312325

প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসেও চাকরি মেলে নি, আবারও অনশনে চাঁদের কণা

রাজধানীর ইডেন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছেন শারীরিক প্রতিবন্ধী চাঁদের কণা। শারীরিক অক্ষমতাকে যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে জয় করতে পারলেও জীবনযুদ্ধে যেন আর জয়ী হতে পারছেন না তিনি। দেশের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিলেও মেলেনি চাকরি। যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরির জন্য ফের অনশনে বসছেন চাদের কনা। এর আগে, গত জুন মাসে প্রথমবারের মতো অনশন করে চাঁদের কণা। তখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া আশ্বাসে তিনি অনশন ভেঙেছেন। প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস অনুযায়ী চাকরি না পাওয়ায় গত অক্টোবরে দ্বিতীয় দফায় টানা ৩৭ দিন অনশন করে প্রতিবন্ধী চাঁদের কণা। শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) আবারও তৃতীয় দফায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অনশনে বসছেন এই প্রতিবন্ধী।

জানা গেছে, মাত্র নয় মাস বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হয়ে দুটি পায়ের কার্যক্ষমতা হারায় চাঁদের কনা। তবুও বাবা-মায়ের সচেতনতা আর নিজের প্রতিবন্ধকতা জয়ের অদম্য চেষ্টায় চলতে থাকে হাতে হেঁটে পড়ালেখা। চাঁদের কনা যখন অনার্স ১ম বর্ষের ছাত্রী, তখন তার মা হাসনাহেনা বেগম মারা যান। এর কয়েক বছর পর ব্রেইন স্ট্রোক করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তার বাবা।

পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এবং বাবার অসুস্থতাজনিত কারণে তার জীবনে নেমে আসে চরম দারিদ্র্যতা। অবশেষে পড়ালেখার খরচ যোগাতে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলে সামান্য বেতনে চাকরি নেন তিনি। কিন্তু থেমে থাকেননি। হাতের ভর দিয়ে রাজশাহী মাদার বক্স গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে অনার্স পড়েছেন। এরপর ২০১৩ সালে ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। যোগ্যতা অনুযায়ী সরকারি চাকরির জন্য ঘুরে অবশেষে তৃতীয় দফায় বসছেন চাঁদের কনা।

চাঁদের কণা বলেন, আমার শরীর দিন দিন ভারি হয়ে যাচ্ছে। কারো সাহায্য ছাড়া বাইরে যেতে পারি না। তাই কোন উপায় না পেয়ে সম্প্রতি পারিবারিক ভাবেই বিয়ে করেছি। কিন্তু সে আমার বয়সে অনেক ছোট, মাত্র ইন্টারে পড়ে। তার কাজ করার মতো বয়স বা যোগ্যতা কোনটাই নেই। তাই আমরা দুজন মানুষই ভীষণ অসহায় জীবন-যাপন করছি। তার পরিবারও খুব গরীব, তাই বিয়ের পর আমাদের সমস্ত দায়িত্ব তারা ছেড়ে দিয়েছে। আমরা দুজনই আমার বাবার বাড়ি থাকি। বাবা অসুস্থ, সে কোন ভাবে মারা গেলে আমাদের দুজনকে রাস্তায় নামতে হবে। এখন আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় আর্থিক সচ্ছলতা।

তিনি বলেন, মানুষের হাজার হাজার কোটি টাকা আছে, যা তাদের তেমন কোন কাজে লাগেনা। কেউ কেউ নিজের শখের বসে, লাখ টাকার কুকুর পোষে। আর কারো কারো তো মাসিক হাত খরচ ও এত বেশী যে, তাদের একদিনের খরচ দিয়ে আমাদের পুরো মাসটা চলে যেতে পারে। অথচ এই টাকার জন্য আজ আমাদের জীবন কতটা ভয়াবহ কঠিন হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমরা এই কঠিন জীবনের অবসান চাই, আর্থিক কষ্টের মুক্তি চাই। তাই আমরা সকল শুভাকাঙ্ক্ষীদের কাছে আর্থিক সহযোগীতা চাই বলেছেন চাঁদের কনা।

ad

পাঠকের মতামত