312396

মাহি, রিয়াজ, মিশার ‘ফেসবুক হ্যাক’ করে গ্রেপ্তার তারা

দেশের চলচ্চিত্র শিল্পের বিখ্যাত নায়ক-নায়িকাদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি চক্র। সম্প্রতি তারা খলনায়ক মিশা সওদাগর, চিত্রনায়ক রিয়াজ, জায়েদ খাঁন এবং চিত্রনায়িকা শাহনুর, আঁচল, রেসি, কেয়া, মাহিয়া মাহি, বিপাশাসহ বেশ কয়েকজন শিল্পীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করে টাকা দাবি করেছিল।

নায়ক-নায়িকাদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করার দায়ের গ্রেপ্তার দুইজন হলেন, মীর মাসুদ রানা (৩৫) ও মো. সৌরভ (১৯)। তবে এই চক্রের মূলহোতা নাসির নামে এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তিনি এক নামকরা সাইবার অপরাধী। কিছুদিন আগে তিনি সাইবার অপরাধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তারও হয়েছিলেন। র‍্যাব-২ এর সহকারী পুলিশ সুপার মো. জাহিদ আহসান এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি জানান, গতকাল শুক্রবার রাজধানীর মহাখালী থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ফেসবুক হ্যাকিংয়ে ব্যবহৃত ৪টি মোবাইল, ১টি ল্যাপটপ, বিভিন্ন কোম্পানির ২০টি সিম কার্ড এবং মিশা সওদাগর, জায়েদ খাঁন, রিয়াজ, শাহনুর, আঁচল, রেসি, কেয়া, মাহি, বিপাশাসহ বিভিন্ন শিল্পী কলাকুশলী, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের ফেসবুক আইডি হ্যাক করা সংক্রান্ত আলামত উদ্ধার করা হয়।

যেভাবে নায়ক-নায়িকাদের ফেসবুক হ্যাক করতো তারা

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, এই হ্যাকার গ্রুপটি চলচ্চিত্র অঙ্গনের কিছু অসাধু ব্যক্তিদের যোগসাজশে নামকরা শিল্পীদের সঙ্গে প্রথমে বন্ধুত্ব গড়ে তোলে। এরপর তাদের কাজ হলো নামী-দামী শিল্পী কলাকুশলীদের জন্ম তারিখসহ পূর্ণ নাম-ঠিকানা, ই-মেইল সংগ্রহ করা। পরে শিল্পী সঙ্গে পাতানো বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে তাদের ফেসবুকে মিউচুয়াল ফ্রেন্ডদের নিজেদের ফেসবুক বন্ধু করে। এরপর হ্যাকার গ্রুপ একযোগে টার্গেটেড ওই নায়ক বা নায়িকার ফেসবুক আইডির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করে। কখনো কখনো হ্যাকার গ্রুপ নিজেরাই ন্যুড ফটোগ্রাফ শিল্পীদের বা টার্গেটেড ফেসবুক আইডি’তে উদ্দেশ্যমূলকভাবে শেয়ার দিয়ে রিপোর্ট করলে টার্গেটেড আইডিটি ফেসবুক কর্তৃপক্ষ উঠিয়ে নেয়।

পরবর্তীতে হ্যাকারগ্রুপ ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নিজেরাই যোগাযোগ করে রিপোর্টকৃত আইডি ফেরত পেতে যোগাযোগ করে। এক্ষেত্রে নিজেদের তৈরি করা ফেইক ই-মেইল দিয়ে ফেসবুকের কাছে তারা ওই অ্যাকাউন্টের মালিক দাবি করে এবং পরবর্তীতে ফেসবুক আইডিটি তাদের দখলে নেয়।

ফেসবুক আইডি ফেরতের নামে টাকা দাবি

র‍্যাব জানায়, ফেসবুক আইডিটি হ্যাকার গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে যাবার পরে তারা নিজেরাই টার্গেটেড ফেসবুক আইডি’র মালিকের সঙ্গে বা তার পরিচিত কারও সঙ্গে যোগাযোগ করে। এরপর তার কাছে আইডি ফেরত দেওয়ার বিপরীতে টাকা দাবি করে। টাকা না দিলে আইডির মূল মালিকের ফেসবুক ওয়ালে বিভিন্ন ন্যুড ছবি পোস্ট করে বা মেসেঞ্জারে তার নিকটস্থ বন্ধুদের কাছে স্পর্শকাতর ছবি বা মেসেজ পাঠিয়ে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করতে থাকে। সম্প্রতি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নিকট থেকে র‍্যাব-২ এর নিকট এমন একটি অভিযোগ আসে।সেখানে বলা হয় পূর্বেও বেশ কিছু অভিনেতা-অভিনেত্রীর ফেসবুক হ্যাক হয়েছিল যেগুলি পরে হ্যাকারদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে ফেরত আনতে হয়েছে।

যেভাবে গ্রেপ্তার তারা

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কাছে থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়ে বিষয়টি নিয়ে র‍্যাব অনুসন্ধান শুরু করে। অনুসন্ধানে তারা ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া হ্যাকিং এর কাজে জড়িত প্রায় ২০ জনের একটি দলকে শনাক্ত করে। এই দলের মূল হোতা নাসির নামে এক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তিনি এক সাইবার অপরাধী। যিনি কিছুদিন পূর্বে সাইবার অপরাধের কারণে যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়েছিলেন।

সেই নাসিরই ফেসবুকসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হ্যাকার গ্রপে যোগদানের জন্য লোক নিয়োগ করে থাকে। অনলাইনে ভিডিও টিউটোরিয়ালের মাধ্যমে কীভাবে ফেসবুক আইডি হ্যাক করতে হবে, নিজ দখলে নিতে হবে, কীভাবে ফেইক জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা যায়, আইডি ফেরত প্রদানে সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করে অর্থ লেনদেন করাসহ সকল প্রক্রিয়াটি দলের মূল নেতা নাসির সমন্বয় করে থাকেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মীর মাসুদ রানা, সৌরভ, বাবলু রহমান, আতিক, জেইনা রাইহান, আফরাজ মিম আশা, সারাকা মজুমদার, সিনথিয়া, তানভি, সুমাইয়া, রুবি সহ একটি শক্তিশালী সাইবার অপরাধী চক্র এর সঙ্গে জড়িত।

ফেসবুক হ্যাক করে মাসে উপার্জন লাখ টাকা

গ্রেপ্তার আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাব জানায়, তারা একটি হ্যাকার গ্রপের সক্রিয় সদস্য। অতিসম্প্রতি তারা চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর, জায়েদ খাঁন, রিয়াজ, শাহনুর, আঁচল, রেসি, কেয়া, মাহি, বিপাশা বেশ কজন নামী দামী শিল্পীর ফেসবুক আইডি হ্যাক করেছে। তারা প্রতিনিয়ত সাধারণ ফেসবুক ব্যবহারকারীদের আইডি হ্যাক করে থাকে। হ্যাক করা আইডি ফেরত দিতে তারা ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেয়।

এই ফেসবুক হ্যাকিং করেই প্রতি মাসে তারা প্রত্যেকে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করে বলে র‍্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।

ad

পাঠকের মতামত