303802

স্কুলমাঠ দখল করে মাষকলাই চাষ করছে ছাত্রলীগ-যুবলীগ!

সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে মাষকলাইয়ের চাষ করেছেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতা। পাঁচ বিঘা মাঠটি জাল দিয়ে ঘিরে মাঝখানে মাষকলাই আবাদ করা হয়েছে। এ কারণে ওই বিদ্যালয়ের পাশাপাশি পাশের ডিগ্রি কলেজ ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর স্কুলে যাতায়াত, অ্যাসেম্বলি, জাতীয় সংগীত গাওয়ার পাশাপাশি মাঠে খেলাধুলাও বন্ধ রয়েছে।

এ নিয়ে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষসহ এলাকাবাসী ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে। মাঠটি দখলমুক্ত করতে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস। ১৯০৩ সালে এলাকার সমাজহিতৈষীরা দৌলতপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর একই স্থানে আট বিঘা জমি মিলিয়ে ১৯১৮ সালে দৌলতপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও পরে একটি ডিগ্রি কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সাড়ে তিন হাজারের মতো শিক্ষার্থী রয়েছে।

রয়েছে প্রায় পাঁচ বিঘা জায়গা নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিশাল খেলার মাঠ। যুবলীগ নেতা শাহীন রেজা, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি রবিউল ইসলামসহ দীবাকর সংসদের সদস্যরা মাঠটিজুড়ে জালের বেড়া দিয়ে কয়েক সপ্তাহ আগে হালচাষ করে মাষকলাই রোপণ করেন। এর পর থেকেই মাঠটি দিয়ে স্কুল-কলেজে যাতায়াত, পিটি, অ্যাসেম্বলি, সমবেত জাতীয় সংগীত পরিবেশনা বন্ধ রয়েছে। এ নিয়ে সবার মধ্যেই ক্ষোভ বিরাজ করছে।

এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে অধ্যয়নরত উমর ফারুক, মফিজ উদ্দিন, আব্দুল কাদের, হোসেন আলী বলেন, ‘স্কুল মাঠটি এভাবে দখল হবে তা আমরা কখনো কল্পনা করিনি। তাঁরা প্রভাবশালী। তাই কিছু বলতে গেলে আমাদের বিপদ হবে।’ মাঠ দখলের বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে। তাঁরা এলাকার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় অনেকেই মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তাঁদের ভয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরাও আতঙ্কিত।

এ ব্যাপারে দৌলতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সদস্য আলতাফ হোসেন, ব্যবসায়ী লাল মিয়া, বদর উদ্দিন, আব্দুস ছালাম মিলিটারি অভিযোগ করে বলেন, ‘মাঠ থাকে খেলার জন্য। আবাদের জন্য নয়। তবে দৌলতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠটি এখন আবাদের মাঠে পরিণত হয়েছে। তাঁরা প্রভাব খাটিয়ে মাঠটি দখল করায় স্কুলের অ্যাসেম্বলিসহ খেলাধুলা বন্ধ থাকার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের যাতায়াতেও সমস্যা হচ্ছে। আমরা দ্রুত এ অবস্থার উত্তরণ চাই।’

এদিকে দৌলতপুর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি বেলকুচি পৌর মেয়র আশানুর বিশ্বাস বলেন, ‘মাঠ দখলের বিষয়টি জেনে আমি নিজেও অবাক হয়েছি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং আমাকেও তারা কেউ কিছু জানায়নি। একেবারে যেন মগের মুল্লুক। দীর্ঘদিন ধরেই ওই মহলটি স্কুল-কলেজে প্রভাব বিস্তার করে বিভিন্ন অনিয়ম করে চলেছে। আমাদের দাবি, তাদের বিরুদ্ধে যেন কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়।’

তবে উঁচু-নিচু মাঠটি সমান করতে হালচাষ দিয়ে আপাতত মাষকালাই লাগানো হয়েছে বলে দাবি করেন যুবলীগ নেতা শাহীন রেজা। তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা হওয়ায় আমরা তা পরিষ্কার করতে শুরু করেছি। বর্তমানে তা গরু দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল্লাহ জানান, স্কুলের মাঠ স্কুলেরই থাকবে। এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাসেম্বলিসহ খেলাধুলা হবে। যারা দখল করে মাষকালাই আবাদ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সূত্র: কালেরকন্ঠ

ad

পাঠকের মতামত