304879

মাহমুদউল্লাহর ছক্কার সঙ্গে সঙ্গে গর্জে উঠেছিল পুরো বাংলাদেশ

শেষ দুই ওভারে (১২ বলে) প্রয়োজন ২২ রান। ভারতের মাটিতে তাদেরই বিপক্ষে এমন এক সময়ে মাঠে খেলা ক্রিকেটার কেন, পুরো বাংলাদেশের মানুষকেই যেন বড়সড় এক স্নায়ুর পরীক্ষা দিতে হচ্ছিল তখন। এবারও কি তবে তীরে এসে তরি ডুববে বাংলাদেশের? এমন আশা-নিরাশার দোলাচলে যখন দুলছিল পুরো বাংলাদেশ, তখনই জ্বলসে উঠলো মুশফিকের ব্যাট।

খলিল আহমেদকে টানা চার বলে চারটি বাউন্ডারি মেরে বসলেন মুশফিক। কাজটা সহজ হয়ে গেলো পুরোটাই। শেষ ওভারে প্রয়োজন কেবল ৪ রান। তবুও, তিন বছর আগের ব্যাঙ্গালুরুর স্মৃতি তখন স্মৃতিতে ভেসে উঠছিল বারবার। মঞ্চের সেই দুই নায়কই যে এক! মুশফিক আর মাহমুদউল্লাহ!

কিন্তু এবার আর স্নায়ুকে ক্ষয় হতে দিলেন না মুশফিকরা। শেষ ওভারে বোলার শিভাম দুবে। প্রথম বলে কোনো রান নিতে পারলেন না মাহমুদউল্লাহ। পরের বলে নিলেন ২ রান। পরের বলটি ওয়াইড। তিন রান চলে আসলো। তৃতীয় বলেই ডিপ মিডউইকেটের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে বসলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।

জয়টা এসে গেলো ছক্কা দিয়েই। ৩ বল বাকি থাকতে। ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে প্রথম জয়। আবার ঐতিহাসিক এক ম্যাচে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ-ভারত ম্যাচটি ছিল এক হাজারতম। এমন এক ম্যাচে জয়, বাংলাদেশের মানুষকে উদ্বেলিত করে তুলেছিল।

রোববার মধ্যরাতে মাহমুদউল্লাহর ছক্কার সঙ্গে সঙ্গেই গর্জে উঠেছিল পুরো বাংলাদেশ। জয় নিশ্চিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আবেগে যেন সবকিছু থরথর করে কেঁপে উঠেছিল পুরো দেশে। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে উঠেই তীব্র জয়োল্লাসে ফের আরেকবার কেঁপে উঠেছে রাজধানী ঢাকা।

টি-টোয়েন্টিতে আগের ৮ বারের দেখায় প্রতিটিতে পরাজয়। এবার এমন এক পরিস্থিতিতে খেলতে গেলো বাংলাদেশ, যার আগে অনিশ্চয়তার কালো মেঘে ঢেকে গিয়েছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটাকাশ। ক্রিকেটারদের আন্দোলন, সাকিবের নিষেধাজ্ঞা, সাইফউদ্দিনের ইনজুরি, তামিমের খেলতে না পারা- সব কিছু মিলিয়ে ভারত সফরের শুরুটা ছিল বাংলাদেশের জন্য খুবই কঠিন এক পরিস্থিতি। তারওপর নতুন অধিনায়ক নিয়ে খেলতে যেতে হয়েছে বাংলাদেশকে।

এছাড়া দিল্লির দূষণ নিয়ে ছিল তুমুল শঙ্কা। মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ে যেখানে দিল্লির ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে কি না- সে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিল ভারত এবং বাংলাদেশের মানুষ, সেখানে মাঠে নেমে সব কিছুকে জয় করে ফেরা চাট্টিখানি কথা নয়।

এ কারণেই ভারতের বিপক্ষে এই জয়ে এতটা মাহাত্ম্য পেয়েছিল। ৭ উইকেটের দুর্দান্ত জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজের শুরুতেই এগিয়ে গেলো বাংলাদেশ। রিয়াদের ছক্কায় জয় নিশ্চিত হওয়ার পর ঢাকার পাড়ায় পাড়ায় মিছিলও বেরিয়ে পড়ে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জাতীয় পতাকা হাতে দেখা গেছে ছাত্রদের।এমনকি পথ চলতি অচেনা মুখ দেখে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবেই অনেকের মুখ দিয়ে বেরিয়ে এসেছে, ‘ভাই আমরা জিতে গেছি।’ জয়ের খবর শুনে হর্ন বাজিয়েও সেলিব্রেট করেছেন গাড়ি চালকরা, এ দৃশ্যও দেখা গেলো ঢাকায়।

এক সময় ক্রিকেটের যে কোনো জয়েই বাংলাদেশের মানুষ আনন্দ মিছিল নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসতো। কারণ, সে জয়গুলো আসতো কালেভদ্রে। কিন্তু ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে জয়টা নিয়মিত হয়ে যায় টাইগারদের জন্য। এ কারণে কারো বিপক্ষে জয় পেলে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা আনন্দিত-উল্লসিত যাই হোক, আর মিছিল নিয়ে বের হতো না।

কিন্তু ভারতের বিপক্ষে এই জয়ে আবারও ঘর ছেড়ে মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে। মিছিল করেছে, হর্ষধ্বনি দিয়েছে। এ যেন বাংলাদেশের বিশাল এক শাপমুক্তি। দীর্ঘদিনের না পাওয়ার বেদনা ভুলে আকাঙ্খিত কোনো কিছু পাওয়ার আনন্দ।

ad

পাঠকের মতামত