দুনিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছিল। এখন তো ৩০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। আ’ক্রা’ন্তের বেশির ভাগটাই পরিযায়ী শ্রমিক। মিডিয়া বলছে, ক্যাম্পগুলোতে একটা ডর্মিটরিতে অনেক লোক একসঙ্গে থাকার কারণে সং’ক্রম’ণ ছড়িয়েছে। ঠিক সিঙ্গাপুরের মতো। আবার এখানেই লুকিয়ে রয়েছে মৃ’ত্যু’র হার কম হওয়ার রহস্য। কাতারে এখন পর্যন্ত মাত্র ১৪ জনের মৃ’ত্যু হয়েছে। মানে ০.১ শতাংশেরও কম। বিশ্বে সবচেয়ে কম। যেহেতু শ্রমিকদের গড় বয়স কম, তাই করোনা তাদের প্রা’ণ কেড়ে নিতে পারছে না। এ ছাড়া অবশ্য এ দেশের স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রশংসা করতেই হয়। হাসপাতালগুলোতে প্রচুর পরিমাণে আইসিইউ বেড, টেস্টিংয়ের সুবিধা রয়েছে। তাই সং’ক্রমণ বাড়লেও প্রাণহানি কমই হচ্ছে। সরকার থেকে সব রকম মাধ্যমেই জোরদার প্রচার চালানো হচ্ছে করোনা সচেতনার। মানুষ কিন্তু স্বেচ্ছায় সে–সব মেনে চলছেন।

দোহা জায়গাটা ভারি সুন্দর। পারস্য উপসাগরের ধারে দোহা বে–র ওপর এই শহরটার প্রাচীন ঐতিহ্য রয়েছে, আবার সেই সঙ্গে আধুনিকতার ছাপ সর্বত্র। একদিকে প্রাচ্যের সংস্কৃতির নিদর্শন মিনারে, কেল্লায়, মসজিদে, পুরনো বাজারে, অন্যদিকে পাশ্চাত্যের নামকরা শহরগুলোর মতো আকাশছোঁয়া বাড়ি, চোখ ধাঁধানো শপিং মল, তাক লাগানো সব গাড়ি। এখন অবশ্য রাস্তা ফঁাকা, হাতে গোনা কয়েকটা লোক। মুদি দোকান এবং ফার্মেসি ছাড়া আর তো কিছুই প্রায় খোলা নেই। সৈকত, পার্ক, কাফে, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হল, জিম —সব বন্ধ মার্চের মাঝামাঝি থেকে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় তো তারও আগে বন্ধ হয়ে গেছে। আমি যে স্কুলে পড়াই, সেখানকার ছেলেমেয়েদের জন্য ভার্চুয়াল ক্লাসের ব্যবস্থা হয়েছে। জুম, মাইক্রোসফট টিমসের মতো অ্যাপের সাহায্যে পড়াচ্ছি স্বাভাবিক স্কুল রুটিনে। একদম অন্য রকম অভিজ্ঞতা, বেশ চ্যালেঞ্জিং।

দোহার এয়ারপোর্ট পৃথিবীর অন্যতম ব্যস্ত বিমানবন্দর। ভারত তো বটেই, এশিয়ার অন্যান্য জায়গা থেকেও ইওরোপ, আমেরিকা যেতে গেলে দোহা একটা গুরুত্বপূর্ণ স্টপ ওভার। মার্চের প্রথম দিকেই কাতার সরকার বড়সড় ট্রাভেল ব্যান আরোপ করার ফলে সেই এয়ারপোর্ট ফাঁকা। প্রচুর আর্থিক ক্ষ’তি, সন্দেহ নেই। কিন্তু মানতেই হবে, অত্যন্ত বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত। অত আগে, যখন পৃথিবীর বহু দেশই বিদেশি বিমান আসা–যাওয়া নিয়ন্ত্রণের কথা ভাবেনি, তখনই এই পদক্ষেপ নিয়ে যথেষ্ট দূরদৃষ্টির পরিচয় দিয়েছিল কাতার। তাই করোনাকে কিছুটা হলেও রুখে দেওয়া গেছে। উৎস: আজকাল

ad

পাঠকের মতামত