309524

চীনের দৃষ্টিতে আমেরিকাই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার মূল হোতা

চীন শেষ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে মুখ খুলেছে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্যাঙ্গ শুয়াং বেইজিংয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন: পশ্চিম এশিয়ায় বর্তমান উত্তেজনার পেছনে দায়ী হলো আমেরিকা।

আন্তর্জাতিক রীতিনীতি লঙ্ঘন করে পরমাণু সমঝোতা থেকে আমেরিকা একতরফাভাবে বেরিয়ে গেছে এবং সমঝোতার অন্যান্য পক্ষকেও ওই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যেতে আমেরিকার পক্ষ থেকে উস্কানি দেওয়া হয়েছে। এগুলোই পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে।

চীনের এই কৌশলটি মানে সরাসরি অবস্থান গ্রহণের বিষয়টি নতুন। যদিও চীন মার্কিন একপেশে নীতির সমালোচনা আগে থেকেই করে এসেছে কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে একটা উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে সরাসরি এভাবে দোষীকে শনাক্ত করে কথা বলার বিষয়টি চীনের আগের নীতি থেকে আলাদা।

সম্প্রতি মার্কিন সন্ত্রাসী হামলায় ইরানি জেনারেল সোলাইমানি শহীদ হওয়ার ঘটনায় পশ্চিম এশিয়া ভয়াবহ রকমে উত্তেজিত হয়ে উঠেছিল। জনরোষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল ভারত, পাকিস্তান থেকে শুরু করে ইরাক, সিরিয়া, তুরস্কের বিক্ষুব্ধ জনতা। এটাই প্রমাণ করে বিশ্বের ভূ-কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই অঞ্চলটি মার্কিন পদক্ষেপের কারণে কতোটা তপ্ত হয়ে উঠেছিল।

এরকম একটি পরিস্থিতিতে আমেরিকার সঙ্গে বিশাল অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক লেনদেনের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে আমেরিকার ন্যাক্কারজনক ভূমিকার ঘটনায় রাশিয়াসহ আরও অনেক দেশের মতোই সরাসরি পক্ষ নিয়েছে।

চীনের এই ভূমিকায় আরো প্রমাণ হয় যে ইরানের গুরুত্ব তাদের কাছে কতো বেশি। অপরদিক থেকে এও বলা যায় যে ইরানের নিজস্ব নিরাপত্তা নীতিকৌশলের মধ্যে চীনেরও স্বার্থ রয়েছে। ইরানের ব্যাপারে আমেরিকার একপেশে নীতির ব্যাপারে চীনের এই খোলামেলা অবস্থান নেয়ার বিষয়টি প্রমাণ করে আন্তর্জাতিক রীতিনীতি বিবেচনা করে চীন ইতিহাসের সঠিক পক্ষেই দাঁড়িয়েছে।

চীনা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জিং জান রুং বলেছেন:’একটি স্বাধীন দেশের সামরিক কর্তকর্তাকে যুদ্ধহীন পরিস্থিতিতে হত্যা করা সরাসরি অপরাধ এবং এটাকে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসবাদ বলা যায়। মার্কিন নীতির ইতিহাস হলো চাপ সৃষ্টি করে দেশটি যদি অন্য কোনো দেশকে কাবু করতে না পারে তখনই তারা সন্ত্রাসী হামলার মতো উগ্রপন্থার আশ্রয় নেয়’।

চীন কোনো পক্ষ নেয়ার ক্ষেত্রে সাধারণত সামগ্রিক দিকটি বিবেচনা করে। এই পরিস্থিতিতে পক্ষ নিয়েও তারা সম্ভবত মার্কিন কর্মকর্তাদের বোঝাতে চেয়েছে যে চীন মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে কোনোরকম উত্তেজনা সৃষ্টির বিরোধী।কেউ উত্তেজনা সৃষ্টি করতে চাইলে চীন বাধা দেবে। ইরান যদিও মার্কিন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দাঁতভাঙা জবাব দিয়েছে তারপরও হোয়াইট হাউজের ধ্বংসাত্মক নীতি থেকে মধ্যপ্রাচ্যকে রক্ষা করার ক্ষেত্রে ইরানের একক প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। রাশিয়া এবং চীনের মতো আঞ্চলিক অন্যান্য দেশকেও নিরাপত্তা রক্ষায় হাতে হাত মিলিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সম্প্রতি ইরান, রাশিয়া ও চীন যে যৌথ সামরিক মহড়া চালিয়েছে সেটাও আঞ্চলিক নিরাপত্তা সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।কেননা ওই যৌথ মহড়া থেকে বোঝা যায় দেশগুলো তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে এবং ওয়াশিংটনের স্থূল আচরণের মোকাবেলায় নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন করেছে।

ad

পাঠকের মতামত