312582

আশা জাগিয়েও হতাশার পথে ‘বীর’

বিনোদন প্রতিবেদকঃ অনেক সম্ভাবনার আশা জাগিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২০ সালটি। এটিকে সিনেমার বছর হিসেবেও অনেকে দাবি করছেন। বেশকিছু মানসম্মত ও ভালো বাজেটের সিনেমা রয়েছে মুক্তির তালিকায়। সেখানে অন্যতম হিসেবে ছিল চিত্রনায়ক শাকিব খানকে নিয়ে কাজী হায়াতের প্রথম সিনেমা ‘বীর’। গুণী নির্মাতা, দামি নায়ক; ইন্ডাস্ট্রি অপেক্ষায় ছিল সুপারহিট একটি সিনেমার।

সেই আশাও জেগেছিল শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ৮০ সিনেমা হলে মুক্তি পাওয়ার পর। ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত ঘিরে দেশজুড়েই ছিল উৎসব আমেজ। সেই আমেজে সিনেমা হলগুলোতে ভিড় নেমেছিল দর্শকের। তবে মন খারাপের খবর হলো শনিবার থেকেই ভাটা পড়েছে দর্শক সমাগমে!

নিজের প্রযোজনায় ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’, ‘পাসওয়ার্ড’র পর তৃতীয় ছবিটির বেলায় মোটামুটি ব্যবসার সন্তুষ্টিতেই থাকতে হচ্ছে শাকিব খানকে। প্রথম সপ্তাহের তিনদিন শেষে আজ সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) ‘বীর’ ছবির হল রিপোর্ট অন্তত তাই বলছে। যে আলোচনা ও প্রত্যাশা জাগিয়ে ছবিটি হলে গিয়েছিল তাতে প্রাপ্তির হিসাবটা সে অনুযায়ী সাফল্যের হচ্ছে না এবার। এ ছবির গানগুলোও গ্রহণ করেনি দর্শক।

যদিও ছবিটি মুক্তির দিন থেকেই ফেসবুকে শাকিব ভক্তরা হিট-সুপারহিট বলে দাবি করছেন। কিন্তু সেটা নিতান্তই আবেগতাড়িত।

বেশ কয়েকটি ছোটবড় হল মালিক বলেন, মুক্তির দিন ‘বীর’ খুব ভালো দর্শক টেনেছে। একাধিক গণমাধ্যমেও সেই রিপোর্ট পাওয়া গেছে। কিন্তু আজ জানা গেছে, শুক্রবারের পর থেকে ক্রমাগত দর্শক কমেছে এ সিনেমার।

তার মধ্যে রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সের মিডিয়া ম্যানেজার মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা দুটি শাখায় ‘বীর’ দেখাচ্ছি। বসুন্ধরা সিটি ও সীমান্ত সম্ভারে। দুই শাখায়ই ছুটির দুদিনে (শুক্র ও শনিবার) ভালো চলছে সিনেমাটি। এরপর থেকে দর্শক কমতে শুরু করে। তবে আশার কথা হলো অনেক দিন পর বাংলা সিনেমা চালিয়ে বেশ দর্শক পাওয়া গেল। অন্য ছবিগুলোর তুলনায় ‘বীর’ অনেক দর্শক টেনেছে।’

চূড়ান্ত হতাশ রাজধানীর বলাকা সিনেওয়ার্ল্ড কর্তৃপক্ষ। সিনেমা হলটির ম্যানেজার এস এম শাহীন বলেন, ‘আমাদের হলে কমার্শিয়াল ছবি একটু কম চলে। আশপাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজ, ইডেন কলেজ, সিটি কলেজসহ বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার শিক্ষার্থীরা আমাদের হলের বিরাট অংশের দর্শক। তারা সাধারণ শাকিব খান বা হিরো প্রধান ছবি খুব একটা দেখেন না। তাদের আগ্রহ থাকে গল্পপ্রধান ছবির দিকে। তবে ‘বীর’ শুক্রবার কিছু দর্শক টেনেছিল। এরপর অবস্থা ভালো নয়।’

