303064

চমক আসছে যুবলীগের নেতৃত্বে

আগামী ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় কাউন্সিলের আগ পর্যন্ত দলে শুদ্ধি অভিযান চলবে। আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোও এর আওতায় পড়বে। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, অস্ত্রবাজি, ইয়াবাখোর ও মাদক ব্যবসার সঙ্গে দলের কেউ জড়িত থাকলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না।

দলের ভেতর বিভেদ সৃষ্টিকারী, বিদ্রোহী, অনুপ্রবেশকারী, তৃণমূলে যোগাযোগ রাখেন না- এ ধরনের নেতাদের খুঁজে বের করা হবে। এ ধরনের নেতাকর্মীর বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থা, বিভিন্ন কমিটিসহ নানাভাবে রিপোর্ট সংগ্রহ করেছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।

সব রিপোর্ট এখন দলের সভাপতির টেবিলে। এগুলো থেকে বেছে বেছে নাম নিয়ে তালিকা তৈরি হচ্ছে। তালিকাভুক্ত কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। প্রত্যেককে শাস্তির আওতায় আনা হবে। এদের বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মনোভাব অত্যন্ত কঠোর। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে এ অভিযান সম্পন্ন করতে চান তিনি।

শুদ্ধি অভিযান শেষেই শুরু হবে কাউন্সিল। এখানে গঠিত কমিটিতেই থাকবে চমকের ছড়াছড়ি। গুরুত্বপূর্ণ পদে আসবেন পরীক্ষিত অভিজ্ঞ ও প্রাজ্ঞ নেতারা। যাদের মাধ্যমে জাতির প্রত্যাশা পূরণ করবেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে এসব তথ্য।

এখন পর্যন্ত পত্র-পত্রিকা, অনলাইন মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যতদূর জানা গেছে এবং যাদের নাম সবেচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছে যেখানে শেখ পরিবারের শেখ মারুফ, ব্যারিস্টার শেখ নাঈম, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ তন্ময়, যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম এবং মাশরাফির নাম থাকছে আলোচনায়।

বিশ্বস্ত একাধিক সূত্রে জানা গেছে, যুবলীগের নেতৃত্বে আসবেন এদের থেকেই। কে আসবেন শীর্ষ পদে সে বিষয়ে আগাম বলার কোন সুযোগ নেই। সিদ্ধান্ত অবশ্যই আসবে দেশরত্ন শেখ হাসিনার তরফ থেকে। কার সম্ভাবনা কতটুকু সে বিষয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ভিন্ন ভিন্ন মত দিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী নিজেই চাচ্ছেন আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী অঙ্গসংগঠনগুলোকে বিতর্কমুক্ত রাখতে। সে লক্ষ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিবেন সৎ ও আদর্শিক নেতৃত্বকে।

যুবলীগের বিদ্যমান গঠনতন্ত্রে বয়সের কোন বাধ্যবাধকতা না থাকলেও এবার বয়সকেও একটা মানদণ্ড ধরা হতে পারে। বিশ্বের শীর্ষ গণতান্ত্রিক দেশ ভারত, যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের প্রায় সবগুলো দেশেই দেশগুলোর যুব রাজনৈতিক ইউনিটগুলোর জন্য বয়সের একটা নির্দিষ্ঠ ফ্রেমওয়ার্ক রয়েছে। যেখানে বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতের কংগ্রেস ও বিজেপির যুব ইউনিট যথাক্রমে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চা ও ভারতীয় যুব কংগ্রেস এর বয়স সীমা ১৮-৪০। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যুব রাজনৈতিক ইউনিটে বয়সের বাধ্যবাধকতা একই অর্থাৎ ১৮-৪০। কানাডা ও যুক্তরাজ্যে আরও কম। দেশটির প্রভাবশালী রাজনৈতিক দল লেবার পার্টির যুব সংগঠনের বয়সসীমা ২৭ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করা হয়েছে। কানাডায় সেটা আরও কম তারা জাতিসংঘকে অনুসরণ করে দেশটির যুব রাজনৈতিক সংগঠনের বয়সসীমা নির্ধারণ করেছেন মাত্র ২৫ বছর। বাংলাদেশের যুবনীতি অনুসারে তরুণ বা যুবকদের ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী জনগোষ্ঠীকে বোঝানো হয়েছে। সেখানে ষাঠোর্ধ্ব কাউকে যুবলীগের নেতৃত্বে দেখা দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূল যুবলীগের একাধিক নেতা কর্মী।

