307483

আফ্রিকার নারীরা ভারতে যেভাবে পতিতা হচ্ছে

আফ্রিকা থেকে ভারতে নারী পাচারের চক্র গড়ে উঠেছে বলে সম্প্রতি এক তদন্ত বেরিয়ে এসেছে। কাজের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আফ্রিকার নানা দেশ থেকে নারীদের ভারতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু তাদের সেখানে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আফ্রিকার এক নারী, নাম গ্রেস। কাজের প্রতিশ্রুতি পেয়ে ভারতে এসে পৌঁছানোর পর তাকে একটি যৌন পল্লীতে নিয়ে যাওয়া হয়। গোল্ডি নামের একজন নারী সেখানে তার পাসপোর্ট কেড়ে নেয়। এই গোল্ডি নামের নারীই ভারতে আসার জন্য তার খরচ বহন করেছে। গ্রেসকে জানানো হয়, তাকে ভারতে আনতে গোল্ডির খরচ হয়েছে প্রায় চার হাজার মার্কিন ডলার, ভারতে আসার প্লেন টিকিটের যে খরচ তার চেয়ে সাতগুণ বেশি। এখন গোল্ডিকে এই অর্থ পরিশোধ করার জন্য গ্রেসের সামনে একটাই পথ খোলা ছিল। গ্রেস জানান, ‘পতিতাবৃত্তি আমার কাছে এমন একটা কাজ, আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করে বলতাম, এটা যেন কাজ হিসেবে আমার সামনে পৃথিবীর শেষ বিকল্প হয়।’ পাঁচ মাস ধরে গ্রেস আরও চারজন পাচারের শিকার নারীর সাথে একটা ছোট ঘরে থাকতে বাধ্য হন।

তদন্তের জন্য গ্রেস শরীরে একটি লুকানো ক্যামেরা পরতে রাজি হয়েছিলেন। তিনি সংবাদদাতাকে নিয়ে গিয়েছিলেন দিল্লিতে আফ্রিকান এক চক্রের গোপন ঘাটিতে। পাঁচার করে নিয়ে আসা মেয়েদের খদ্দের নিয়ে আসার জন্য পাঠানো হতো কিছু স্থানীয় অবৈধ বারে। যেখানে সাধারণত দিল্লিতে কর্মরত আফ্রিকান পুরুষরা যেতে পছন্দ করেন। এই জায়গাটি ছিল এই নারী পাচার ও যৌন ব্যবসার কেন্দ্র। এখান থেকে পাচার করে নিয়ে আসা মেয়েদের খদ্দের নিয়ে আসার জন্য পাঠানো হতো কিছু স্থানীয় অবৈধ বারে। যেখানে সাধারণত দিল্লিতে কর্মরত আফ্রিকান পুরুষরা যেতে পছন্দ করেন। গ্রেস বলেন, ‘প্রথম দিন যেদিন সেখানে আমি গিয়েছিলাম, দেখলাম সেখানে অনেক, অনেকগুলো মেয়ে। আমাদের কাজ ছিল, একটা জায়গায় বসতে হবে, তারপর একজন পুরুষ এসে আমাকে পছন্দ করে নিয়ে যাবে।’ দিল্লির দক্ষিণ অংশে ‘দ্যা কিচেন’ নামে পরিচিত এরকম অন্তত ১৫টি অবৈধ বার খুঁজে পেয়েছেন সংবাদকর্মী।

যেখানে অসংখ্য আফ্রিকান নারীরা যৌন ব্যবসায় যুক্ত হতে বাধ্য হচ্ছেন। সেখানে দিল্লির এই যৌন ব্যবসার মূল হোতার দেখা মিলল। এডি নামে তার পরিচয়। সংবাদকর্মীদের গোপন এই আস্তানায় উপস্থিত থাকাকালীন কেনিয়ার এক নারীকে পাচার করে এনে গ্রেসের অধীনে কাজ করতে দেয়ার ব্যপারে আলাপ হচ্ছিল। আর তাতে আগ্রহ দেখানোর ভান করছিলেন গ্রেস। কীভাবে কেনিয়া থেকে এই নারীকে আনা হবে, কার মাধ্যমে আনা হবে, তাতে কত টাকা লাগবে এসব নিয়ে আলাপ হচ্ছিল। ধীরে ধীরে এভাবেই চলে এই চক্রের কর্মকাণ্ড। এবং দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজের প্রতিশ্রুতি পেয়ে দিল্লিতে আসা নারীরা নিজেরা যখন এই চক্রের কাছে অর্থের জন্য আটকে পড়েন, তখন তারা হয়ে ওঠেন যৌনকর্মী। ধীরে ধীরে একপর্যায়ে তারাও হয়ে ওঠেন ম্যাডাম, যারা অন্য নারীদের যৌন কর্মী হিসেবে কাজে লাগান। গ্রেসের কাছ থেকে পাওয়া যথেষ্ট তথ্য প্রমাণাদিসহ এডির মুখোমুখি হয়েছিলেন সংবাদকর্মী। এডি অবশ্য পরে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেন। অন্যদিকে গোল্ডি নামের সেই নারী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের কোনো জবাবই দেননি। তবে আফ্রিকা আই অনুষ্ঠানের সহায়তায় নিজের দেশ কেনিয়াতে ফিরে গেছেন গ্রেস। সেখানে তিনি তার জীবনকে নতুন করে গোছানোর চেষ্টা করছেন।

ad

পাঠকের মতামত