এদিকে ‘বীর’ নিয়ে খানিকটা স্বস্তির বক্তব্য দিলেন দেশের ঐতিহাসিক সিনেমা হল যশোরের মনিহারের দায়িত্বে থাকা মোল্লা ফারুক আহমেদ। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে শাকিব খানের সিনেমা ভালো চলে। এটিও চলছে। তবে শাকিবের অন্যান্য ছবির মতো হয়নি। শুক্রবার ভালো গেছে। এরপর থেকে দর্শক নেই। ‘পাসওয়ার্ড’ যেমনটা সাফল্য পেয়েছে তেমনটা মনে হয় ‘বীর’র ভাগ্যে জুটবে না।’

‘পাসওয়ার্ড’র চেয়ে ‘বীর’র দুর্বলতা কীসে এমন প্রশ্নের জবাবে মোল্লা ফারুক আহমেদ বলেন, ‘যতটুকু মনে হলো গল্পটি ঠিকমতো বলা হয়নি ছবিতে। গল্পে নতুনত্বও নেই। সেই ছোটবেলায় নায়কের স্বজন হারানো, বড় হয়ে তার প্রতিশোধ নেয়ার দৌড়ঝাঁপ। কাজী হায়াৎ সংলাপ ভালো লিখেন। এখানেও ভালো সংলাপ আছে। কিন্তু ছবিটি ঝকঝকে হয়নি। দর্শক এখন টেকনিক্যালি আপডেট সিনেমা দেখতে চায় হলে। সেদিক থেকে ‘পাসওয়ার্ড’ বেটার ছিল। শাকিব খানের ছবি বলে কিছু দর্শক পাচ্ছি।’

এদিকে মধুমতি সিনেমা হলের মালিক ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন ‘বীর’ নিয়ে। তিনি বলেন, ‘দর্শক কমে গেছে রোববার থেকে। তবে বছরের অন্যান্য ছবির চেয়ে ভালো যাচ্ছে ‘বীর’। ছবিটি রোমান্টিক হলে আরও বেশি দর্শক পেতাম। নারী দর্শক কম আসছে এবার। কারণ ছবিটি অ্যাকশননির্ভর। নারী দর্শক আবার পারিবারিক ও রোমান্টিক সিনেমা দেখতে চায়।’

এদিকে প্রযোজনা সূত্রে জানা গেছে, প্রথম সপ্তাহের চাহিদার ওপর নির্ভর করছে দ্বিতীয় সপ্তাহে ছবিটি কত হলে মুক্তি পাবে। তবে অনেক হল মালিকই ছবিটি নতুন সপ্তাহের জন্য বুকিং দিয়ে ফেলেছেন এরই মধ্যে। মন্দার এ বাজারে শাকিব খানের নামটার জন্য যে ক’জন দর্শক মেলে তাকেই সিনেমা ব্যবসার জন্য আপাতত প্রশান্তির বলে মনে করছেন হল মালিকরা।

সেদিক থেকে বলাই যায়, হিট বা সুপারহিটের তালিকায় না গেলেও বছরের প্রথম ছবি হিসেবে হল মালিকদের কিছুটা খুশি করতে পেরেছে ‘বীর’।

প্রসঙ্গত, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারজয়ী পরিচালক কাজী হায়াতের ৫০তম সিনেমা ‘বীর’। এ সিনেমার মাধ্যমে প্রথমবার শাকিব খানকে নিয়ে সিনেমা নির্মাণ করলেন তিনি। এখানে শাকিব খানের নায়িকা চিত্রনায়িকা বুবলী। এসকে ফিল্মস প্রযোজিত তৃতীয় সিনেমাটিতে আরও দেখা গেছে মিশা সওদাগরকে।

সূত্রঃ জাগো নিউজ

ad

পাঠকের মতামত