বয়স ও ক্লিন ইমেজকে মাপকাঠি ধরা হলে নেতৃত্বের দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন ব্যারিস্টার শেখ নাঈম। বর্তমানে যুবলীগের কার্য নির্বাহী সদস্য তৃণমূলেও তুমুল জনপ্রিয়। যুব লীগের শীর্ষ নেতাদের মাঝে হাতে গোনা যে কয়জন নেতাকে দুর্নীতি ও অপকর্ম কখনও স্পর্শ করতে পারেনি তাদের একজন ব্যারিস্টার শেখ নাঈম। এরপরেই সম্ভাবনার কথা বললে এগিয়ে থাকবেন শেখ মারুফ। যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মণির ছোট ভাই হিসেবে সম্ভাবনা সবার থেকে তারই বেশি ছিলো। কিন্তু বয়স হয়ে গেছে ৬৭ বছর। বর্তমানে যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ মারুফের সামনে তাই বয়সকেই বাধা হিসেবে ধরা হচ্ছে।

এছাড়া যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজমের নামও চেয়ারম্যান হিসেবে আলোচনায় এসেছে। মির্জা আজম তৃণমূলের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। যদিও তিনি তার ঘনিষ্ঠদের জানিয়েছেন, তিনি যুবলীগের চেয়ারম্যান হতে আগ্রহী নন। বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের স্থায়ী কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করা এই প্রতিমন্ত্রী এমনিতেই অনেক বড় দায়িত্বে আছেন- যে কারণে নতুন করে আর কোন বড় দায়িত্ব পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীন তার জন্য। অন্যদিকে তার বয়সও হয়ে গেছে ৫৭ বছর।

আওয়ামী লীগের একাধিক নীতি নির্ধারক বলছেন যে, একজন ভালো সংগঠক হওয়ার চেয়ে একজন ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিত্ব যুবলীগের ভাবমূর্তি রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজার নামও এক্ষেত্রে আলোচনায় এসেছে। আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যেখানে সংগঠন তৈরি করা কঠিন নয়। দল শক্তিশালী এবং শতভাগ সংগঠিত। কাজেই সংগঠন এমনিতেই শক্তিশালী হবে কিন্তু যিনি নেতৃত্বে থাকবেন তার ইমেজ এবং আকর্ষণ সন্দেহাতীতভাবে বিতর্কমুক্ত হতে হবে। সেই বিবেচনায় মাশরাফির নামও জোরেশোরে আলোচনায় আসছে। কিন্তু যুবলীগের কোন পদে না থেকে হুট করে এত বড় সংগঠন সামলাতে পারবেন কি না –এ প্রশ্ন অনেকেরই।

সেই সাথে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাতে বছরের শুরুর দিকে বলা হয়েছে জেলা, উপজেলায় আগামীতে দলের শীর্ষ পদে থেকে জনপ্রতিনিধি হতে পারবেন না। তাই যারা বর্তমানে সংসদ সদস্য তাদের যুবলীগের শীর্ষপদে আসার সম্ভাবনা ক্ষীন। আলোচনায় থাকা ৬ জনের মধ্যে ৪ জনই সংসদ সদস্য। যারা হলেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ তন্ময়, মির্জা আজম এবং মাশরাফি।

তবে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেষ পর্যন্ত কে হবেন সে সিদ্ধান্ত দিবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে আসছে সম্মলেন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে রাজনীতি পাড়ার কৌতূহলী মানুষগুলোকে।

সুত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

ad

পাঠকের মতামত