307031

আত্মহ’ত্যা করার আগে নূপুর : ‘আম্মু ম’রার পর অনেক ভয় লাগবে, কবরেও জায়গা হবে না’

কুষ্টিয়া সদর উপজে’লার দোয়ারকাদাস আগরওয়াল মহিলা কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী নূপুর বিশ্বা’স মায়া (১৭) টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় বিষপানে আত্মহ’ত্যা করেছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কলেজ অধ্যক্ষের কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। বিষপানের আগে বাড়িতে একটি চিরকুট লিখে রেখে যায় নূপুর। সেই চিরকুটটি উ’দ্ধার করেছে পু’লিশ।

সেই চিরকুটে লেখা, ‘আব্বু-আম্মু আমায় ক্ষমা করে দিও। আমি কখনো চাই না আমা’র জন্য তোম’রা ক’ষ্ট পাও। আমি ভালো’ভাবে পড়াশোনা করতে চেয়েছিলাম, অনেক স্বপ্ন ছিল আমা’র।

আমি জানি আমাকে নিয়েও অনেক স্বপ্ন ছিল তোমাদের। আমি যে তোমাদের একমাত্র মেয়ে। আমি পৃথিবী থেকে চলে গেলাম। আমায় ক্ষমা করো। আর আমা’র জন্য একটুও ক’ষ্ট পাবে না। আমি চাই আমা’র ম’রাটা (লা’শ) যেন স্বাভাবিকভাবে মাটি দেওয়া হয়। আত্মহ’ত্যা করলে পু’লিশ আসে, তারা যা সব করে (ময়নাত’দন্ত) আমা’র যেন না করা হয়। এভাবে ম’রে গেলে তো কোথায় যেন পাঠায় লা’শ কা’টার জন্য। ওটাতে আমা’র খুব ভয় লাগে।

আমাকে স্বাভাবিকভাবেই মাটি দিও। পু’লিশ যেন অন্য সবার মতো আমা’র লা’শকে ক’ষ্ট না দেয়, আমায় যেন স্প’র্শ না করে। আমায় ভালো’ভাবে মাটি দিও। ও আম্মু আমা’র যে ম’রে যাওয়ার পর অনেক ভয় লাগবে, আমা’র তো কবরে জায়গা হবে না, আমা’র যে খুব ক’ষ্ট হবে। ক্ষমা করে দিও। কলেজের স্যাররা চাইলে হয়তো আমা’র ভবিষ্যৎ নষ্ট হতো না।’

নূপুর সদর উপজে’লার হরিনারায়রপুর এলাকার মাছ ব্যবসায়ী বাবুল হোসেনের মেয়ে।

কলেজের অধ্যক্ষ আসাদুজ্জামান জানান, কয়েক দিন আগে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের চূড়ান্ত পরীক্ষার রেজাল্ট দেওয়া হয়। এতে চারটি বিষয়ে ফেল করে মানবিক বিভাগের ছাত্রী নূপুর খাতুন। এর আগে সে দুই বিষয়ে ফেল করেছে বলে বাড়িতে জানায়। তাই তার মা তাকে সঙ্গে নিয়ে আজ দুপুরে কলেজে আসে। এ সময় তার শিক্ষকরা জানান, চারটি বিষয়ে নূপুর ফেল করেছে। এর পর মা তাকে কিছুটা বকা দেয়।

অধ্যক্ষ আরও জানান, এ সময় নূপুরের কথাবার্তা অসংলগ্ন ছিল। মেয়েটি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে কথা বলতে পারছিল না। কথা বলতে বলতেই মাটিতে পড়ে যায় নূপুর। এ সময় তার কাছে থাকা একটি কাচের বোতল হাত থেকে ছিট’কে পড়ে।

ধারণা করা হচ্ছে, ওই বোতলে বিষাক্ত কিছু নিয়ে এসেছিল মেয়েটি। এর পর কলেজের কয়েকজন শিক্ষক তাকে উ’দ্ধার করে স্থানীয় চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। তবে কলেজে আসার আগেই নূপুর বিষপান করে।

কলেজের শিক্ষক সেলিম জানান, স্থানীয় চিকিৎসকরা তাকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করায়। তবে হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মা’রা যায় নূপুর।
নূপুরের মা লাভলী খাতুন বলেন, ‘বাড়ি থেকে স্বাভাবিকভাবে আমা’র মেয়ে স্কুলে যায়। কলেজে যাওয়ার পর সে আর সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছিল না। কথা বলতে বলতেই মাটিতে পড়ে যায়। কলেজে যাওয়ার আগেই বিষপান করে বলে ধারণা করা হচ্ছে।’

নূপুরের বাবা বাবুল আহমেদ বলেন, ‘মেয়েটা আমা’র অ’ভিমানী। নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার কারণেই হয়তো অ’ভিমানে বিষপান করেছে।’

কুষ্টিয়া ইস’লামী বিশ্ববিদ্যালয় থা*নার উপপরিদর্শক (এসআই ) আরিফ বলেন, মৃ’ত্যুর আগে নূপুর একটি পত্র লিখে যায়। কারও কোনো অ’ভিযোগ ছিল না। জে’লা প্রশাসকের অনুমতি নিয়ে ময়নাত’দন্ত ছাড়া পরিবারের সম্মতিতে ম’রদেহ দাফন করা হয়েছে।

ad

পাঠকের মতামত