312215

করোনার কবলে ভালোবাসার গোলাপ!

ফুল ছাড়া কোনো উৎসব উদযাপন অকল্পনীয়, ভালোবাসা দিবস আর পহেলা ফাল্গুন উদযাপন তো ভাবাই যায় না। তবে এবার চাহিদার তুলনায় ফুলের উৎপাদন কম। এছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে চীন থেকে গোলাপ আমদানি করা হচ্ছে না। তাই গোলাপসহ অন্যান্য ফুলের দাম বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ফুল বিক্রেতা ও উৎপাদনকারীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা যায়, রাজধানীর শাহবাগের ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপ, শ্রাবন্তী পুষ্পালয় এবং ইকো ফ্লাওয়ার শপসহ বেশ কয়েকটি দোকানের ফুল বিক্রেতা এবং দোকান মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে প্রতি পিস দেশি গোলাপ ২০ টাকা, চায়না গোলাপ ৩০ থেকে ৪০ টাকা, জারবেরা ২০ টাকা, গাঁদা ফুলের একটি মালা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বিভিন্ন ফুল দিয়ে বানানো মেয়েদের মাথায় পরার রিং ৭০ থেকে ৮০ টাকা, রজনীগন্ধা ১০ টাকা, ক্যালেন্ডুলা ১০ থেকে ২০ টাকা করে বিক্রি করা হচ্ছে। একইসঙ্গে পহেলা ফাল্গুন এবং ভালোবাসা দিবসকে কেন্দ্র করে ফুলের দাম বাড়তেই থাকবে।

ফুলতলা ফ্লাওয়ার শপের মো. জলিল বলেন, ‘ভালোবাসা দিবস এবং পহেলা ফাল্গুনে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় গোলাপ আর গাঁদা ফুল। এবার দেশে গোলাপের উৎপাদন কিছুটা কম। পাশাপাশি চায়না থেকেও আমাদের দেশে ফুল আমদানি করা হতো। তবে সেটা এখন করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় বন্ধ। তাই এবার গোলাপের দাম গতবারের তুলনায় বেশি থাকবে বলে মনে করছি।

দেশে গোলাপসহ অন্য ফুলের চাহিদার বেশিরভাগ পূরণ করেন যশোর এবং ঢাকা জেলার সাভারের ফুল চাষিরা। সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নাজিয়াত আহমেদ জানান, সাভার থেকে এবারে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে ৩ কোটি টাকা। আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

সাভার উপজেলার বিরুলিয়ার ফুলচাষি মনির হোসেন বলেন, শীত বেশি থাকার কারণে এবছর ফুলের উৎপাদন কিছুটা কম। তবে ফুলের বাজার মোটামুটি ভালো। গতবারের তুলনায় এবার দাম কিছুটা বেশি। একশো গোলাপ গতকাল সাতশো থেকে আটশো টাকায় বিক্রি হয়েছে। দাম ধীরে ধীরে বাড়বে।

ফুল ব্যবসায়ী, চাষি এবং সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় বুলবুল, তীব্র শীত, অসময়ে বৃষ্টি ও ভাইরাসের আক্রমণের ফলে, চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ায় এবারে ফুলের দাম পহেলা ফাল্গুন এবং ভালোবাসা দিবসে অন্য বছরের তুলনায় বেশি থাকবে। সুতরাং যারা প্রিয়জনকে ফুল উপহার দিয়ে মন জয় করতে চান কিংবা ফুলের সাজে উৎসবকে রাঙাতে ও সাজাতে চান, তাদের ফুলের জন্য চড়া দাম গুনতে হবে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি এবং যশোর জেলার ঝিকরগাছার গদখালী গ্রামের ফুলচাষি মো. আব্দুর রহিম বলেন, দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদার প্রায় ৭০ শতাংশ ফুল যশোর জেলা থেকে সরবরাহ করা হয়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে অন্য ফসলের ন্যায় ফুলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ফলে উৎপাদন অনেকটাই কম হয়েছে। ভালোবাসা দিবসে গোলাপের চাহিদা থাকে সব থেকে বেশি। গোলাপ উৎপাদন কম হওয়ার আরেকটি কারণ হচ্ছে হটাৎ করে গোলাপের গাছে ভাইরাসের আক্রমণ। ভাইরাসের কারণে গোলাপের গাছের পাতা ঝরে পড়ে গেছে, গাছগুলোও শুকিয়ে গেছে। এসব গাছের হওয়া গোলাপের পাপড়িগুলো ঝড়ে পড়ে গেছে। যার কারণে গোলাপের উৎপাদন খুবই কম।

উৎপাদন কম হওয়ার কারণে এ বছর ফুলের দাম অনেক বেশি। গোলাপ অন্য বছর এসময় সর্ব্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিন্তু আজকেই ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায় একশো গোলাপ বিক্রি হচ্ছে। আগামীকাল দুই হাজার টাকার উপরে বিক্রি হবে। প্রতি শত রজনীগন্ধা ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, গ্লাডুলা রঙ অনুযায়ী ৪০০ থেকে ১২০০ টাকা, গাঁদা ফুল ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, জারবেরা ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আমরা ধারণা করছি, যশোর জেলা থেকে পহেলা ফাল্গুন এবং ভালোবাসা দিবসে আনুমানিক ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো।

ad

পাঠকের মতামত