305616

প্রধানমন্ত্রী চাইলে বিচার হবে- এ কেমন সংস্কৃতি?

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও ‘আমরাই পারি জোট’-এর চেয়ারপার্সন সুলতানা কামাল বলেছেন, গত দশ মাসে প্রায় দেড় হাজারের মতো নারী ও শিশু নির্যাতনের, ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে বিচারহীনতার সংস্কৃতি দাঁড়িয়েছে। এতে বিচার চাওয়ার মানসিকতা দিন দিন লোপ পাইয়ে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী চাইলে বিচার হবে না হলে বিচার হবে না- এ কেমন সংস্কৃতি?

সোমবার জাতীয় শহীদ মিনারে ‘আমরাই পারি জোট’ আয়োজিত প্রতীকী অনশন কর্মসূচিতে বক্তারা এ সব কথা বলেন।

সাম্প্রতিক সময়ে আশঙ্কাজনকহারে নারী ও শিশু নির্যাতন বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে-যৌন সহিংসতা, ধর্ষণ ও হ’ত্যা। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১ হাজার ২৫৩ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে মামলা হচ্ছে না। কিছু মামলা হলেও তার সুষ্ঠু বিচার হয় না। অর্থাৎ বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে বিচার চাওয়ার মানসিকতায়ও পরিবর্তন আসছে। এ অবস্থার উত্তরণে নারীদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন অ্যাকশন এইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, নারী পক্ষ প্রতিষ্ঠাতা শিরীন হক এবং জোটের নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক প্রমুখ। অনশন শেষে উপস্থিত সবার স্বাক্ষরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর একটি স্মারকলিপি দেয়া হয়।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন আরও বলেন, আমরা আজ বিক্ষুব্ধ, ক্ষুব্ধ, শোকাহত, মর্মাহত হৃদয় নিয়ে প্রতীকী অনশন করছি। প্রতিকার, প্রতিরোধ এবং প্রতিবাদ করতে এই আয়োজন। তার মতে, নারীর হয়ত ক্ষমতায়ন হয়েছে, কিন্তু নারীর সমতায়ন হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকে যায়।

প্রতিনিয়ত ক্ষমতার অপব্যবহার ঘটছে যাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নারী ও শিশু। নির্যাতনকারীরা পাড় পেয়ে যাচ্ছে আর নারীকে মুখ লুকিয়ে চলতে হচ্ছে।তিনি আরও বলেন, আমরা এক এক করে এগারো হব। এভাবে হাজারো হয়ে নারী নির্যাতনমুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে হবে।

ফারাহ কবির বলেন, নাগরিক হিসেবে বিচার পাওয়া আমাদের অধিকার। কিন্তু আমরা বিচার পাচ্ছি না। বিচারের জন্য আকুল আবেদনও আজ কাজে দিচ্ছে না।তিনি বলেন, যা নারীর প্রতি সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেয়ার সমতুল্য। আমরা আর সহ্য করব না, সংঘবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করবই এবং কোনোভাবেই এই অন্যায় মেনে নেব না।

শিরীন হক বলেন, আমরা অঙ্গীকার করি, এই অপরাধের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব। ভীত হব না, পিছু হটব না। নির্যাতনকারী ও ধ’র্ষণকারীকে সামাজিকভাবে বয়কট করব। জিনাত আরা হক বলেন, দ্রুততম সময়ে প্রতিটি নারী ও শিশু নির্যাতনের ন্যায্য বিচার করতে হবে। এ সময়ে বিশেষ বিচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাধ্যমে নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা পরিচালনার প্রতি গুরুত্ব আরোপ করেন বক্তারা।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়েছে, ৯টি পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে তারা বিভিন্ন তথ্য নিয়েছেন। এতে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ১ হাজার ২৫৩ জন নারী ও শিশু ধ’র্ষণের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে গণধ’র্ষণ ২৫১, ধ’র্ষণের পর হ’ত্যা ৬২, প্রতিবাদ করায় ৩ জন খু’ন হয়েছে। ধ’র্ষণের পর আ’ত্মহ’ত্যা করেছে ১০ জন। এ ছাড়াও ধ’র্ষণের চেষ্টা হয়েছে আরও ২শ’ এবং যৌন হয়রানি ২২১।

বক্তারা বলেন, পরিবারে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, কর্মক্ষেত্রে, গণপরিবহনে এবং পাবলিক প্লেসে সব জায়গায় নারীরা ধ’র্ষণের শিকার। সহিংসতার এই ক্রম বৃদ্ধিতে, নারী ও শিশু ধ’র্ষণ ও যৌন সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বিক্ষুব্ধ, হতাশ এবং চরম উদ্বিগ্ন।

বিভিন্ন মানবাধিকার, নারী অধিকার, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, উন্নয়ন সংগঠন ও সচেতন মানুষরা একজোট হয়ে ‘ধ’র্ষণ ও সব যৌ’ন সহিংসতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে।

অনশনে একাত্মতা প্রকাশ করতে ঢাকার শহিদ মিনারে এসেছে সুদূর নোয়াখালীর সুবর্ণ চর থেকে নির্যাতনের শিকার পারুল, সিরাজগঞ্জের রূপা- যাকে গণপরিবহনে ধ’র্ষণ ও হ’ত্যা করা হয়েছে তার ভাই, ঢাকার শ্বশুর বাড়িতে মৃত পিংকির পরিবার, সাতক্ষীরার মুক্তি- যার লাশ মিলে আশুলিয়ার শ্বশুর বাড়িতে তার ভাই, দিনাজপুরে মৃত আঁখি মনির বাবা। জোটে যে সব সংগঠন রয়েছে এগুলো হল- মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন, নারীপক্ষ, নেটস বাংলাদেশ, অ্যাকশন এইড, ডেমোক্রেসি ওয়াচ, ব্রতী, বিএনপিএস, মুক্তি, ডাসকো, পল্লী শ্রী, নারী মৈত্রী, এএসএফ, নাগরিক উদ্যোগ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, দিনাজপুর-এর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধীসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আগত ব্যক্তিবর্গ, আমরাই পারি জোটের মোহাম্মদপুর এলাকার চেঞ্জমেকারসহ আরও অনেকে অনশনে সংহতিও সহমত প্রকাশ করেন।

তারা সব নারী ও শিশুধ’র্ষণ ও যৌন সহিংসতা ও পারিবারিক নির্যাতন বন্ধে সরকারকে আরও কঠোর হওয়ার প্রতি আহ্বান জানান।

ad

পাঠকের মতামত