309024

হাতটি কি জেনারেল সোলেইমানির?

এই হাতটিকে ধারণা করা হচ্ছে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের এলিট কুদস বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানির

মার্কিন হেলিকপ্টার হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের এলিট কুদস বাহিনীর প্রধান জেনারেল কাসেম সোলেইমানি নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে ইরাকের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন যুক্তরাষ্টের বিমান হামলায় তিনি নিহত হন।

বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে হামলার বিষয়টি মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর ‘পেন্টাগন’ থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এ ধরনের হামলায় কোনো দেশের উচ্চ পর্যায়ের কোনো ব্যক্তি নিহত হলে তা প্রচার করা হলেও মৃতদেহের ছবি গণমাধ্যমে আনা হয় না। তবে ফেসবুকে একটি ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিতে একটা হাত দেখা যাচ্ছে, যেটিকে জেনারেল কাসেম সোলেইমানির বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ছবিতে দেখা যাচ্ছে, একটি হতে একটি লাল পাথরের আংটি পরা। ধারণা করা হচ্ছে, হামলায় সোলেইমানি নিহত হওয়ার পর তার মরদেহ খুঁজে পাওয়ার পর কেউ ছবিটি তুলে রেখেছিলেন। পরে সেটি ফেসবুকে প্রকাশ পায়।

হাতটি সোলেইমানির, সে ধারণা কেন?

সোলেইমানি তার বাঁ হতের অনামিকায় একটি আংটি পরতেন। যেটিতে একটি বড় সাইজের লাল পাথর থাকত। ফেসবুকে প্রকাশ হাতটিতেও লাল পাথরের একটি আংটি দেখা যাচ্ছে, যা সোলেইমানির হাতের আংটি সদৃশ।

যদিও ছবির হাতটি সম্পর্কে ইরান, ইরাক বা যুক্তরাষ্ট্র এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, হাতটি বিমান হামলায় নিহত সোলেইমানিরই।

এদিকে জেনারেল কাসেম সোলেইমানির মৃত্যুর পর তার সামরিক ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা। এতে বলা হয়, জেনারেল কাসেম সোলেইমানি ইরানের অন্যতম ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন। দেশটির জনপ্রিয় ব্যক্তিদের মধ্যেও তিনি অন্যতম ছিলেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েলসহ অনেক দেশই জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে প্রধান শত্রু ভাবত।

জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে সাম্প্রতিক সময়ে ইরানের সবচেয়ে বড় তারকা বলে মনে করা হয়। ইনস্টাগ্রামে তার বিপুল সংখ্যক অনুসারী রয়েছেন। ২০১৩ সালে সিরিয়া যুদ্ধে ইরানের হস্তক্ষেপের পর তিনি রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তার প্রোফাইল যুদ্ধক্ষেত্রের ছবি, তথ্যচিত্র, গানের ভিডিও ও অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রের পোস্টে ভারি হয়ে ওঠে।

২০১৮ সালে ইরানপোল ও মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে একটি জরিপ প্রকাশ করেছে, যেখানে ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফের চেয়েও কাসেম সোলেইমানিকে এগিয়ে রাখা হয়েছে।

ইরানের হয়ে দেশের বাইরে অভিযান পরিচালনার জন্য গঠিত বিশেষ বাহিনী কুদস ফোর্সের দায়িত্বে ছিলেন জেনারেল কাসেম সোলেইমানি। এ বাহিনীতে তার দক্ষ নেতৃত্বের কারণেই ইরান আঞ্চলিকভাবে শক্তিশালী অবস্থানে যেতে পেরেছে। ২০১৮ সালে ইরানের সামরিক শক্তির নেপথ্যের অন্যতম কারিগর হিসেবে জেনারেল কাসেম সোলেইমানি সামনে চলে আসেন।

জেনারেল কাসেম সোলেইমানির আঞ্চলিক প্রভাব এত বেশি যে, সম্প্রতি ইরাকে সরকার পরিবর্তনের যে চেষ্টা চলছে তার পেছনেও সোলেইমানির ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। রাজনৈতিকভাবে ইরাকের এ অস্থির পরিস্থিতিতেও তিনি দেশটিতে অবস্থান করছিলেন।

গত বছরের অক্টোবরে একটি ইরানি টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জেনারেল কাসেম সোলেইমানি জানিয়েছিলেন, ২০০৬ সালের ইসরাইল-হিজবুল্লাহ লড়াইয়ের সময় তিনি লেবাননে ছিলেন। এ সময় তিনি মাঠে থেকে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

জেনারেল কাসেম সোলেইমানির শত্রু ও মিত্রু–উভয়ই তাকে ইরানের আঞ্চলিক প্রভাবের মূল স্থপতি হিসেবে স্বীকার করে নিয়েছেন। ইরাক ও সিরিয়া ছাড়াও পুরো মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের কূটনৈতিক শক্তি বাড়িয়েছেন তিনি।

বিশ্ব বিখ্যাত টাইম ম্যাগাজিন ২০১৭ সালে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তির যে তালিকা প্রকাশ করে তাতে জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে স্থান দেয়। টাইম ম্যাগাজিনেই তাকে নিয়ে নিবন্ধ লেখেন সিআইএ’র বিশ্লেষক কিনেথ পোলাক। এতে তিনি লেখেন, মধ্যপ্রাচ্যের শিয়াদের কাছে জেনারেল কাসেম সোলেইমানি একাধারে জেমস বন্ড, এরউইন রোমেল ও লেডি গাগা। আর পশ্চিমারা মনে করেন, বিদেশে তিনি ইরানি ইসলামী বিপ্লব রপ্তানি করেছেন, সন্ত্রাসবাদে সমর্থন দিয়েছেন ও পশ্চিমাপন্থী সরকারগুলো হটাতে ভূমিকা পালন করছেন। বিদেশের যুদ্ধে ইরানের জড়িয়ে পড়ার নেতৃত্ব দিয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে ইরানে অর্থনৈতিক সংকটের সরকারবিরোধী বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ ইরানের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে শুরু করে। ইরানের এই অস্থির রাজনীতিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে অনেক ইরানিই কাসেম সোলেইমানির হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

বাইরে থেকে যুক্তরাষ্ট্রও নতুন করে চাপ বাড়িয়েছিল। তখন ইরানিদের অনেকে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে সোলেইমানিকে হস্তক্ষেপ করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এ সময় তিনি ইরানের প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন বলে গুজব ছড়িয়ে যায়। তিনি নিজেই এটিকে গুজব বলে জানিয়েছেন।

দেশের রাজনীতির বাইরে প্রতিবেশী ইরাকের রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল কাসেম সোলেইমানির। ইরাকে নতুন সরকার গঠনের আলোচনা শুরু হলে গত সেপ্টেম্বরে হঠকারী গণভোটের পর কুর্দিশদের স্বাধীনতা পরিকল্পনা বাতিল করতে চাপ প্রয়োগের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি।

কাসেম সোলেইমানিকে ইরানের সঙ্গে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও ফিলিস্তিনেরে হামাসসহ বিভিন্ন মিলিশিয়া গোষ্ঠীর সম্পর্কের মূলহোতা হিসেবে ভাবতেন পশ্চিমারা।

ad

পাঠকের মতামত