306309

ইলমশূন্য বক্তা বেড়ে যাওয়া কিয়ামতের আলামত

ইলমশূন্য ও অন্তঃসারশূন্য বক্তাদের দৌরাত্ব্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। যদিও সত্যিকার ইলমের ধারক-বাহক অনেকেই ওয়াজের ময়দানে রয়েছেন। এ বিষয়ে মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা বর্তমানে এমন একটা যুগে আছে, যখন আলেমদের সংখ্যা বেশি এবং বক্তাদের সংখ্যা কম। এই যুগে যে ব্যক্তি তার জানা বিষয়ের এক-দশমাংশ ত্যাগ করবে, সে ধ্বংস হবে। এরপর এমন একটা যুগ আসবে যখন বক্তাদের সংখ্যা বেশি হবে এবং আলেমদের সংখ্যা কমে যাবে। তখন যে ব্যক্তি তার জানা বিষয়ের এক-দশমাংশ আঁকড়ে ধরবে, সে নাজাত পাবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২২৬৭)

হাদিসটি এটা ইঙ্গিত করে যে নবীজি ও সাহাবায়ে কিরামের যুগের পর এমন এক যুগ আসবে, যখন ইসলাম দুর্বল হয়ে পড়বে, অত্যাচার-অনাচার ও পাপাচার বেড়ে যাবে, ইসলামের সাহায্যকারীদের সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং ইসলামবিদ্বেষীদের সংখ্যা বেড়ে যাবে। এমন যুগের উম্মতের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অসিয়ত ছিল, দ্বিনের অধিকাংশ বিধি-বিধানের প্রতি আমল করা কষ্টসাধ্য হওয়ার কারণে জানা বিষয়সমূহের এক-দশমাংশ আঁকড়ে ধরা। মূল কথা হলো, হাদিস শরিফ থেকে জানা যায়, শেষ জামানায় আলেমদের সংখ্যা কমে যাবে, মূর্খতা বেড়ে যাবে এবং ফিতনা-ফ্যাসাদ ব্যাপকতা লাভ করবে। এ সম্পর্কে রাসুল (সা.) সংবাদ দিয়েছেন, যখন (প্রকৃত) আলেমদের মৃত্যু হবে তখন ইলম উঠে যাবে এবং মূর্খতা ধেয়ে আসবে। আনাস (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হলো (১) ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে, (২) মূর্খতা বেড়ে যাবে, (৩) মদ্যপান করা হবে এবং (৪) ব্যভিচার ছড়িয়ে পড়বে।’ ( বুখারি, হাদিস : ৮০; মুসলিম, হাদিস : ২৬৭১)

রক্ষণশীল আলেমরা বক্তাদের আধিক্য কিয়ামতের অন্যতম নিদর্শন হিসেবে গণ্য করেছেন। ইমাম মালেক (রহ.) তাঁর ‘মুয়াত্তা’য় ইয়াহইয়া ইবনে সাঈদ (রহ.) থেকে বর্ণনা করেন, একবার আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) জনৈক ব্যক্তিকে বলেন, ‘তুমি এখন এমন এক যুগে বাস করছ, যে যুগে প্রাজ্ঞ আলেমের সংখ্যা বেশি এবং কারির (সাধারণ আলেমের) সংখ্যা কম। এ যুগে কোরআনের সীমারেখা সংরক্ষণ করা হয় (অর্থাৎ কোরআনের বিধি-নিষেধ পালন করা হয়), শব্দের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয় কম। এ যুগে প্রার্থীর সংখ্যা কম এবং দাতার সংখ্যা বেশি। এ যুগের লোকেরা নামাজ দীর্ঘ করে এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত করে। তারা প্রবৃত্তির অনুসরণের আগেই আমলের দিকে এগিয়ে যায়। কিন্তু অদূর ভবিষ্যতে এমন এক যুগ আসবে, যখন বিজ্ঞ আলেমদের সংখ্যা কম হবে এবং কারি বা সাধারণ আলেমদের সংখ্যা বেশি হবে। তখন কোরআনের শব্দসমূহকে হেফাজত করা হবে (হাফেজের সংখ্যা বেড়ে যাবে) এবং কোরআনের সীমারেখা বিনষ্ট হবে। প্রার্থী বেশি হবে এবং দাতা কম হবে। তখন লোকেরা খুতবা দীর্ঘায়িত করবে এবং নামাজ সংক্ষিপ্ত করবে। আর তারা আমলের আগে নিজেদের খেয়ালখুশির দিকে এগিয়ে যাবে।’ (মুয়াত্তা ইমাম মালেক, হাদিস : ৫৯৭) মহান আল্লাহ আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুন।

ad

পাঠকের মতামত