309437

প্রথমদিনে দেড় হাজার উট হত্যা করলো অস্ট্রেলিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ কয়েক দিন ধরেই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবরটা প্রচারিত হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রচুর লোক শেয়ার করেছেন সেই খবর। আজ থেকে প্রায় ১০ হাজার উট মেরে ফেলার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে অস্ট্রেলিয়ায়।

ওই হত্যাযজ্ঞের প্রথমদিনে বৃহস্পতিবার দেড় হাজার উটকে প্রশিক্ষিত স্নাইপার দিয়ে আকাশ থেকে (হেলিকপ্টার থেকে) গুলি করে মারা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ায় ভয়াবহ দাবানলে দগ্ধ হয়ে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে লক্ষ লক্ষ প্রাণীর। তার পরে উট নিধনের খবরে ক্ষুব্ধ নেট নাগরিকদের একাংশ। দাবানল নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী স্কট মরিসন পুরোপুরি ব্যর্থ বলে এখনও অনেকেই তোপ দাগছেন। তাঁর জনপ্রিয়তা এতটাই তলানিতে যে ক্ষমতায় ফিরতে পারবেন কি না, তা নিয়ে জল্পনাও শুরু হয়ে গিয়েছে।

দাবানলের সঙ্গেই ভয়াবহ খরার আশঙ্কা রয়েছে অস্ট্রেলিয়া জুড়ে। উটেরা প্রচুর জল খেয়ে থাকে বলে জল সঞ্চয়ের জন্য আপাতত ১০ হাজার উট মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। তার জন্য প্রশিক্ষিত শুটারও আনা হচ্ছে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে মারা হবে উটগুলিকে।

মোট পাঁচ দিনের এই প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে আজ থেকে। নেট নাগরিকদের অনেকেই টুইটারে সরকারের সমালোচনা করেছেন। কেউ লিখেছেন, ‘মানুষই এখন সবচেয়ে বিপজ্জনক প্রাণী হয়ে উঠেছে’। কারও আক্ষেপ, ‘আমাদের এই পৃথিবীতে থাকার অধিকারই নেই’।

আদিবাসীদেরকে বাঁচাতে উটগুলোকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক আদিবাসী নেতার কাছ থেকে এ বিষয়ে আদেশ আসার পর উটগুলো মারার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ।

দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার আনানজু পিতজানৎজাতজারা ইয়ানকুনিৎজাতজারা ল্যান্ডস (এওয়াইপি) এলাকায় এই হত্যাযজ্ঞ চলছে। ওই এলাকায় ২,৩০০ জন আদিবাসীর বাস রয়েছে।

উট হত্যা করার কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, অস্ট্রেলিয়ার ওই এলাকা প্রচণ্ড খরাপ্রবণ। সেখানে স্বাভাবিকভাবেই খাদ্য ও পানির সংকট থাকে। আর এবার পুরো অস্ট্রেলিয়াজুড়ে ব্যাপক দাবানলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এমতাবস্থায় উটগুলো প্রচুর পরিমাণে পানি পান করায় সেই সংকট আরও মারাত্মক রূপ নিয়েছে।

পানির খোঁজে বিশাল এলাকাজুড়ে এসব উট বিচরণ করায় সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। এমনকি মিথেন গ্যাস সৃষ্টির জন্যও এসব উট দায়ী।
আদিবাসী এলাকার (এওয়াইপি) নির্বাহী বোর্ডের সদস্য মারিতা বেকার স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে জানান, আমরা যে অঞ্চলে থাকি সেখানে খুব গরম পড়ে। খুবই অস্বস্তিকর পরিবেশের মধ্যে আছি। এর মধ্যে উটগুলোর উৎপাত আমাদের বিষিয়ে তুলেছে। তারা পানির জন্য ঘরবাড়িতে হানা দিচ্ছে, বেড়া ভেঙে দিচ্ছে। ক্ষেত মাড়িয়ে এসে ফসলের ক্ষতি করছে।

দেশটির জাতীয় বন্য উট ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বিভাগের দাবি, এই উটদের সংখ্যা যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায়, তাহলে প্রতি নয় বছরে সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির জন্যও উট দায়ী। কার্বনডাই অক্সাইড নিয়ন্ত্রণে কাজ করা কার্বন ফার্মিং স্পেশালিস্টস রিজেনকোর প্রধান নির্বাহী টিম মুরে বলেন, এক মিলিয়ন উট প্রতিবছর এক টনের সমপরিমাণ কার্বন নিঃসরণের জন্য দায়ী। অর্থাৎ, ৪ লাখ গাড়ি থেকে যে পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ হয়, সেই পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড সৃষ্টির জন্য দায়ী উট।

অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ায় দাবানলে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক মানুষ সহ ৫০ কোটি বন্যপ্রাণীর মৃত্যু হয়েছে।

উট অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় প্রাণী নয়। ১৮৫০ সালের দিকে অস্ট্রেলিয়ায় প্রথম উট নিয়ে গিয়েছিলো ইউরোপীয় অভিযাত্রীরা।

বর্তমানের অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে বেশি উট বিচরণ করছে। দেশটির আভ্যন্তরীন মরুভুমি অঞ্চলে অন্তত ১০ লাভ উট বিচরণ করছে।

ad

পাঠকের মতামত