323795

দেশে চাঁদ দেখা যায়নি, সোমবার ঈদ

ধর্মবার্তা শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় বাংলাদেশে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে সোমবার। শনিবার সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির বৈঠক শেষে এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়।

বাদ মাগরিব ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে বৈঠকে বসে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। সভায় সভাপতিত্ব করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি শেখ মো. আব্দুল্লাহ।

বৈঠকের পর ধর্ম প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, বাংলাদেশের কোনো জায়গা থেকেই চাঁদ দেখা যাবার খবর পাওয়া যায় নি। সুতরাং সোমবারই ঈদুল ফিতর পালিত হবে।

মূল চাঁদ দেখা কমিটির সাথে একযোগে প্রতিটি জেলায় একটি করে কমিটি কাজ করে। দেশের কোথাও চাঁদ দেখা গেলে সেটি স্থানীয় প্রশাসন বা ইসলামিক ফাউন্ডেশন সংশ্লিষ্টদের মাধ্যমে জেলা কমিটির কাছে পৌঁছায়। পরে জেলা প্রশাসন দ্রুত সেটি নিশ্চিত করে বিভিন্ন ভাবে- যেমন স্থানীয় অনেকে চাঁদ দেখেছে কি-না কিংবা স্থিরচিত্র বা ভিডিও চিত্র এসব দ্রুত সংগ্রহ করে নিশ্চিত হয়ে থাকে স্থানীয় প্রশাসন।

সেক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য ও ভালো দৃষ্টি শক্তিসম্পন্ন কাউকে চাঁদ দেখতে হবে। পরে সে খবরটি যাচাই হয়ে জেলা কমিটি হয়ে কেন্দ্রীয় চাঁদ দেখা কমিটির হাতে পৌঁছায়। একই সাথে আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেশজুড়ে যে ৭৪টি স্টেশন আছে সেখান থেকেও তথ্য নেয় চাঁদ দেখা কমিটি।

যদি আবহাওয়া অনুকূল না থাকে অর্থাৎ খালি চোখে চাঁদ দেখার সুযোগ না থাকলে আবহাওয়া স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যও চাঁদ দেশের আকাশে উঠেছে কি-না তা নিশ্চিত হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

অনিশ্চিত ভবিষ্যতের আশঙ্কার মধ্যেই আসছে এবারের ঈদ। ঈদকে ঘিরে যে আনন্দ-উচ্ছাস থাকার কথা তা ম্লান করে দিয়েছে মহামারী করোনাভাইরাস। করোনা মোকাবেলায় ও সংক্রমণ বিস্তার রোধে সরকারের নির্দেশনায় এবার খোলা মাঠে হচ্ছে না ঈদের নামাজের জামাত। ঈদ জামাত হবে মসজিদের ভেতরে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

এবার হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহে ঈদের জামাত হচ্ছে না। হচ্ছে না শত বছরের ঐতিহ্য ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানের ঈদ জামাতও। তবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে প্রতি বছরের ন্যায় ঈদের ৫টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, এবারের ঈদ জামাত আয়োজনে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিকতা নেই। সাধারণত প্রতি বছর রাজধানীর দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটিতে গড়ে ৫টি করে ঈদ জামাত আয়োজিত হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় বলেন, এবারের ঈদে আমাদের পক্ষ থেকে খোলা মাঠে ঈদ জামাত আয়োজনের কোনো উদ্যোগ থাকছে না। তবে সরকারের নির্দেশনা মেনে মসজিদ গুলোতে ঈদ জামাত আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার বলেন, এ বিষয়ে গতকাল মেয়রের নেতৃত্বে আমাদের একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেই সভায় ডিএনসিসি আওতাধীন এলাকায় কোনো ধরনের ঈদ জামাত আয়োজন না করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক মেয়র এই সিদ্ধান্ত নেন।

ঈদ জামাত প্রসঙ্গে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, করোনাভাইরাসের গণসংক্রমণ রোধে কোনো অবস্থাতেই বাইরে ঈদ জামাত আয়োজন করা যাবে না। এরজন্য সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। আমি নগরবাসীকে অগ্রিম ঈদ শুভেচ্ছা জানাই। আর এটাও অনুরোধ করছি, পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবারের ঈদটা এভাবে উদযাপন করা হোক। আমরা সবাই সুস্থ থাকলে আবার আগের মতো আয়োজন করা যাবে।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে এবার পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।

ইসলামিক ফাউেন্ডশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে প্রতি বছরের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে ৫টি ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৭টায়। এ জামাতের ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মাওলানা মিজানুর রহমান। মুকাব্বির থাকবেন মুয়াজ্জিন হাফেয কারী কাজী মাসুদুর রহমান।

দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৮টায়। এ জামাতে ইমামতি করবেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মুফতি মুহিবুল্লাহিল বাকী নদভী। তৃতীয় জামাত সকাল ৯টা অনুষ্ঠিত হবে। এই জামাতে ইমামতি করবেন পেশ ইমাম হাফেয মাওলানা এহসানুল হক। সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে চতুর্থ জামাত। এ জামাতে ইমামতি করবেন পেশ ইমাম মাওলানা মহিউদ্দিন কাসেম। পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। এ জামাতের ইমামিত করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুহাদ্দিস হাফেজ মাওলানা ওয়ালিয়ুর রহমান খান।

এই ৫টি জামাতে কোনো ইমাম অনুপস্থিত থাকলে বিকল্প ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ।

এদিকে মসজিদের ওযুখানা ব্যবহার না করে প্রত্যেককে নিজ নিজ বাসস্থান থেকে ওযু করে মসজিদে আসাসহ ১৪টি নির্দেশনা দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)।

এবার খোলা স্থানের পরিবর্তে কাছের মসজিদে অনুষ্ঠিত ঈদ জামাতে শারীরিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে নির্দেশনায় বলা হয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাসায় যাতায়াত না করার পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্রে ঘোরাঘুরি না করে নিজ ঘরে ঈদ উদযাপন করতেও বলা হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ১৪টি নির্দেশনায় ডিএমপি জানায়, মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবজনিত কারণে এবার ঈদগাহ বা উন্মুক্ত স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। জীবনের ঝুঁকি বিবেচনা করে কাছের মসজিদে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হবে। এই ক্ষেত্রে প্রয়োজনে একই মসজিদে একাধিক জামায়াতের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

ad

পাঠকের মতামত