315874

যেভাবে লকডাউন ছাড়া করোনা মোকাবিলায় সফল তাইওয়ান ও আইসল্যান্ড!

নিউজ ডেস্ক।। যেখানে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় উন্নত বিশ্বের দেশগুলো চরমভাবে ব্যর্থ সেখানে লকডাউন ছাড়াই করোনা মোকাবিলায় রীতিমতো চমক দেখিয়েছে তাইওয়ান ও আইসল্যান্ড। বিশ্বের অন্যতম সেরা স্বাস্থ্যসেবা খাত গড়ে তোলার পাশাপাশি সার্স মহামারির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েছে তাইওয়ান।

আর লকডাউনের পথে না গিয়েও সংক্রমণ আটকাতে প্রায় চার লাখ নাগরিকের সবাইকেই পরীক্ষার আওতায় নিয়ে এসেছে আইসল্যান্ড। একই সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় দেশ দুটির নাগরিক সচেতনতা সরকারের দায়িত্বকে আরও সহজ করেছে।

গত ২৫ জানুয়ারি চীনের বাইরে তাইওয়ান ও অস্ট্রেলিয়ায় চারজন করে করোনা রোগী শনাক্ত হয়। ১০ সপ্তাহের ব্যবধানে, ৪ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ায় যখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজার ছাড়ায়; তখন তাইওয়ানে এ সংখ্যা সাড়ে তিনশো’র মতো। ২০০৩ সালে সার্স মহামারির অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল দেশটি। সংক্রমণ ঠেকাতে সঠিক সময়ে নিয়েছে সব ধরনের ব্যবস্থা।

আর আইসল্যান্ডে লক্ষণযুক্ত ও লক্ষবিহীন কোনো বাছবিচার না করে সবাইকে পরীক্ষা করার কাজটি বেশ জোরেশোরেই চালিয়ে যাচ্ছে তারা। সন্দেহজনক এলাকার সবাইকে টেস্ট করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরমার্শ অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলছে দেশটির সরকার ও প্রশাসন। কনট্যাক্ট ট্রেসিং বা ট্রেসার স্টাডি ও টেস্টকে প্রধান অস্ত্র করে অব্যাহতভাবে পরীক্ষা করে চলেছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা।

তাই ওয়ানের রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সাবেক মহাপরিচালক ড. স্টিভ কুও বলেন, সার্স মহামারির পরই নতুন আইন পাস হয় তাইওয়ানে। নতুন বিধিমালা অনুযায়ী তখন থেকেই সব হাসপাতালকে কমপক্ষে ৩০ দিনের জন্য সব ধরনের ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম মজুদ রাখতে হয়।

স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির ড. জ্যাসন ওয়াং বলেন, বিমানবন্দরে দ্রুততম সময়ে বিপুলসংখ্যক যাত্রীর স্বাস্থ্যপরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে তাইপে। সেখানেই শেষ নয়। পরবর্তীতেও ব্যক্তিগতভাবে তাদের খোঁজখবর নেওয়া হয় নিয়ম করে, যেন কেউ অসুস্থ হলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আলাদা করে ফেলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়।

নিজ দায়িত্বে নাগরিকদের ঘরে থাকার নির্দেশ দিয়ে তাদের নিয়মিত খাবার ও অন্যান্য নিত্যপণ্য সরবরাহ করছে তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট সাই ইং ওয়েনের সরকার। পুলিশের তরফ থেকে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নিয়মিত মানুষের খবর নেওয়া হচ্ছে।

আইসল্যান্ডের চিকিৎসক স্টেফানসন বলেন, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, আক্রান্তদের মধ্যে যেসব রোগীর লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না কিংবা কম প্রকাশ পাচ্ছে তাদের মাধ্যমেই এটি বেশি ছড়াচ্ছে। আমরা যেহেতু সাধারণ মানুষকে পরীক্ষা করছি তাই এমন মানুষও পাচ্ছি যাদের কোনো লক্ষণ নেই কিন্তু করোনাভাইরাস বহন করছেন। অর্থাৎ তাদের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার আগে ধরা পড়ছে।

সফটওয়্যার সল্যুশন কোম্পানি ‘ডারাক্সে’র পরিসংখ্যানভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘ওয়ার্ল্ডোমিটারে’ প্রকাশিত তথ্যমতে, তাইওয়ানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৩৬৩ এবং মৃতের সংখ্যা পাঁচ। আর আইসল্যান্ডে আক্রান্তের সংখ্যা ১ হাজার ৪৮৬ এবং মৃতের সংখ্যা ৪।

গত বছরের শেষের দিকে চীনের উহান থেকে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস বিশ্বের ২০০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িড়ে পড়েছে। ভাইরাসটির সংক্রমণে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৬৯ হাজার ৪৮৭ জন। সারা বিশ্বে ১২ লাখ ৭৪ হাজার ৫৭৮ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৩৮ জন। উৎস- বিজনেস ইনসাইডার ও আই নিউজ

ad

পাঠকের মতামত