312144

কালো মেয়েটি ক্লাসে মানা, বাইরে দাঁড়িয়েই হলেন ডাক্তার

শরীরের রং ময়লা, এ কারণেই স্কুলের ক্লাসে বসার অনুমতি ছিল না তার। যেই শিক্ষক কিনা ভবিষ্যত প্রজন্মকে বৈষম্যহীনতার শিক্ষা দেবেন, তার কাছ থেকেই মেয়েটি এমন আচরণ পায়। অপমান করা হয় তাকে। কেন তিনি অন্যদের মতো ফর্সা নন? মেয়েটি বলেছিলেন, এতে আমার কি দোষ?

মেয়েটির নাম ক্লারা বেলে উইলিয়ামস। কালো হওয়ার কারণে কতই না বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তিনি। ক্লাসের বাইরে দাঁড়িয়েই শিক্ষকের কথা সব নোট করতেন ক্লারা। কেউই হয়ত তা লক্ষ্য রাখতেন না! তবুও সর্বোচ্চ নম্বর অর্জন করেন ক্লারা। এতে সবাই অবাক হলেও তার প্রতি শিক্ষক বা সহপাঠীদের কারো মনই গলেনি। এতটা উপেক্ষিত হওয়া স্বত্ত্বেও ক্লারা কখনো হার মানেননি। কারণ তিনি জানতেন অন্ধকারের পিছনে আলো রয়েছে।

তিনিই প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান হিসেবে নিউ ম্যাক্সিকো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ক্লারা ১৮৮৫ সালের ২৯ অক্টোবর টেক্সাসের লাগ্রাঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানকারই একটি ছোট স্কুলে মাধ্যমিক সমাপ্ত করেন ক্লারা। অতঃপর ১৯০১ সালে প্রেইরি ভিউ নরমাল অ্যান্ড ইন্ডিপেন্ডেন্ট কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করেন। এরপর ১৯০৫ সালে তিনি প্রেইরি ভিউ নরমাল অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিয়াল কলেজে পড়ানো শুরু করেন। তিনি সুইং বিভাগের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন।

এরপর ১৯১৭ সালে তিনি বিয়ে করেন জেসপার উইলিয়ামকে। যিনি ছিলেন একজন ফার্মাসিস্ট। এরপর একে একে তিন ছেলের মা হন ক্লারা। অতঃপর স্বামীর সঙ্গে ক্লারা একটি ওষুধের দোকান দিয়ে বসলেন। ভালোই চলছিল ব্যবসা। এরইমধ্যে ক্লারা মেডিসিন বিষয়েও ভালো দক্ষতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে তারা ১৯২৪ সালে টেক্সাস ছেড়ে নিউ মেক্সিকোতে চলে যান। এরপর তিনি আবার লেখাপড়া শুরু করেন। ভর্তি হন মেক্সিকো কলেজ অব এগ্রিকালচার অ্যান্ড ম্যাকানিক আর্টসে (বর্তমানে নিউ মেক্সিকো স্টেট ইউনিভার্সিটি)।

সেখানেই প্রথম তিনি বৈষম্যের শিকার হতে শুরু করেন। তাকে ক্লাসে ঢোকার অনুমতি দেয়া হত না। এজন্য বাইরে হলরুমে দাঁড়িয়েই শিক্ষকের কথা শুনে নোট করতেন তিনি। তিনিই প্রথম আফ্রিকান আমেরিকান হিসেবে স্নাতক সম্পন্ন করেন ক্লাস না করেও। এভাবেই তিনি পরবর্তীতে ইংরেজিতেও স্নাতক করেন ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। দুঃখের বিষয় হলো এখনো এই নারী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনেও উপস্থিত থাকার অনুমতি পর্যন্ত পাননি।

১৯৫১ সালে ক্লারা চলে যান চিকাগোতে। সেখানে তার বড় ছেলে একটি ক্লিনিক খোলেন। বাকি জীবন সেখানে থাকারই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। এরপর হঠাৎই যেন তার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। তারা খুঁজে বের করেন ক্লারাকে। কারণ তারা এত দিনে উপলব্ধি করেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম স্নাতক সম্পন্নকারী এই ছাত্রীর সঙ্গে তারা অবিচার করেছেন। এজন্য তারা ক্লারাকে উৎসর্গ করে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন।

আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, ক্লারার তিন পুত্রই ফিজিশিয়ান। তারা সবাই নিউ মেক্সিকো বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। ১৯৬৬ সালে ক্লারা একজন সার্থক মা ও নারী ব্যবসায়ীর তকমা অর্জন করেন। পরবর্তীতে নিউ মেক্সিকো স্টেট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্লারার নামে তাদের একটি হলের নামকরণ করেন। ৪৩ বছর পর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ক্লারা তার পূর্ণ সম্মানটুকু পেয়েছিলেন।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্লারাকে রেসিস্ট ট্রিটমেন্টের উপর একটি ডিগ্রি গ্রহণের প্রস্তাব দেয়। ক্লারার বায়োগ্রাফি অনুসারে, ৯১ বছর পর্যন্ত তিনি তার ছেলের ক্লিনিকে রিসিপশনিস্ট হিসেবে কাজ করেন। ১০৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ক্লারা। ২০০৫ সালে তার নামানুসারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইংরেজি বিভাগের নামকরণ করেন ক্লারা বেলে উইলিয়ামস হল। এই নামে অবশ্য তারা একটি স্কলারশিপের ব্যবস্থাও চালু করেছেন।

সূত্র: ফেসটুফেসআফ্রিকা

ad

পাঠকের মতামত