312614

‘এই ডাইনির জন্যই আজকে আমার করুণ দশা’

‘এই ডাইনি আমার জীবনটাকে শেষ করে দিয়েছে। এই ডাইনির জন্যই আজকে আমার করুণ দশা। আজকে ১২ তারিখ। আমার পরিবারকে আজকে আমি চিরতরে মুক্তি দিব। আমাকে পাওয়া যাবে রেললাইনে।’

রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকার প্রেমবাগান রোডের ৮৩৮ নম্বর ‘আশ্রয়’ বাড়ির চারতলার ফ্ল্যাটের (বাসা) ভাড়াটিয়া বিটিসিএলের সহকারী ব্যবস্থাপক রকিব উদ্দিন আহম্মেদের বাসা থেকে গত শনিবার একটি নোটবুক উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাতে লেখা রয়েছে এই কথাগুলো। নোটবুকে এসব তথ্যের পাশাপাশি একটি মোবাইল ফোন নম্বর পাওয়া যায়। পরে নম্বরটিতে কল করলে তা ধরেন বাড়িটির মালিক মনোয়ার হোসেনের স্ত্রী। পুলিশ ওই নারীকে এ বিষয়ে গত শনিবার রাতে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে তিনি বলেছেন, ঘটনার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। রকিব নোটবুকটি অন্য উদ্দেশ্যে লিখেছেন কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য জানিয়েছে। গত শুক্রবার রকিবের ফ্ল্যাট থেকে তাঁর স্ত্রী মুন্নি রহমান ও দুই সন্তানের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

নিহত মুন্নি রহমানের ভাই ও এ ঘটনায় হত্যা মামলার বাদী মুন্না রহমান গতকাল রবিবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার বোন ও ভাগ্নে-ভাগ্নির লাশ উদ্ধারের পর তাদের বাসা থেকে আমরা একটি নোটবুক উদ্ধার করে পুলিশকে দিয়েছি। নোটবুকটি রকিবের। নোটবুকে সে এসব কথার পাশাপাশি তাঁর ঋণগ্রস্ত হওয়াসহ জীবনের অনেক কঠিন কথা লিখে রেখেছে। পুলিশ নোটবুকে পাওয়া ফোন নম্বরটি ঘেঁটে দেখতে পায়, সেটি তাদের (রকিব) বাড়িওয়ালীর। পরে পুলিশ এ বিষয়ে আমাদের সামনেই বাড়িওয়ালীকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।’ মুন্না বলেন, “এখন আমরা এ ঘটনার নেপথ্যে রকিবের বাড়িওয়ালীকেও সন্দেহ করছি। রকিব এখানে ডাইনি বলতে বাড়িওয়ালীকে বুঝিয়েছেন। স্ত্রী-সন্তানের মৃত্যুর আগে বাড়িওয়ালী সম্পর্কে এ ধরনের কথা বলেছিল রকিব। তখন আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিইনি। এ নিয়ে রকিবকে আমরা চাপ দিলে সে বলেছিল, ‘সত্য কথা বললে ওই ডাইনি আমার স্ত্রী-সন্তানকে মেরে ফেলবে।’ এখন মনে হচ্ছে বাড়িওয়ালীর সঙ্গে রকিবের কোনো ঝামেলা আছে। এখন নিখোঁজ রকিবকে পাওয়া গেলেই ঘটনার রহস্য জট খুলবে।” তিনি আরো বলেন, বাড়িটি ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় মোড়ানো। অথচ ঘটনার পর ক্যামেরার ফুটেজ নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। পুলিশ ফুটেজ জব্দ করে এখনো কোনো তথ্য পায়নি।

রকিবের স্বজন ও তদন্তসংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, অনলাইনে মুদ্রা কেনাবেচাসহ বিভিন্ন গোপনীয় ব্যবসার চক্রে পড়েছিলেন রকিব। ওই ব্যবসায় মোটা অঙ্কের টাকা ধরা খেয়েছিলেন তিনি। এতে তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে বনানী ও উত্তরার বিভিন্ন সহকর্মীর কাছ থেকে প্রায় এক কোটি টাকা ধার নেন। কয়েকজন স্বজনের কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে ফেরত দেননি।

এদিকে এ হত্যার ঘটনায় রকিব উদ্দিন আহম্মেদকেই আসামি করে গত শনিবার রাতে দক্ষিণখান থানায় হত্যা মামলা করেছেন নিহত মুন্নির ভাই মুন্না রহমান। তিনি এজাহারে বলেছেন, রকিব এক কোটি টাকার মতো ঋণগ্রস্ত। পাওনাদাররা তাঁকে খুঁজছেন। তবে এই টাকার জন্যই রকিব দুই সন্তান ও স্ত্রীকে হত্যা করেছেন কি না এ বিষয়ে এজাহারে কিছু বলা হয়নি।

সূত্রঃ কালের কন্ঠ

ad

পাঠকের মতামত