303143

হাসিখুশি এই নারী রাত হলেই হয়ে যান ভয়ংকর খুনি

হাসিখুশি, উৎফুল্ল স্বভাবের ৪৭ বছর বয়সি জলি থমাসকে প্রথম দেখায় কেউ বিশ্বাস করতে চাইবেন না এই নারী ভয়ংকর একজন খুনি। অথচ বাস্তব সত্য হলো, এই নারীই বিগত ১৪ বছর ধরে নিজ পরিবারের ৬ জন সদস্যকে বিষ খাইয়ে মেরে ফেলেছেন।

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলের রাজ্য কেরালার জলি থমাস অবশেষে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন, বিগত ১৪ বছর ধরে তার পরিবারে যে ৬ জন সদস্য মারা গেছেন তাদের হত্যার জন্য তিনিই দায়ী। মূলত খাবারে সায়ানাইড জাতীয় বিষ মিশিয়ে তিনি নিজের পরিবারের হতভাগ্য ৬ জন সদস্যকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছেন। এদের মধ্যে দুই বছর বয়সি একজন শিশুও রয়েছে।

১৪ বছর ধরে এই হত্যার ঘটনাগুলো গোপন রাখতে পেরেছিলেন তিনি। কিন্তু অবশেষে চলতি বছরের শুরুতে অছিয়ত (উইল) সংক্রান্ত একটি ঘটনায় তার আসল রূপ প্রকাশ হয়ে পড়ে পুলিশের কাছে। জলি থমাসের দেবর অভিযোগ করেন, তার বাবা-মা যে উইল করে গিয়েছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে তা আসলে জাল উইল।

তিনি সন্দেহ করেন, ভাবী জলি থমাসই উইলটি জাল করেছেন। ফলে বিষয়টি থানা পুলিশ পর্যন্ত গড়ায়।

তদন্তের সময় পরিবারের ৬ জন সদস্যের মৃত্যুর বিষয়টিও সামনে চলে আসে। পরবর্তীকালে দেখা গেছে, স্বাভাবিকভাবে এদের মৃত্যু হয়নি। বরং বিষ প্রয়োগে এদের হত্যা করা হয়েছে। ফলে পুলিশের সন্দেহ জলি থমাসের উপর পড়ে। কারণ যারা মারা গেছেন প্রত্যেকেই তার হাতের তৈরি খাবার খাওয়ার পরেই মারা গিয়েছেন বলে জানা গেছে।

অথচ স্থানীয় কমিউনিটিতে জলি থমাস বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। কেবলমাত্র লোভের কারণেই এতবড় এক খুনিতে পরিণত হয়েছেন তিনি। পুলিশ জানায়, পরিবারের সম্পত্তি কুক্ষিগত করার জন্যই তিনি একের পর এক খুন করে গেছেন।

২০০২ সালে নিজের শাশুড়িকে খুন করার মাধ্যমে নিজের এই কালো অধ্যায়ের সূত্রপাত করেন তিনি। সেসময় মাংসের স্যুপের মধ্যে বিষ মিশিয়ে শাশুড়িকে তা খেতে দেন। স্যুপ খাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তিনি মারা যান। অথচ কেউ সন্দেহও করতে পারেনি জলি তাকে হত্যা করেছেন।

এরপর ২০০৮ সালে তিনি নিজের শ্বশুরের খাবারে বিষ দিয়ে তাকে হত্যা করেন। ২০১১ সালে ভাত এবং তরকারীতে বিষ দিয়ে নিজের স্বামীকে হত্যা করেন এই নারী। ময়নাতদন্তের পর তার পাকস্থলীতে বিষাক্ত পদার্থের উপস্থিতি পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু সেসময় পুলিশ এটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়েছিল।

নিজের স্বামীকে হত্যার পর সিরিয়াল কিলার এই নারী কফিতে বিষ মিশিয়ে চাচা শ্বশুরকেও হত্যা করেন। কারণ জলির স্বামী মারা যাওয়ার পর তার চাচা ভাইপোর মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য জোরাজুরি করেছিলেন। তাই শাস্তি হিসেবে তাকেও বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়।

এদিকে ২০১৪ সালে ভয়ংকর খুনি এই নারী মাত্র দুই বছরের এক শিশুকে হত্যা করেন। এই শিশুটি তার স্বামীর চাচাতো ভাই স্কারিয়া সাজুর মেয়ে ছিল। ২০১৬ সালে সাজুর স্ত্রীকেও হত্যা করা হয়। এই ঘটনার এক বছরের মাথায় সাজু এবং জলি বিয়ে করেন।

স্ত্রী এবং কন্যা হত্যায় নিজে জড়িত ছিলেন না বলে পুলিশের কাছে প্রথমে দাবি করেছিলেন সাজু। পরবর্তীকালে জেরার মুখে তিনি স্বীকার করেন, এই দুজনের হত্যায় তিনি নিজেই জলিকে সাহায্য করেন।

গত সপ্তাহে পুলিশ স্থানীয় কবরস্থান থেকে নিহত ছয়জনের মৃতদেহের অবশিষ্টাংশ সংগ্রহ করেন। এরপর পরীক্ষাগারে নিয়ে নিশ্চিত হন প্রত্যেককেই বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়েছে। এরপর সোমবার জলি থমাস পুলিশের কাছে নিজের কুকর্মের কথা স্বীকার করে নেন।

এদিকে জলির একমাত্র সন্তান ২১ বছর বয়সি রোমো রয় মায়ের ভয়ংকর এই স্বভাবের কথা শুনে বিশ্বাসই করতে পারছেন না। তিনি কোনভাবেই মানতে পারছেন না, তার মা তার বাবা, দাদা, দাদীসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের হত্যা করেছেন। তবে রোমো জানান, যদি প্রমাণিত হয় তার মা এদের হত্যা করেছেন তাহলে আইন অনুযায়ী যেন তিনি সাজা পান সেটাই কামনা করেন তিনি।

ad

পাঠকের মতামত